জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটা ভালো? কী কী পদ্ধতি রয়েছে?

অনেকেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটা ভালো। জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের ব্যবহার গর্ভধারণ রোধ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুলবশত বা অপ্রত্যাশিত শারীরিক সম্পর্কের পর সঠিক সময়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন করলে গর্ভধারণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়া, সদ্য বিবাহিত দম্পতি কিংবা যে কোনো দম্পতি যারা পরিকল্পিতভাবে গর্ভধারণ এড়াতে চান, তারা নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে আরও কিছু পদ্ধতি আছে। 

এক সময়ে ফেমিকন ছিল সবচেয়ে পরিচিত ও জনপ্রিয় জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল। তবে বর্তমানে বাজারে আরও অনেক পিল পাওয়া যায়, যেগুলো নিরাপদ এবং কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত। যদি আপনি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হন, তাহলে নিবন্ধটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। এখানে আমরা কিছু জনপ্রিয় ও কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করবো। 

আরও পড়ুনঃ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে কি মোটা হয় মানুষ?

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিঃ

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মধ্যে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতির ব্যাপারে মোটামুটি সবাইই জানে। তবে কার জন্য কোনটি উপযুক্ত তা অনেকেই বুঝতে পারেন না। এটি বোঝার সবথেকে ভালো উপায় হচ্ছে সব পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে জেনে রাখা। চলুন পদ্ধতি গুলোর ব্যাপারে সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাকঃ  

দীর্ঘমেয়াদী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি 

দীর্ঘ মেয়াদী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে বেশ কয়েকটি অপশন রয়েছে, আপনি যেটা চান সেটা ব্যবহার করতে পারেন। দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতিতে আপনি দীর্ঘ সময় ধরে গর্ভধারণ এড়াতে পারবেন। চলুন দেখে নেয়া যাক কী কী আহে এই পদ্ধতির মধ্যেঃ 

  • ইনজেকশন

ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে নির্দিষ্ট হরমোন প্রয়োগ করা হয়, যা গর্ভধারণ প্রতিরোধে সহায়ক। কিছু ক্ষেত্রে ঔষধের মাধ্যমে শরীরে হরমন উৎপাদন করেও একই প্রভাব আনা সম্ভব। যেহেতু এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, তাই ভবিষ্যতে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে কিছু প্রভাব থাকতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটি ব্যবহার করা উচিত নয়।

  • আজল 

আজল বা বীর্য বের করা পদ্ধতি হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে মিলনের সময় বীর্য যোনীপথে পৌঁছার আগে বাহির করা হয়। এটি ইসলামি শরীয়াহ অনুযায়ী বৈধ। তাই স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি করে না এবং ভবিষ্যতে গর্ভধারণের জন্য কোনো সমস্যা তৈরি করে না। যেহেতু শুক্রাণু যোনীপথে প্রবেশ করতে পারে না, তাই গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে না। এজন্য এটিকে দীর্ঘমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মধ্যে ধরা হয়।

  • IUD

IUD একটি ছোট, নমনীয় T-আকৃতির যন্ত্র, যা কপার বা প্লাস্টিকের তৈরি হতে পারে এবং প্রয়োজন অনুসারে প্রোগেস্টিন হরমনও থাকতে পারে। এটি যোনীপথে স্থাপন করা হয়। IUD থাকাকালীন সময়ে, শুক্রাণু ডিম্বানুর কাছে পৌঁছাতে পারে না, ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে না। IUD-কে একটি কার্যকর দীর্ঘমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে ধরা হয়।

স্বল্পমেয়াদী পদ্ধতি

স্বল্পমেয়াদী পদ্ধতিতে আপনি স্বল্প সময়ের জন্য গর্ভধারণ এড়াতে পারবেন। এটি কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে কাজ করবে না। আপনি যখনই এই পদ্ধতি ব্যবহার করা বন্ধ করে দিবেন তখনই আবার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। তাই যারা সাময়িক গর্ভধারণ এড়াতে চান তাঁদের জন্য এটি সেরা। 

  •  ইমার্জেন্সি পিল

যে সকল জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সীমিত সময়ের জন্য কার্যকর হয়, সেগুলোকে স্বল্পমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বলা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো ইমার্জেন্সি পিল, যা বিশেষভাবে গর্ভধারণ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। যৌন মিলনের আগে বা পরে এই ধরনের পিল সেবন করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায়। বিভিন্ন ইমার্জেন্সি পিলের ব্যবহার ও ডোজের নিয়ম আলাদা হতে পারে। যেহেতু এই পিলগুলি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে পারে না এবং শুধুমাত্র সীমিত সময়ের জন্য কার্যকর হয়, তাই এগুলোকে স্বল্পমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

  • নিয়মিত পিল

নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল হলো এমন একটি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি যা নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিয়মিত গ্রহণ করতে হয়। এটি ডিম্বাণু উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং শুক্রাণুর যোনীপথে প্রবেশকে কঠিন করে। নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহার করা সহজ এবং প্রায়শই কার্যকর, তবে কখনও কখনও হালকা মাথা ঘোরা, বমি ভাব বা মাসিকের অনিয়মের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। 

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটা ভালো? 

best birth control method

কেউ সদ্য বিবাহিত, তাই তারা সাময়িকভাবে সন্তান নেবার পরিকল্পনা পিছিয়ে দিতে চাইতে পারে। আবার কেউ এক সন্তান থাকলেও পরবর্তী সন্তানের জন্য কয়েক বছরের বিরতি চান। অনেক দম্পতি হয়তো ইতিমধ্যেই দুই সন্তানের বাবা মা, তাই তারা জন্মনিয়ন্ত্রণে স্থায়ী পদ্ধতি বেছে নিতে ইচ্ছুক। কেউ প্রয়োজন মনে করেন প্রসব পরবর্তী সময়ের জন্য, আবার কেউ গর্ভপাতের পর সঠিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি খুঁজে থাকেন। 

জন্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি থাকলেও, প্রতিটি দম্পতির প্রয়োজন ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সঠিক পদ্ধতি নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব দম্পতির জন্য এক ধরনের পদ্ধতি প্রযোজ্য নয়, তাই ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও স্বাস্থ্য বিবেচনা করে উপযুক্ত পদ্ধতি বেছে নেওয়াই সঠিক।

বর্তমানে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতিকে কখনও কখনও স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বলা হয়, কারণ এগুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য বা স্থায়ীভাবে গর্ভধারণ রোধ করতে সক্ষম। অন্যদিকে, স্বল্পমেয়াদী পদ্ধতিকে অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বলা হয়, যা প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা যায় এবং সাময়িকভাবে গর্ভনিরোধ করে। কোনটি ভালো তা উভয় ধরন সম্পর্কে ভালোভাবে জানলেই বোঝা যাবে। 

FAQs

দীর্ঘমেয়াদী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল কাদের জন্য বেশি ভালো? 

দীর্ঘমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি তাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী, যারা দীর্ঘ সময়ের জন্য গর্ভধারণ এড়াতে চান। এছাড়া যারা পরিবার পরিকল্পনার জন্য স্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খুঁজছেন তাদের জন্যও এটি ভালো বিকল্প। দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতির সুবিধা হলো একবার গ্রহণ বা স্থাপন করলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কার্যকর থাকে, রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন কম এবং ব্যবহারকারীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বিশেষ কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করে না। 

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নির্বাচন করার সময় কী কী বিষয় বিবেচনা করা উচিত?

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নির্বাচন করার সময় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা উচিত। প্রথমেই স্বাস্থ্য ও শারীরিক অবস্থা খেয়াল করতে হবে। কতো বছর গর্ভধারণ এড়াতে চান, স্থায়ী না অস্থায়ী পদ্ধতি প্রয়োজন, তা স্পষ্ট করা জরুরি। এছাড়া কোন পদ্ধতি সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং সহজে পাওয়া যায় তা গুরুত্বপূর্ণ। তাই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নির্বাচন করার আগে সব দিকের মূল্যায়ন করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর।

কোন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বেশি নিরাপদ?

সব জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি এক সময়ে নিরাপদ হলেও, কোনোটিই সর্বদা ১০০% নিরাপদ নয়। প্রতিটি পদ্ধতির নিরাপত্তা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর শারীরিক অবস্থা, স্বাস্থ্য সমস্যা, এবং পদ্ধতির সঠিকভাবে প্রয়োগের উপর। তাই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নির্বাচন করার সময় ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য, চিকিৎসকের পরামর্শ এবং ব্যবহার বিধি সবগুলোই বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সবাইকে সমানভাবে প্রযোজ্য না হওয়ার কারণ কী?

কিছু মানুষের আগে থেকে স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকতে পারে, যা হরমোনভিত্তিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। একজন নারী তার জীবনের কোন পর্যায়ে আছেন এবং ভবিষ্যতে সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা, তার ওপরও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নির্বাচন নির্ভর করে।

Author

  • ডাঃ তানহা একজন নিবেদিতপ্রাণ মেডিসিন ও গাইনী বিশেষজ্ঞ, যিনি বর্তমানে একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। অভ্যন্তরীণ রোগ ও নারীস্বাস্থ্য বিষয়ে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তিনি নারীদের স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সঠিক ও প্রমাণভিত্তিক তথ্য প্রচারে বিশ্বাসী। Emergencypillbd.com-এ তিনি নিয়মিতভাবে প্রেগন্যান্সি, পিরিয়ড, ইমার্জেন্সি পিল এবং নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা শেয়ার করে থাকেন, যা নারীদের সুস্থ জীবনযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

Leave a Comment