গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে শিশু নড়তে শুরু করে? বিস্তারিত জানুন

গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া প্রথম যেদিন অন্তঃসত্ত্বা মা টের পান সেদিনকার অভিজ্ঞতার কোনো তুলনাই হয় না। এই আনন্দময় মুহূর্তের জন্য মা অপেক্ষা করে থাকেন। চিকিৎসকেরা এই নড়াচড়াকে গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতার একটি বড় লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। গর্ভকালীন সময়ে শিশুর নড়াচড়া মায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এর মাধ্যমে আপনি আপনার শিশুর ভালো থাকা ও মন্দ থাকাকে অনুভব করতে পারেন। কবে গর্ভাবস্থায় গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে শিশু নড়তে শুরু করে এটি জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ কারণ নির্ধারিত সময়ের আগেই অনেকে বাচ্চা নড়ছেনা বলে টেনশন করেন। আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা এই বিষয়ে বিস্তারিত জানবেন। 

গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে শিশু নড়তে শুরু করে?

সাধারণত ১৮ থেকে ২৪ সপ্তাহে মা প্রথম পেটের ভেতর শিশুর নড়াচড়া টের পেতে শুরু করেন। এ সময় মৃদু কম্পন বা ধাক্কার মতো হবে অনুভূতিটা। ক্রমে মা নড়াচড়া আরও ভালো টের পেতে শুরু করবেন। প্রথম মা অনভিজ্ঞতার কারণে ১৮ সপ্তাহেও এটি বুঝতে পারেন। এতে ভয়ের কিছু নেই। 

এটা যদি আপনার প্রথম প্রেগনেন্সি হয়, তাহলে আপনি আপনার বাচ্চার নড়াচড়া টের পেতে পেতে ২০ সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। তবে আপনি যদি আগেও একবার মা হয়ে থাকেন তাহলে প্রায় ১৬ সপ্তাহের দিকে আপনার শিশুর নড়াচড়া বুঝতে পারবেন। আপনার শিশুর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তার নড়াচড়ার ধরনে পরিবর্তন আসবে। তাই সময়ের সাথে আপনি আরও বেশি নড়াচড়া বুঝতে পারবেন। 

আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হবে?

গর্ভের বাচ্চা কোন কোন সময় নড়াচড়া করে? 

পেটের বাচ্চা সাধারণত দুপুরে বা বিকালে এবং সন্ধ্যার দিকে বেশি নড়াচড়া করে। অবশ্য সব মায়ের ক্ষেত্রে একই রকম না ও হতে পারে। দিন এবং রাতের কিছু সময়ে আপনার শিশু ঘুমিয়ে থাকে। বেশিরভাগ সময়ই এই ঘুমের দৈর্ঘ্য ২০ থেকে ৪০ মিনিট হয়, সর্বোচ্চ ৯০ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে। আপনার শিশু অবশ্য ঘুমের সময় নড়াচড়া করবে না। 

বাচ্চা অনেক সময় রাতে বা আপনি বিশ্রামে থাকলে বেশি নাড়াচাড়া করে। কারণ, তখন আপনার শরীর শান্ত থাকে এবং আপনি সহজেই তার মুভমেন্ট অনুভব করতে পারেন। আপনি যদি গা ঢেলে শুয়ে থাকেন বা সাইডে ঘুমান, বিশেষ করে বাম কাতে, তখন বাচ্চার নড়াচড়া বেশি টের পাওয়া যায়।। ২ ঘণ্টায় অন্তত ১০ বার নড়াচড়া করাকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়।

গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়ার ধরণ কেমন হয়?  

একেক শিশুর নড়াচড়ার ধরন একেক ধরনের। শিশু যে সব সময় নড়তেই থাকবে এমনটা নয়। মাকে বুঝে নিতে হবে তার শিশুটি কখন কতক্ষণ সাধারণত ঘুমায়।পেটের এক স্থান থেকে গড়িয়ে অপর স্থানে যাওয়া, ঢেউ এর মত মনে হওয়া, খুব দ্রুত নড়ে উঠা বা ঝাকুনি দেওয়া, ছোট পা এর লাথি এরকম কিছু অনুভুতির মাধ্যমে আপনি শিশুর উপস্থিতি বুঝতে পারবেন। আপনার গর্ভকালীন সময় বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে শিশুর নড়াচড়ার ধরণও বদলে যায়। 

সাধারণত ২৮ থেকে ৩৬ সপ্তাহ গর্ভকালে সবচেয়ে বেশি শিশুর নড়াচড়া বোঝা যায়। এতে মায়েরা অভ্যস্তও হয়ে পড়েন। সাধারণত খাওয়াদাওয়ার পর নড়াচড়া বেশি বেড়ে যায়। ৩৬ থেকে ৪২ সপ্তাহ গর্ভকালে গর্ভস্থ শিশু আকারে বেশ বড় হয়ে যায় ও তার নড়াচড়ার স্থান যায় কমে। ফলে নড়াচড়ার তীব্রতা কমে যায় কিন্তু নড়াচড়া কমে না। 

১৬ সপ্তাহ থেকে ৩২ সপ্তাহ পর্যন্ত তার নড়াচড়া বৃদ্ধি পেতে পারে। আপনার প্রসবের সময় এগিয়ে আসার সাথে সাথে ওর নড়াচড়া কিছুটা কমে আসে, সাধারণত ৩২ সপ্তাহ থেকেই শিশুর মুভমেন্ট কমতে শুরু করে এবং ডেলিভারি পর্যন্ত এই প্যাটার্ন মোটামুটি একই রকম থাকে। 

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার মুভমেন্ট কেন গুরুত্বপূর্ণ?

গর্ভাবস্থায় শিশুর নড়াচড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মায়ের তাঁর বাচ্চার নড়াচড়া বুঝতে পারা অনেক গুরুত্ব বহন করে। গর্ভস্থ বাচার নড়াচড়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিচে উল্লেখ করছিঃ 

  • শিশুর সুস্থতা বোঝা 

বাচ্চার নিয়মিত নড়াচড়া একটি শক্তিশালী ইঙ্গিত দেয় যে, সে জরায়ুর ভেতরে সুস্থ ও সবল আছে। যখন একটি শিশুর নড়াচড়া স্বাভাবিক থাকে, তখন বোঝা যায় তার সুস্থতা ভালো।

  • সাধারণ বিকাশের ইঙ্গিত

সময়ের সাথে সাথে শিশুর নড়াচড়ার ধরন এবং ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তিত হয়। প্রথমে হালকা অনুভূত হয়, যা সাধারণত ১৬ থেকে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে শুরু হয়। এরপর লাথি, মোচড়ানো, গড়াগড়ি বা হাত-পায়ের নাড়াচাড়া আরও স্পষ্ট হয়। এই পরিবর্তনগুলো শিশুর ক্রমবর্ধমান বিকাশের প্রতিফলন। 

  • মা শিশুর সম্পর্ক  

বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করা মায়ের জন্য একটি অসাধারণ অনুভূতি, যা মা এবং অনাগত শিশুর মধ্যে মানসিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে তোলে। এটি মাকে মাতৃত্বের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে সাহায্য করে এবং গর্ভাবস্থার অভিজ্ঞতাকে আরও বাস্তব করে তোলে।

  • কিক কাউন্টিং

২৮ সপ্তাহ থেকে অনেক ডাক্তার মায়েদেরকে “কিক কাউন্টিং” বা বাচ্চার নড়াচড়া গণনা করার পরামর্শ দেন। এর মাধ্যমে মা প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে শিশুর নড়াচড়ার একটি স্বাভাবিক ধরণ সম্পর্কে পরিচিত হন।

যদি এই ধরণে কোন পরিবর্তন দেখা দেয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ।

পেটে বাচ্চা নড়াচড়া না করলে করনীয় কি?

Baby movement in pregnancy

গর্ভবতী মায়েদের গর্ভস্থ বাচ্চা একটি নির্ধারিত সময় নড়াচড়া করা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই নির্ধারিত সময় পরেও যদি পেটে বাচ্চা না নড়ে বা কিছুদিন নড়াচড়া করার পর এটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই চিন্তার ব্যাপার। এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। শিশুর নড়াচড়া কমে যাওয়া অনেক সময় অক্সিজেন স্বল্পতা বা অন্য কোনো জটিলতার পূর্বাভাস হতে পারে। তাই বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। এজন্য প্রায় ২৪ ঘণ্টা মত যদি আপনি নড়াচড়া বুঝতে না পারেন তাহলে দেরি না করে বা ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য অপেক্ষা না করেই চেক আপ এর জন্য চলে যান।   

FAQs

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার নড়াচড়া বেশি হওয়া কি অস্বাভাবিক? 

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার নড়াচড়া বেশি হওয়া সাধারণত অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটি একটি সুস্থ এবং সঠিক বিকাশমান বাচ্চার অবস্থাকেই ইঙ্গিত করে। তবে যদি হঠাৎ করেই নড়াচড়ার পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়, এবং তা দীর্ঘক্ষণ ধরে চলতে থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নড়াচড়া কোনো অস্বাভাবিকতার ইঙ্গিতও দিতে পারে। এমন অবস্থা এড়িয়ে না গিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। 

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার নড়াচড়া কম হলে কি করবেন?

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার নড়াচড়া কম হলে প্রথমেই আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ও সচেতনতার সঙ্গে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সাধারণত ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের পর শিশুর নড়াচড়া স্পষ্টভাবে অনুভব করা যায়। তবে প্রতি শিশুর নড়াচড়ার ধরণ আলাদা, তাই তুলনা না করেই নিজের শিশুর গতিশীলতা বুঝে নিতে হবে। কম হলেও যদি নিয়মিত নড়াচড়া চলতে থাকে তাহলে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। 

গর্ভে শিশুর নড়াচড়া শুরু হলেও মা তা কেন সাথে সাথে টের পান না?

গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে শিশুর নড়াচড়াগুলো খুবই ছোট এবং দুর্বল থাকে। যেহেতু এই অনুভূতিগুলো অন্য সাধারণ শারীরিক অনুভূতির সাথে মিলে যায়, তাই মা সেগুলো শিশুর নড়াচড়া হিসেবে নাও বুঝতে পারেন। এছাড়া যখন মা দিনের নানা কাজকর্মে ব্যস্ত থাকেন বা মনোযোগ অন্যদিকে থাকে, তখন শিশুর হালকা নড়াচড়াও মা সহজে অনুভব করতে পারেন না। 

Author

  • ডাঃ তানহা একজন নিবেদিতপ্রাণ মেডিসিন ও গাইনী বিশেষজ্ঞ, যিনি বর্তমানে একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। অভ্যন্তরীণ রোগ ও নারীস্বাস্থ্য বিষয়ে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তিনি নারীদের স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সঠিক ও প্রমাণভিত্তিক তথ্য প্রচারে বিশ্বাসী। Emergencypillbd.com-এ তিনি নিয়মিতভাবে প্রেগন্যান্সি, পিরিয়ড, ইমার্জেন্সি পিল এবং নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা শেয়ার করে থাকেন, যা নারীদের সুস্থ জীবনযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

Leave a Comment