ছেলে সন্তান কত সপ্তাহে হয়: জানুন সম্ভাব্য সময়কাল

নবাগত সন্তান একজন বাবা ও মায়ের কাছে অনেক বেশি প্রিয়। বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বাচ্চা জন্মদানের পূর্বেই আমরা জানতে পারি গর্ভের সন্তানটি ছেলে হবে নাকি মেয়ে। একজন গর্ভবতী মা ও তার আশেপাশের লোকজন সকলেই যায় যেন গর্ভের সন্তানটি পুত্র সন্তান হয়। যদিও এতে তাদের কোন হাত থাকে না। যাইহোক, অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে ছেলে ছেলে সন্তান কত সপ্তাহে হয়। ছেলে সন্তান এবং মেয়ে সন্তান জন্মের মধ্যে মধ্যে প্রায় ১ থেকে ২ সপ্তাহের তারতম্য হয়ে থাকে, অনেক ক্ষেত্রে তাও থাকেনা। খুব বেশি পার্থক্য না থাকলেও কখনও কখনও সামান্য এদিক সেদিক হয়ে থাকে। চলুন বিস্তারিত জেনে আসা যাক। 

ছেলে সন্তান কত সপ্তাহে হয়

গর্ভের বাচ্চা ছেলে বা মেয়ে যাই হোক না কেন, গর্ভাবস্থার স্বাভাবিক সময়কাল সাধারণত ৩৭ থেকে ৪০ সপ্তাহ। এই সময়ের মধ্যেই বাচ্চার জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে, ছেলে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে মেয়েদের তুলনায় তারা গর্ভের পূর্ণ সময় কাটানোর পরেই বেশি জন্ম নেয়। অর্থাৎ, ছেলেরা প্রায়ই ৪০ সপ্তাহের কাছাকাছি জন্মগ্রহণ করে, অথবা কখনও কখনও ৪২ সপ্তাহে। তবে ছেলে সন্তানদের গর্ভকালীন বৃদ্ধি একটু বেশি হয় বলে সাধারণত তাঁরা মেয়ে সন্তানের তুলনায় কিছু আগে জন্ম নেয়।  

গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীরে নানা ধরনের হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। মায়ের শরীরে যদি পুরুষ হরমোনের মাত্রা বেশি থাকে, তবে তার পেটে ছেলে হতে পারে। আবার নারীর হরমোনের মাত্রা বেশি হলে মেয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আরও পড়ুনঃ ইমার্জেন্সি পিল মাসে কতোবার খাওয়া যায়?

ছেলে সন্তান কত মাসে হয়

ছেলে হোক বা মেয়ে উভয় ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারির জন্য নয় মাস দশ দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে বাচ্চা ডেলিভারি হয়ে যায়। সাধারণত, নিষেক বা গর্ভধারণের মুহূর্ত থেকে সন্তান প্রসব পর্যন্ত প্রায় ২৮০ দিন বা ৪০ সপ্তাহ সময় লাগে। ছেলেদের ক্ষেত্রে কোন কোন সময় এটি ৯ মাস ৭ দিনও হতে পারে। তবে এটি যে হবেই এমনটা না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়ে জন্ম গ্রহণের সময়টা প্রায় একই হয়।  

ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ সমূহ

আসলেই কি লক্ষণ দেখে বোঝা যায় যে গর্ভে ছেলে না মেয়ে আছে? এই ধারনাটি অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। অনেকেই, বিশেষ করে বয়স্ক দাদী নানীরা বিভিন্ন লক্ষণ দেখে ছেলে হবে না মেয়ে হবে সে সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়ে থাকেন। ছেলে সন্তান পেটে থাকার কিছু সম্ভাব্য কিছু লক্ষণ নিচে তুলে ধরা হলো। তবে এগুলো আছে মানেই যে ছেলে সন্তান হবে এমনটা নাও হতে পারে, এগুলো কিছু লক্ষণমাত্রঃ 

Signs of having a boy

  • আপনার পেট যদি নিচের দিকে বেশি ঝুলে যায় তাহলে বুঝে নিবেন আপনার পেটে ছেলে সন্তান রয়েছে। কারণ এরকমটা হলে ছেলে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি থাকে। 
  • সাধারণত এই সময় ডানের স্তনের থেকে বাম স্তন একটু বেশি ভারী হয়ে যায়। তবে আপনার ক্ষেত্রে যদি উল্টোটা হয় তাহলে ধারণা করে নিতে পারেন আপনার ছেলে সন্তান হতে চলেছে।
  • পায়ের পাতা ঠান্ডা হওয়া, আপনার যদি পায়ের পাতা মাঝেমধ্যে ঠান্ডা হয় এটা বুঝতে পারেন তাহলে ধরে নিতে পারেন আপনার ছেলে সন্তান হতে চলেছে কারণ এরকমটা ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ। 
  • গর্ভাবস্থায় অনেক সময় চিকিৎসকরা গর্ভে থাকা শিশুর হার্ট রেট মেপে থাকেন। এই সময় যদি দেখতে পান বাচ্চার হার্ট রেট ১৪০ এ রয়েছে তাহলে ধারণা করে নিবেন আপনার ছেলে সন্তান হতে চলেছেন কারণ এরকমটা ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ।
  • অনেক সময় দেখা গেছে গর্ভাবস্থায় মায়ের চুলের বৃদ্ধি যদি স্বাভাবিক অবস্থা থেকে বেশি হয় তাহলে ছেলে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি থাকে। 
  • গর্ভাবস্থায় যদি আপনার বেশি বেশি ক্ষুধা লাগে তাহলে ধরে নিতে পারেন আপনার ছেলে সন্তান হতে চলেছে কারণ এমনটা সাধারণত পেটে ছেলে সন্তান থাকলে হয়ে থাকে।

ছেলে সন্তান হওয়া বা মেয়ে সন্তান হওয়া এ দুটো বিষয়ই আল্লাহতালা নির্ধারণ করে থাকেন। তাই কার ছেলে হবে কার মেয়ে হবে এটা আল্লাহতালা আগে থেকে নির্ধারণ করে রাখেন। 

FAQs

ছেলে সন্তান কি মেয়েদের তুলনায় আগেই জন্ম নেয়?

অনেক ছেলে শিশু নির্ধারিত সময়েই জন্ম নেয়, আবার অনেক মেয়ে শিশুও সময়ের আগেই জন্ম নিতে পারে। এটি কোন বাধ্যতামূলক নিয়ম নয়। চিকিৎসকেরা সাধারণত গর্ভাবস্থার সময়কাল হিসাব করেন শেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে গণনা করে, যা প্রায় ৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত একটা গড় সময়কাল ধরে চলে। এই সময়ের আগেই অথবা পরে সন্তান জন্ম নিতে পারে, যা কখনো প্রাকৃতিক কারণে, কখনো বা সিজারের মাধ্যমে। তাই ছেলে সন্তান একটু আগে জন্মানো একটি ঘটনা মাত্র, এটি যে ঘটবেই এমন কোন নিশ্চয়তা নেই।  

ছেলে সন্তান কত সপ্তাহে জন্ম নিলে তাকে প্রিম্যাচিউর বলা হয়?

প্রিম্যাচিউর শিশু বলতে সেইসব শিশুদের বোঝানো হয়, যারা গর্ভধারণের ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্মগ্রহণ করে থাকে। ৩৭ সপ্তাহের কম সময়ে জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশুই প্রিম্যাচিউর হিসেবে বিবেচিত হয় হোক সে ছেলে বা মেয়ে। সাধারণত, যত কম সপ্তাহে একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে, তার স্বাস্থ্যগত জটিলতা এবং নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন তত বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

গর্ভাবস্থায় ছেলে সন্তানের বৃদ্ধি কী মেয়েদের তুলনায় দ্রুত হয়?

হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় ছেলে শিশুর বৃদ্ধি সাধারণত মেয়েদের তুলনায় কিছুটা দ্রুত হয়। গর্ভকালীন সময়েই ছেলে শিশুদের ওজন ও দৈহিক গঠন তুলনামূলকভাবে বড় হয়ে থাকে। তবে এই পার্থক্য খুব বেশি নয় এবং সব মায়েদের ক্ষেত্রে এক রকম হয় না। কিছু ক্ষেত্রে মেয়ে শিশুরাও দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে, বিশেষ করে যদি মায়ের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি ভালো থাকে। 

কেন কিছু ক্ষেত্রে ছেলে সন্তান মেয়েদের তুলনায় আগে জন্মায়?

এমন খুবই কম হয়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ছেলে শিশুদের গর্ভনালির কার্যকারিতা অনেক সময় কিছুটা দুর্বল হয়, ফলে গর্ভে তাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকেরা অনেক সময় সময়ের আগেই সিজারিয়ান এর সিদ্ধান্ত নেন কারণ এ সময় এই পদ্ধতিই একমাত্র নিরাপদ উপায় হিসেবে ধরা হয়। 

ছেলে সন্তান বেশি ওজন নিয়ে জন্মালে প্রসবের ক্ষেত্রে কী সমস্যা হতে পারে?

বেশি ওজনের শিশুর কারণে প্রসব বেদনা স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘ হতে পারে। বড় শিশু যোনিপথ দিয়ে সহজে বেরিয়ে আসতে না পারায় অনেক ক্ষেত্রে সিজারিয়ান এর প্রয়োজন হয়। এই ধরণের জটিলতাগুলো এড়াতে, যদি গর্ভাবস্থায় শিশুর ওজন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে চিকিৎসকরা সতর্ক থাকেন এবং আগে থেকেই তা জানিয়ে দেন।

সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে সেটা কত সপ্তাহে নিশ্চিতভাবে জানা যায়?

গর্ভাবস্থায় সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে তা সাধারণত ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে আলট্রাসোনোগ্রাফির মাধ্যমে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়। এ সময় শিশুর যৌনাঙ্গ স্পষ্ট ভাবেই দেখা যায়। তবে আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে ডাক্তাররা এটি প্রকাশ করতে চান না। যাইহোক, বাচ্চার লিঙ্গের গঠন ২০ সপ্তাহের মধ্যেই সম্পন্ন হয়। 

গর্ভে ছেলে ও মেয়ে সন্তানের জন্মের সময়ের মধ্যে কি কোনো পার্থক্য আছে?

সাধারণভাবে গর্ভকাল প্রায় ৯ মাস বা তার কিছু বেশি সময় পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ছেলে শিশুদের ক্ষেত্রে মেয়েদের তুলনায় কিছুটা আগে জন্ম নেওয়ার প্রবণতা বেশি। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার আট মাস চব্বিশ দিন পূর্ণ হওয়ার পর থেকে ছেলে শিশুর স্বাভাবিক প্রসব যে কোনো সময় হতে পারে। অন্যদিকে, মেয়ে শিশুদের গড় গর্ভকাল কিছুটা বেশি, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা পুরো নয় মাস পূর্ণ হওয়ার পর জন্ম নেয়। 

Author

  • ডাঃ তানহা একজন নিবেদিতপ্রাণ মেডিসিন ও গাইনী বিশেষজ্ঞ, যিনি বর্তমানে একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। অভ্যন্তরীণ রোগ ও নারীস্বাস্থ্য বিষয়ে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তিনি নারীদের স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সঠিক ও প্রমাণভিত্তিক তথ্য প্রচারে বিশ্বাসী। Emergencypillbd.com-এ তিনি নিয়মিতভাবে প্রেগন্যান্সি, পিরিয়ড, ইমার্জেন্সি পিল এবং নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা শেয়ার করে থাকেন, যা নারীদের সুস্থ জীবনযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

Leave a Comment