৮ মাসের বাচ্চার খাবার তালিকাঃ কী খাওয়াবেন এবং কীভাবে খাওয়াবেন?

আপনার শিশুর আট মাস বয়স তার বিকাশের এক চমৎকার ধাপ। এই সময়ে এক বা দুইটি দাঁত উঠতে শুরু করে, যা তার বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়াকে আরও এগিয়ে নেয়। এ বয়সে শিশু সাধারণত নরম করা খাবার সহজেই গিলতে শিখে এবং ধীরে ধীরে চিবানোর কৌশল রপ্ত করতে থাকে। তাই এমন খাবার, যা সামান্য চিবানোর দক্ষতা দাবি করে এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর, আট মাস বয়সী শিশুর খাদ্যতালিকায় রাখার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। 

আজকের আর্টিকেল এ আমরা ৮ মাসের বাচ্চার খাবার তালিকা সম্পর্কে আপনাদেরকে বলবো। তাই যাদের ৮ মাস তা তাঁর থেকে কম মাসের বাচ্চা রয়েছে তাঁদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে আজকের এই লেখাটি। বাচ্চাকে যথাসময়ে সঠিক পুষ্টির জোগান দিতে হলে অবশ্যই এই লেখাটি সম্পূর্ণ পড়তে হবে কারণ এই তথ্যগুলো জানা খুবই জরুরি।

আরও পড়ুনঃ প্রেগন্যান্সির প্রথম সপ্তাহে কী হয়?

৮ মাসের বাচ্চার খাবারে তালিকা কতটা জরুরি?

আপনার আদরের সন্তান এখন ৮ মাসে পা দিয়েছে। এ বয়সে সে ঘরের এদিক ওদিক হামাগুড়ি দিয়ে নতুন জিনিস আবিষ্কারে ব্যস্ত থাকে। খাওয়ানোর সময় হয়তো সে হাত দিয়ে খাবার নেড়েচেড়ে ছড়িয়ে ফেলছে, আবার খেতে খেতেই হামাগুড়ি দিচ্ছে, ফলে আপনাকেও তার পেছন পেছন ঘুরে খাওয়াতে হচ্ছে। এসব একেবারেই স্বাভাবিক আচরণ। 

 

সাধারণত এই সময়ে শিশুর এক বা দুইটি দাঁত উঠতে শুরু করে এবং তার হাতের মুঠো শক্ত হয়, ফলে যে কোনো কিছু আঁকড়ে ধরার ক্ষমতা বেড়ে যায়। তাই এখনই শিশুকে হাতে ধরে খেতে শেখানোর সঠিক সময়। যেহেতু সে দ্রুত বড় হচ্ছে এবং খেলাধুলায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে, তাই তার ক্ষুধাও স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে। সেই কারণেই ৮ মাস বয়সে তার খাদ্য তালিকায় আরও নতুন ও বৈচিত্র্যময় খাবার যোগ করা প্রয়োজন।

৮ মাসের বাচ্চার খাবার তালিকাঃ

৮ মাস বয়সী শিশুর প্রধান খাবার বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ বার দুধ খাওয়াতে হবে এবং এর পাশাপাশি নিচের খাবারগুলো পর্যায়ক্রমে দেওয়া যেতে পারে। আমরা ১ সপ্তাহের খাবারের একটি তালিকা দিয়ে দিচ্ছি নিচেঃ 

দিন

সকাল 

দুপুর (প্রধান খাবার)

বিকাল 

রাত

১ম দিন

বুকের দুধ

ভাত + মুগডাল + কুমড়া দিয়ে পাতলা খিচুড়ি

সেদ্ধ কলা (চটকানো)

সুজি খিচুড়ি

২য় দিন

ঐ 

ভাত + ডাল + গাজর (চটকানো)

পাকা পেঁপে (চটকানো)

সেদ্ধ আলু মাখানো + সামান্য দুধ মিশিয়ে

৩য় দিন

ঐ 

পাতলা খিচুড়ি (ভাত + শাকসবজি)

আপেল (সেদ্ধ করে চটকানো)

ডিমের কুসুম (½ অংশ) ভাতের সাথে মিশিয়ে

৪র্থ দিন

ঐ 

ভাত + মুগডাল + পালং শাক (সেদ্ধ ও চটকানো)

সেদ্ধ মিষ্টি আলু মাখানো

সুজি পায়েস (চিনি ছাড়া)

৫ম দিন

ঐ 

ভাত + ডাল + লাউ/শিম (চটকানো)

পাকা আম (অল্প অল্প করে)

পাতলা সবজি খিচুড়ি

৬ষ্ঠ দিন

ঐ 

ভাত + মুগডাল + গাজর + কুমড়া দিয়ে খিচুড়ি

নাশপাতি (চটকানো)

সেদ্ধ আলু বা কুমড়া মাখানো

৭ম দিন

ঐ 

ভাত + ডাল + মুরগির পাতলা ঝোল (চিকিৎসকের পরামর্শে)

কলা বা পেঁপে (চটকানো)

সুজি খিচুড়ি / ডিমের কুসুম ভাতের সাথে মিশিয়ে

৮ মাস বয়সী শিশুদের খাবার খাওয়ানোর গুরুত্বপূর্ণ টিপসঃ 

Important feeding tips

৮ মাস বয়সে শিশুরা ধীরে ধীরে মায়ের দুধ বা ফর্মুলার পাশাপাশি কঠিন খাবারের প্রতি অভ্যস্ত হতে থাকে। এ সময় তাদের খাদ্যতালিকায় বৈচিত্র্য আনা যেমন জরুরি, তেমনি কিছু সতর্কতাও মেনে চলা দরকার। নিচে কিছু কার্যকর টিপস দেওয়া হলোঃ

  • প্রধান খাবার হিসেবে দুধ বজায় রাখুন কারণ বুকের দুধ এখনও শিশুর প্রধান পুষ্টির উৎস। দিনে ১-২ বার অবশ্যই দুধ দিন।

  • নতুন খাবার ধীরে ধীরে পরিচয় করান। একবারে অনেক নতুন খাবার না দিয়ে একেকটা খাবার কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ করুন এবং অসুবিধা হচ্ছে কি না দেখুন।

  • দানাদার খাবার দিন। খাবার একেবারে মসৃণ না করে হালকা দানাদার রাখুন, যাতে শিশু চিবানোর অভ্যাস গড়ে তোলে।

  • কলা, পেঁপে, আপেল, গাজর, কুমড়া বা আলুর মতো সহজে হজম হয় এমন ফল ও সবজি সেদ্ধ বা নরম করে খাওয়ান।

  • এক বছরের কম বয়সী শিশুর জন্য লবণ ও চিনি ব্যবহার করা উচিত নয়, তাই এসব এড়িয়ে চলুন। 

  • শিশুরা সহজেই মনোযোগ হারায়, তাই অল্প অল্প করে দিনে কয়েকবার খাওয়ান।

  • নরম সেদ্ধ সবজি বা ফল ছোট টুকরো করে দিন, তবে সবসময় নজরে রাখুন যেন গলায় না আটকে যায়।

  • খাবার তৈরিতে ও সংরক্ষণে স্টিল বা কাঁচের পাত্র ব্যবহার করুন, প্লাস্টিক এড়িয়ে চলুন।

  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট জায়গায় ও ভঙ্গিতে খাওয়ালে শিশুর মধ্যে ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে উঠবে।

  • এ বয়সে শিশুরা খাওয়ার সময় খেলাধুলা করতে বা খাবার ছড়িয়ে দিতে পারে, যা স্বাভাবিক।

এক বছরের আগে কোন খাবারগুলো শিশুকে দেওয়া উচিত নয় এবং কেন?

কিছু খাবার এক বছরের আগে শিশুকে দেওয়া ঠিক নয়। প্রথমত, গরুর দুধ এক বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য নিরাপদ নয়। এতে থাকা উচ্চমাত্রার প্রোটিন ও খনিজ কিডনিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। মধু এক বছরের কম বয়সী শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাছাড়া, লবণ ও চিনি শিশুর জন্য একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। লবণ কিডনিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। 

পাশাপাশি কিছু শক্ত খাবার যেমন বাদাম, আঙুর বা অন্যান্য ছোট, শক্ত টুকরো খাবার শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ সহজেই এগুলো গলায় আটকে যেতে পারে এবং শ্বাসনালীর সমস্যা তৈরি করতে পারে। একইভাবে, ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার শিশুদের হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং তাদের ক্ষুদ্র পাচনতন্ত্রের ওপর চাপ ফেলে।

FAQs

৮ মাস বয়সের শিশুর প্রধান খাবার কোনটি?

৮ মাস বয়সী একটি শিশুর পুষ্টির প্রধান উৎস হলো মায়ের দুধ বা ফর্মুলা দুধ, যা তার দৈনন্দিন ক্যালোরি ও ভিটামিনের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করে। এই বয়সে শিশুটিকে খিদে অনুযায়ী দিনে অন্তত ৪ থেকে ৫ বার দুধ পান করানো অপরিহার্য। তবে, যেহেতু শিশুর বৃদ্ধির জন্য কেবল দুধই যথেষ্ট নয়, তাই দুধের পাশাপাশি পরিপূরক কঠিন খাবার দেওয়াও অত্যন্ত জরুরি। এই কঠিন খাবারগুলোই ধীরে ধীরে তার প্রধান খাবার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে।

যদি এ বয়সে শিশুর খাবারে অরুচি দেখা দেয়?

৮ মাস বয়সে শিশুর খাবারে অরুচি দেখা দেওয়া খুবই স্বাভাবিক এবং এটি সাধারণত অস্থায়ী। এই বয়সে শিশুর মনোযোগ খুব সহজেই অন্য জিনিসে চলে যায়, হামাগুড়ি বা খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকে, তাই খাবারে আগ্রহ কমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে তাঁকে নতুন খাবার ধীরে ধীরে পরিচয় করান। একবারে অনেক নতুন খাবার দেবেন না, বরং একদিনে একটি নতুন আইটেম দিন। এতে তাঁর খাবার আগ্রহ তৈরি হবে। 

 

Author

  • ডাঃ তানহা একজন নিবেদিতপ্রাণ মেডিসিন ও গাইনী বিশেষজ্ঞ, যিনি বর্তমানে একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। অভ্যন্তরীণ রোগ ও নারীস্বাস্থ্য বিষয়ে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তিনি নারীদের স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সঠিক ও প্রমাণভিত্তিক তথ্য প্রচারে বিশ্বাসী। Emergencypillbd.com-এ তিনি নিয়মিতভাবে প্রেগন্যান্সি, পিরিয়ড, ইমার্জেন্সি পিল এবং নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা শেয়ার করে থাকেন, যা নারীদের সুস্থ জীবনযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

Leave a Comment