পেভিসন ক্রিম ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার প্রতিকার হিসেবে একটি পরিচিত ও কার্যকর পণ্য। এটি চুলকানি, দাদ, একজিমা এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত সমস্যা কমাতে সহায়তা করে। ত্বকের সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং উপযুক্ত পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি সহজেই ত্বকের অসুবিধাগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। আজকের আর্টিকেলে আমরা পেভিসন ক্রিম এর উপকারিতা, ব্যবহারের নিয়ম ও দাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো আপনাদেরকে।
এখানে আমরা আপনাদের জানাবো কীভাবে সঠিক মাত্রায় এই ক্রিম ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আশা করছি, আপনারা শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকবেন, কারণ এই আলোচনায় এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হবে যা ভবিষ্যতে আপনাদের উপকারে আসবে।
আরও পড়ুনঃ Mycofree 250 এর কাজ কি, খাওয়ার নিয়ম, দাম কত
পেভিসন ক্রিম কেন ব্যবহার করা হয়?
পেভিসন ক্রিম মূলত ত্বকের বিভিন্ন ধরনের চুলকানি, প্রদাহ, সংক্রমণ ও অ্যালার্জিজনিত সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি এমন একটি ক্রিম, যা ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে আরাম দেয় এবং সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করে। পেভিসন ক্রিম সাধারণত শরীরের যেসব স্থানে চুলকানি বা ফুসকুড়ি হয়, সেখানে ব্যবহার করা যায়। এটি ত্বকের ফাঙ্গাল ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ নিরাময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পেভিসন ক্রিম এর উপকারিতাঃ
পেভিসন ক্রিমের উপাদানগুলো ত্বককে শীতলতা দেয় এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করে, ফলে ত্বক ফিরে পায় স্বাভাবিক ও উজ্জ্বল রূপ। চলুন এর উপকারিতা গুলো দেখে নেয়া যাকঃ
- এতে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান হাত-পায়ের পুরনো দাগ হালকা করতে সাহায্য করে এবং নতুন দাগ তৈরি প্রতিরোধ করে।
- দাদ বা ফাঙ্গাল সংক্রমণের ফলে যে কালো দাগ সৃষ্টি হয়, তা নিয়মিত ব্যবহারে ধীরে ধীরে দূর হয়ে যায়।
- ত্বকের বিভিন্ন অংশে চুলকানি বা জ্বালা হলে পেভিসন ক্রিম ব্যবহার করলে তা দ্রুত আরাম দেয় এবং ত্বককে শীতল অনুভূতি দেয়।
- ত্বকে অ্যালার্জি বা ফুসকুড়ি হলে এই ক্রিম তা প্রশমিত করতে সহায়তা করে এবং ত্বককে সুস্থ রাখে।
- একজিমা, জীবাণুজনিত প্রদাহ বা ছত্রাকের সংক্রমণে এটি ত্বকের ফোলাভাব, চুলকানি ও প্রদাহ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পেভিসন ক্রিম ব্যবহারের নিয়মঃ
সাধারণত দিনে দুইবার, অর্থাৎ সকালে এবং সন্ধ্যায় আক্রান্ত স্থানে এই ক্রিম ব্যবহার করা যায়। ব্যবহারের আগে অবশ্যই ত্বক পরিষ্কার ও শুকনো করে নিতে হবে। তবে একটি বিষয় বিশেষভাবে মনে রাখা উচিত, অতিরিক্ত পরিমাণে ক্রিম কখনোই আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করা উচিত নয়।
যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই হালকাভাবে লাগানো যথেষ্ট। কারণ, অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বকে জ্বালা, লালচেভাব বা অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সাধারণত এই চিকিৎসা দুই সপ্তাহের বেশি করা উচিত নয়। নির্দিষ্ট সময়সীমা ও ব্যবহারের মাত্রা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারণ করা উচিত। দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করলে ত্বকের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হতে পারে বা সংবেদনশীলতা বেড়ে যেতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুদের ত্বকে এই ক্রিম প্রয়োগ করা ঠিক নয়, কারণ এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে শিশু বিশেষজ্ঞের নির্দেশনা অনুযায়ী বিকল্প ওষুধ ব্যবহার করা উচিত।
পেভিসন ক্রিম ব্যবহার করার সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন?

পেভিসোন ক্রিম ব্যবহারের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা মেনে চলা আবশ্যক, কারণ এগুলো না মানলে ত্বকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপ্রত্যাশিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ক্রিমটি কখনোই খোলা ক্ষত বা সংক্রমিত স্থানে প্রয়োগ করা উচিত নয়। অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করা যাবে না, কারণ এটি ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- ক্রিমটি চোখ, মুখ বা জিহ্বায় লাগানো উচিত নয়।
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
- সঠিক মাত্রা ও সময়সীমা অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে।
পেভিসন ক্রিম এর দামঃ
সাইনোফিয়া ফার্মা পিএলসি দ্বারা উৎপাদিত পেভিসন ক্রিমের বর্তমান মূল্য ৭০ টাকা। এটি আপনার পরিচিত সকল ঔষধের দোকানেই পেয়ে যাবেন। আবার অনলাইনেও পেতে পারেন। তবে যেখান থেকেই ক্রয় করুন, অবশ্যই ঔষধের মেয়াদ দেখে ক্রয় করবেন।
FAQs
পেভিসন ক্রিমের মধ্যে কী ধরনের উপাদান থাকে?
পেভিসন ক্রিম এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি একসাথে ত্বকের প্রদাহ, ফাঙ্গাল সংক্রমণ ও চুলকানির মতো সমস্যা দূর করতে পারে। এই ক্রিমে মূলত দুটি সক্রিয় উপাদান থাকে— ক্লোবেটাসন বিউটরেট এবং মাইকোনাজল নাইট্রেট। এছাড়াও, পেভিসন ক্রিমে কিছু সহায়ক উপাদান যেমন লিকুইড প্যারাফিন, হোয়াইট সফট প্যারাফিন, ইমালসিফাইং ওয়াক্স ও সংরক্ষণকারী উপাদান ব্যবহার করা হয়।
অতিরিক্ত পরিমাণে পেভিসন ক্রিম ব্যবহার করলে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে?
অতিরিক্ত পরিমাণে পেভিসন ক্রিম ব্যবহার করলে প্রথমে ত্বকে হালকা জ্বালা বা চুলকানির অনুভূতি হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করলে ত্বক পাতলা হয়ে যায় এবং সহজেই ফেটে যেতে পারে। ত্বকের রঙ পরিবর্তন হতে পারে, অর্থাৎ আক্রান্ত অংশটি স্বাভাবিকের চেয়ে হালকা বা গাঢ় দেখাতে পারে। কখনো কখনো ত্বকের লোমকূপ বড় হয়ে যায়, যা ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে।
পেভিসন ক্রিম ব্যবহার করলে কতদিনের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যায়?
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ছোট চুলকানি বা ফাঙ্গাল সংক্রমণে ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে ত্বকে জ্বালা ও লালচে ভাব কিছুটা কমতে শুরু করে। নিয়মিত ব্যবহারে সমস্যা প্রায় ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে ভালো হতে শুরু করে। একজিমা বা এলার্জিজনিত সমস্যা থাকলে, এই ক্রিম ব্যবহারে ২ সপ্তাহের বেশি সময় লাগতে পারে পুরো সমস্যার প্রশমনের জন্য।
পেভিসন ক্রিম কি যোনিতে ব্যবহার করা নিরাপদ?
না, পেভিসন ক্রিম যোনিতে ব্যবহার করা উচিত নয়। যোনি বা অন্তঃসত্ত্বা অঞ্চলে এটি সরাসরি ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে। যোনির সংক্রমণ বা চুলকানি থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ বা মলম ব্যবহার করা যাবে না। এ ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
পেভিসন ক্রিমে কাজ না হলে কি করণীয়?
পেভিসন ক্রিম যদি নিয়মিত ব্যবহার সত্ত্বেও ১–২ সপ্তাহের মধ্যে কোনো উন্নতি না আসে, তবে সরাসরি চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসক প্রয়োজনে বিকল্প ওষুধ দিতে পারেন। এছাড়াও, ত্বকের সংক্রমণ যদি গুরুতর হয়, তবে চিকিৎসক ত্বকের পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক কারণ নির্ধারণ করতে পারেন।