ইমার্জেন্সি পিল সাধারণত জরুরী জন্ম নিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয় যেটা নারীরা সেবন করে থাকেন। তবে আপনার যদি প্রশ্ন থাকে যে ইমার্জেন্সি পিল ছেলেরা কিনতে পারে কিনা, তাহলে উত্তর হবে হ্যাঁ পারে। এটি কেনার ক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়ে কোন ম্যাটার করেনা। ইমার্জেন্সি পিল কেনার ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন হয় না এবং এগুলো কাউন্টার থেকে সরাসরি কেনা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছেলেরাই এটি ক্রয় করে।
যদিও এটি একটি নারীর শরীরেই কাজ করে, তবে এটি কেনার ক্ষেত্রে কোনো লিঙ্গভেদে নিষেধাজ্ঞা নেই। ছেলে হোক বা মেয়ে, যে কেউ ফার্মেসিতে গিয়ে কিনতে চাইতে পারে এবং ফার্মেসি কর্মীরা সাধারণত তাদের কাছে বিক্রি করতে অস্বীকার করেন না। তবে কিছু ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন হতে পারে যেটা আমরা আজকের লেখায় আলোচনা করবো।
ইমার্জেন্সি পিল ছেলেরা কিনতে পারে?
ছেলেরা অবশ্যই ইমার্জেন্সি পিল ফার্মেসি থেকে কিনতে পারেন। যদিও এই পিল শুধুমাত্র নারীরা সেবন করেন, তবে এটি কেনার জন্য নারী হওয়াটা আবশ্যক নয়। একজন পুরুষ যেকোনো সময়ে তার স্ত্রী বা সঙ্গীর জন্য এই ওষুধ সংগ্রহ করতে পারেন। তাছাড়া সাধারণ ভাবে এই পিল কোন ক্ষতিকারক ঔষধ নয় যে ফার্মেসির লোকেরা এটি বিক্রি করতে অস্বীকার করবে। আসলে মেয়েরা এটি কিনতে লজ্জাবোধ করে অনেক সময়, এজন্য ছেলেরাই মূলত এটি কিনতে যায়।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কখন মাথা ঘুরানোর সমস্যা হয়
ছেলেরা কেন ইমার্জেন্সি পিল কিনতে চায়?
আধুনিক সময়ে পুরুষদের মধ্যে যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা যেমন বেড়েছে, তেমনি তারা পারস্পরিক দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার বিষয়েও আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তাই অনেক সময় ছেলেরাই ইমার্জেন্সি পিল কিনে দিতে চায়। অনিরাপদ বা অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের পর গর্ভধারণের ঝুঁকি দেখা দিলে ছেলেরা দ্রুত দায়িত্ব নিয়ে সঙ্গীর জন্য ইমার্জেন্সি পিল কিনে আনতে চায়। এতে করে তারা ভবিষ্যতের জটিলতা, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ কিংবা মানসিক চাপ এড়াতে চায়।
অনেক মেয়ে সংকোচবোধে নিজে গিয়ে ওষুধ কিনতে পারেন না। এমন পরিস্থিতিতে ছেলেরা দায়িত্ববান অংশীদার হিসেবে পাশে দাঁড়িয়ে প্রয়োজনীয় পিল কিনে দেওয়াকে ভালোবাসা ও যত্নের প্রকাশ হিসেবে বিবেচনা করে। তাছাড়া এটি পরিবার পরিকল্পনার একটি যৌথ পদক্ষেপও বটে। সম্পর্কের দুই পক্ষ যখন সমানভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সে সম্পর্ক আরও সুস্থ ও সম্মানজনক হয়ে ওঠে।
একজন ছেলের পিল কিনে দেওয়া মানেই শুধু একটি ওষুধ সংগ্রহ নয়, বরং একজন নারীর পাশে দাঁড়ানো, যৌথ সিদ্ধান্তে সাড়া দেওয়া এবং ভবিষ্যতের প্রতি সচেতনতার প্রকাশ।
ইমার্জেন্সি পিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছেলেরা কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে?
ইমার্জেন্সি পিল মূলত নারীদের জরুরি গর্ভনিরোধের জন্য তৈরি, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক সময় ছেলেদের মাধ্যমে এর অপব্যবহার ঘটে থাকে। কিছু পুরুষ সঙ্গীর সম্মতি ছাড়াই গোপনে পিল খাইয়ে দেয় বা মানসিক চাপে ফেলে তাকে এটি গ্রহণে বাধ্য করে।
আরও খারাপ হয় যখন কেউ নিয়মিত এই পিল খেতে বাধ্য করে, যেন এটি কোনো দৈনন্দিন গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা, যা একদমই নয়। এটি কেবলমাত্র জরুরি অবস্থার জন্য, অতিরিক্ত সেবন করলে নারীর হরমোন ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে, সৃষ্টি হতে পারে মাসিকের গোলমাল, মাথাব্যথা, দুর্বলতা ও মানসিক অস্থিরতা। এটা কিছু ছেলে অনেক সময় বুঝতে চায় না, তাঁরা ভাবে যে যৌন মিলনের পর গর্ভধারন না করানোর জন্য এটি বারবার খাওয়া যায়।
এছাড়াও, কিছু পুরুষ নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে সঙ্গীকে সবকিছু চাপিয়ে দেন, যেন সম্পর্কের পরিণতি একমাত্র মেয়েরই দায়। এটা শুধুই ভুল দৃষ্টিভঙ্গি নয়, বরং একটি অসৎ ও দায়িত্বহীন মানসিকতার প্রতিফলন। ইমার্জেন্সি পিলের ব্যবহার তখনই নিরাপদ ও যৌক্তিক হয়, যখন তা নারী নিজে সচেতনভাবে গ্রহণ করেন, এবং সেখানে পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়ার জায়গা থাকে।
FAQs
ইমার্জেন্সি পিল কি শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য বিক্রি হয়?
এই প্রশ্নটির উত্তর হ্যাঁ এবং না উভয়ই হতে পারে। প্রথমত, ইমার্জেন্সি পিল শুধুমাত্র মেয়েদের সেবনের জন্যই বিক্রি হয় কারণ ছেলেরা এটি খেতে পারে না। যেহেতু গর্ভধারণ করে মেয়েরা সেহেতু গর্ভধারণ আটকানোর জন্য এটি মেয়েদেরই খেতে হয়। এবার না কি কারণে সেটি জানি চলুন। এটি শুধুমাত্র মেয়েদের জন্যই বিক্রি হয় না কারণ এটি ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই কিনতে পারে। কেনার ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
ইমার্জেন্সি পিল কেনার জন্য ছেলেদের প্রেসক্রিপশন লাগে কি?
না, কোন প্রেসক্রিপশন লাগেনা। ছেলেরা চাইলে যেকোনো সময় যেকোনো ফার্মেসি থেকেই এটি কিনতে পারে। তবে ছেলেরা কেনার সময় অবশ্যই এটি কখন বা কিভাবে খেতে হয় সে সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। সব পিল খাওয়ার নিয়ম এক না, তাই কেনার সময় পরিস্কারভাবে সব জেনে নেয়া দরকার।
ইমার্জেন্সি পিল খাওয়া মেয়ের সম্মতি ছাড়া ছেলেরা কিনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি?
না, মেয়ের সম্মতি ছাড়া ইমার্জেন্সি পিল কেনা বা খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া একেবারেই অনৈতিক এবং অনুচিত। ইমার্জেন্সি পিল একটি হরমোন-ভিত্তিক ওষুধ, যা মেয়েদের শরীরের প্রজনন প্রক্রিয়ায় সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই মেয়েটি বাচ্চা নিতে চায় কিনা সে ব্যাপারে ভালো করে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অসম্মতিতে পিল জোর করে খাওয়ার শুধু নৈতিকতার লঙ্ঘনই নয়, অনেক ক্ষেত্রে আইনগতভাবেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হতে পারে।
ছেলেরা কীভাবে জানতে পারে পিলটি কখন এবং কিভাবে ব্যবহার করতে হবে?
পুরুষরা যদি ইমার্জেন্সি পিল সম্পর্কে সচেতন এবং দায়িত্বশীল হতে চান, তাহলে তাদের জেনে নেওয়া জরুরি যে পিলটি কখন ও কীভাবে ব্যবহার করতে হয়। যদিও এই পিল মেয়েদের জন্য তৈরি এবং নারীর শরীরেই এটি কাজ করে, তবুও একজন ছেলের এ বিষয়ে জ্ঞান থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেন তিনি নিজের সঙ্গীর পাশে সঠিকভাবে দাঁড়াতে পারেন এবং প্রয়োজনের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আজকাল অনলাইনেও এ বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যায় যেগুলো থেকে ছেলেরা অনেক কিছুই জানতে পারবেন।
নারীরা ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষদের কি কোন সচেতনতার প্রয়োজন আছে?
অবশ্যই আছে! নারীরা পিল খাওয়ার পর বমি, মাথা ঘোরা, পেটব্যথা বা মাসিকের পরিবর্তনের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। আপনি যদি একজন পুরুষ হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার নারী সঙ্গীটির প্রতি খেয়াল রাখা উচিৎ কারণ এগুলোও এক ধরণের অসুস্থতা। মনে রাখবেন, এই অসুস্থতার দায় কিছুটা আপনারও। অনেক নারীর বেশি সমস্যা দেখা দেয়। এখেত্রেও পুরুষদের সচেতনতা আবশ্যক।