MM kit একটি গর্ভপাতের ঔষধ যেটা অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের পর নারীরা ব্যবহার করে থাকেন গর্ভপাত ঘটানোর জন্য। গর্ভধারণের পর একটি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এই ঔষধটি গ্রহণ করলে গর্ভে আসা বাচ্চাটি নষ্ট হয়ে যায়। যদিও এটি একটি অনুচিত কাজ, তারপরও প্রতিনিয়ত নানা কারণে মহিলারা এটি করছেন বা করতে বাধ্য হচ্ছেন। mm kit গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সঠিক নিয়ম জানতে হবে কারণ এই কিটের ভুল ব্যবহারের কারণে কখনও কখনও নারীদের মৃত্যুর খবরও শোনা যায়।
তাই সঠিকভাবে না জেনে কখনোই এটি ব্যবহার করা উচিত নয়। আজ আমাদের এই আর্টিকেল থেকে mm kit কিসের ঔষধ, দাম ও খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন। আমরা প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে আপনাদের প্রকৃত ধারনা দিতে চেষ্টা করবো।
আরও পড়ুনঃ আই-পিল ডিএস ১.৫ মি.গ্রা. ট্যাবলেট – পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, i pill ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
MM Kit কিসের ঔষধ?
এমএম কিট হলো একটি সিন্থেটিক স্টেরয়েড ওষুধ, যা গর্ভপাত ঘটানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। যখন কেউ সন্তান নিতে না চান অথচ তিনি গর্ভবতী হয়েছেন তখন এই কিট ব্যবহার করা হয়। আবার কেউ হয়তো যৌন সম্পর্কের পর ইমারজেন্সি পিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না খান বা খেতে ভুলে যান তাহলেও তিনি গর্ভবতী হয়ে যেতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে আর পিলে কাজ হয়না, তখন গ্রহণ করতে হয় এই কিট।
যদি গর্ভাবস্থা ৭ সপ্তাহ বা ৫০ দিনের মধ্যে থাকে, তখন এমএম কিট গ্রহণ করা সম্ভব। এটি সাধারণত গর্ভপাতের পর মাসিক নিয়মিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে গর্ভধারণের সময় ৫০ দিনের বেশি হলে এই ওষুধ নিরাপদ নয় এবং ব্যবহার করা যাবে না। সর্বদা এই ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে।
MM Kit খাওয়ার নিয়মঃ
প্রথমে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে আপনি সত্যিই গর্ভবতী। যদি গর্ভবতী না হন, তবে এই ওষুধ কোনোভাবেই গ্রহণ করা উচিত নয়, কারণ এতে জীবননাশের ঝুঁকি থাকতে পারে। নিশ্চিত হওয়ার পর, ৬৩ দিন বা ৯ সপ্তাহের মধ্যে এই ওষুধটি ব্যবহার করতে হবে। MM Kit খাওয়ার নিয়ম হলো প্রথমে বড় ট্যাবলেটটি খাওয়া, এরপর ২৪ ঘণ্টা পর চারটি ছোট ট্যাবলেটের মধ্যে দুইটি করে মুখের ভিতরে, মাড়ির দুই পাশে রাখা।
প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে, ট্যাবলেট ধীরে ধীরে গলে পেটে চলে যাবে। যদি মুখে কিছু অংশ থেকে যায়, তবে পানি দিয়ে গিলে নিতে হবে। এছাড়াও, ওষুধ নেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে অবশ্যই আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে হবে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে গর্ভপাত সম্পূর্ণ হয়েছে কি না।
MM kit খাওয়ার ক্ষেত্রে কি ধরনের সতর্কতা প্রয়োজন?
MM kit ব্যবহার করার সময় যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ সঠিক নির্দেশনা না মানলে এটি স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। জেনে নিন কীভাবে সতর্ক থাকা উচিতঃ
- যাদের ওষুধের প্রতি সংবেদনশীলতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এমএম কিট খুব সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে।
- যদি গর্ভাবস্থা নয় সপ্তাহের বেশি হয়, তখন ওষুধটি ব্যবহার করা নিরাপদ নয়।
- যারা গর্ভবতী বা গর্ভধারণ করতে চান, তাদের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে।
- এমএম কিট গ্রহণের আগে সব ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ ডিভাইস অপসারণ করতে হবে।
- যারা আগে থেকেই ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং এর সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে এমএম কিট ব্যবহার করার সময় বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন।
MM kit খাওয়ার পর কি ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে?
এই কিট গ্রহণের পর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো একেবারেই সাধারণ, এতে ভইয় পাওয়ার কিছু নেই। কিছু সময় শরীরে এগুলো চলতে থাকে, আবার ঠিকও হয়ে যায়। দেখে নিন কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারেঃ
- বমি বমি ভাব আসতে পারে।
- ডায়রিয়া হতে পারে।
- কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন।
- মাথা ঘোরা বা ভারী লাগা হতে পারে।
- পেট ফাঁপা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে কিছু সময়।
- ডিসপেপসিয়া বা হজমে সমস্যা হতে পারে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
- কাঁপুনি বা শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে কখনও কখনও।
- শরীরের অতিরিক্ত উত্তাপ বৃদ্ধি হতে পারে।
- জরায়ু সংকোচনের কারণে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- গুরুতর যোনি রক্তপাত হতে পারে।
- পেলভিক ব্যথা বা নীচের পেটের ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
MM Kit খাওয়ার পর মাসিক না হলে কী করবেন?
এই কিট খাওয়ার পর মাসিক না হওয়ার অর্থ হচ্ছে আপনার গর্ভপাত এর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। অর্থাৎ গর্ভধারণের পরবর্তী প্রক্রিয়া এখনও চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে ঔষধ বারবার খাওয়া উচিত নয়। এ সময় আগে একজন গাইনী চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে এবং আল্ট্রাসনো করাতে হবে। যদি রিপোর্ট আসে যে গর্ভধারণ প্রক্রিয়া আগের অবস্থায়ই আছে তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ গুলো অবশ্যই ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করতে হবে। ডাক্তার যদি বলেন যে অন্য কোন উপায়ে গর্ভপাত করতে হবে বা করা যাবে তাহলে তাই করতে হবে।
MM kit এর দাম কত?
MM Kit এ মোট ৫টি ট্যাবলেট থাকবে। একটি প্যাকেটে ১টি বড় ট্যাবলেট এবং ৪টি ছোট ট্যাবলেট থাকে। এই MM Kit এর দাম হলো ৩০০ টাকা। ওতি ফার্মেসি ভেদে কম বেশি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদিও হয় তা তেমন বেশি নয়।
FAQs
MM kit খাওয়ার কতদিন পর মাসিক হয়?
সাধারণত, MM কিটের প্রথম পিলটি খাওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর দ্বিতীয় পিলগুলো খাওয়া হয়। দ্বিতীয় পিলগুলো খাওয়ার ২ থেকে ৪ ঘণ্টার মধ্যে রক্তপাত বা মাসিক শুরু হতে পারে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এটি শুরু হতে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। তাই, রক্তপাত শুরু হওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে।
MM kit ভুলভাবে গ্রহণ করলে কি ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে?
MM kit এর ভুল ডোজে বা ভুল সময়ে ওষুধ খেলে গর্ভপাত অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে। এর ফলে জরায়ুর ভেতরে ভ্রূণের কিছু অংশ বা টিস্যু থেকে যেতে পারে, যা পরবর্তী গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। এমনকি গুরুতর অবস্থা কারো কারো মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি।
কোন সময়ের পর আর এমএম কিট গ্রহণ করা যায় না?
সাধারণত,MM কিট গর্ভাবস্থার ৯ থেকে ১০ সপ্তাহ সময়সীমার পরে কিটটি ব্যবহার করা নিরাপদ নয়। গর্ভাবস্থার সময় যত বাড়ে, কিটটির কার্যকারিতা তত কমতে থাকে। ৯/১০ সপ্তাহের পর এর সফলতার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, যার ফলে গর্ভপাত অসম্পূর্ণ থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
MM kit খাওয়ার পর মাসিক বন্ধ না হলে কী করবেন?
MM কিট খাওয়ার পর রক্তপাত ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, তবে এটি ধীরে ধীরে কমে আসে। যদি রক্তপাত ৪ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় বা খুব বেশি রক্তপাত হতে থাকে, তাহলে এটি অসম্পূর্ণ গর্ভপাতের কারণে হতে পারে। এক্ষেত্রে অতি অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।