একজন মা যখন সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত দুধ দিতে পারেন না, তখন শিশুটি ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাঁদতে থাকে ও কষ্ট পায়। যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তারা সহজেই বাজার থেকে দুধ কিনে বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন। কিন্তু অনেক পরিবার আছেন যারা সম্পূর্ণভাবে মায়ের বুকের দুধের ওপর নির্ভরশীল।এক্ষেত্রে অনেকেই অনেক ধরনের খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন যা দুধ বৃদ্ধি করে। বুকের দুধ আল্লাহর দান, তাই অন্যান্য চেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহর উপর ভরসা করতেই হবে এবং নিয়মিত দোয়া করতে হবে।
আজকে আমরা আপনাদেরকে বুকের দুধ বৃদ্ধির দোয়া সম্পর্কে বলবো। নিয়মিত এই দোয়া পাঠ করলে, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আপনার বুকের দুধে বরকত দান করবেন এবং সন্তান তার প্রাপ্য আহার পাবে। মহান আল্লাহ তায়ালা সবকিছুই পারেন, তাই যদি তাঁর সন্তুষ্টির জন্য দোয়া পাঠ করে তাঁর কাছে প্রার্থনা করা হয় তাহলে নিশ্চয়ই তিনি বান্দার ডাক শুনবেন। যাইহোক, চলুন জেনে নেয়া যাক কোন দোয়াটি পড়তে হবে।
আরও পড়ুনঃ সাদা স্রাব হলে কি ক্ষতি হয়?
বুকের দুধ বৃদ্ধির দোয়াঃ
আল্লাহ তায়ালা তাঁর কুরআনে আমাদের জীবনের প্রতিটি সমস্যার সমাধান হিসেবে অসংখ্য দোয়া ও আমল শিখিয়েছেন। শুধু সেগুলো বিশ্বাস ও আমলের সঙ্গে পালন করলেই ইনশাআল্লাহ জীবনের সব কষ্ট ও অভাব দূর হবে। এই উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ দোয়া হলো “ইয়া মাতিনু” يا المتين যা আল্লাহ তায়ালার একটি গুণবাচক নাম।
নিয়ম অনুযায়ী এই নামটি সাতবার পাঠ করে এক গ্লাস পানিতে ফুঁ দিতে হবে। এরপর মা সেই পানি দিয়ে নিজের স্তন ধৌত করবেন এবং অবশিষ্ট পানি পান করবেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে, ইনশাআল্লাহ এতে বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং সন্তান তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করতে পারবে।
বুকের দুধ কেন বৃদ্ধি পায় না বা কমে যায়?
বুকের দুধ বৃদ্ধি না পাওয়ার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। এই কারণগুলো জানাও জরুরি। কারণগুলো জানা থাকলে একজন মা হিসেবে আপনি এগুলো এড়াতে পারেন। নিচে কী কী কারণ দায়ী সেগুলো উল্লেখ করা হলোঃ
বিরতি দিয়ে দুধ খাওয়ানোঃ শিশু ঘন ঘন বা পর্যাপ্ত সময় ধরে দুধ পান না করলে অথবা মা নিয়মিত পাম্প না করলে স্তনে দুধ তৈরি হওয়ার সংকেত কমে যায়, ফলে দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়।
ভুল অবস্থানে দুগ্ধ খাওয়ানোঃ শিশু যদি স্তনবৃন্ত ঠিকমতো মুখে নিতে না পারে, তবে সে ঠিকভাবে দুধ টানতে পারে না। এতে স্তন উদ্দীপিত হয় না এবং দুধের উৎপাদন কমে যায়।
মানসিক চাপ ও উদ্বেগঃ অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব দুধ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণে বাধা দেয়, যা দ্রুত দুধ কমে যাওয়ার একটি বড় কারণ।
শরীরে পানিশূন্যতাঃ বুকের দুধের একটি বড় অংশ পানি। মা যদি পর্যাপ্ত পানি বা অন্যান্য তরল পান না করেন এবং সুষম খাবার না খান, তবে দুধ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ হয় না।
হরমোনজনিত সমস্যাঃ মায়ের থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা বা প্রসবকালীন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের মতো শারীরিক ও হরমোনজনিত জটিলতা দুধ উৎপাদন কমিয়ে দেয়।
নতুন গর্ভধারণঃ সন্তান জন্মের কয়েক মাস পর মাসিক শুরু হলে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে সাময়িকভাবে দুধের পরিমাণ কমে যেতে পারে। আবার, নতুন করে গর্ভধারণ হলেও দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়।
বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য সুন্নাহ সম্মত উপায় কী কী?
বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য সরাসরি সুন্নাহ সম্মত নির্দিষ্ট কোনো খাদ্য তালিকা বা পদ্ধতির উল্লেখ হাদিসে সুনির্দিষ্টভাবে নেই, তবে ইসলাম মায়ের স্বাস্থ্য ও শিশুর পুষ্টির ওপর জোর দিয়েছে। ইসলামের সাধারণ দিকনির্দেশনা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস রয়েছে যা মায়ের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। উপায় গুলো নিম্নরূপঃ
-
আল্লাহর সাহায্য চাওয়া ও দোয়া করা
বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য কিছু ইসলামিক বর্ণনায় নির্দিষ্ট কিছু সূরা বা আয়াত লিখে ধোয়া পানি পান করার বা শরীরে বেঁধে রাখার কথা বলা হয়েছে। এটি মূলত দু’আ বা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার একটি পদ্ধতি।
-
পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল পান করা
বুকের দুধের বেশিরভাগ অংশই পানি, তাই প্রচুর পরিমাণে পানি, স্যুপ এবং তরল পানীয় পান করা খুব জরুরি। এটি সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি। শরীরকে সুস্থ রাখার এটি একটি অন্যতম মাধ্যম যা বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে পারে।
-
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
ইসলাম স্বাস্থ্যকর খাদ্যের উপর জোর দেয়। মায়ের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপন্ন হওয়ার জন্য মাকে পর্যাপ্ত সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। হাদিসে নবী (সা.) কিছু স্বাস্থ্যকর খাবারের গুণাগুণ উল্লেখ করেছেন যা পুষ্টির অংশ হতে পারে।
-
ঘন ঘন স্তন্যপান করানো
শিশুকে যত বেশি স্তন্যপান করানো হবে, তত বেশি প্রোল্যাকটিন হরমোন নিঃসৃত হবে, যা দুধ উৎপাদনে সহায়ক। ঘন ঘন স্তন্যপান করানো দুধের সরবরাহ বাড়ানোর একটি প্রমাণিত উপায়।
-
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা
পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নেওয়া হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ইসলামে প্রত্যেক মানুষের তার শরীরের অধিকার পূরণের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া মানসিক চাপ কমানোর জন্য গভীর নিঃশ্বাস বা হালকা হাঁটার মতো শিথিলকরণ কৌশলগুলি চেষ্টা করা যেতে পারে।
FAQs
বুকের দুধ বৃদ্ধি কোন দিক থেকে আল্লাহ তায়ালার রহমতের নিদর্শন?
বুকের দুধ বৃদ্ধি আল্লাহ তায়ালার এক অনন্য রহমতের নিদর্শন, কারণ এর মাধ্যমে তিনি মায়ের দেহ থেকেই সন্তানের জন্য পবিত্র, পুষ্টিকর ও উপযুক্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এটি এমন এক ব্যবস্থা, যেখানে নবজাতককে আলাদা কোনো খাবার বা যত্ন ছাড়াই স্বয়ং মায়ের শরীর থেকে জীবনধারণের উপযোগী রিযিক প্রদান করা হয়।
ইসলামে দুধ বৃদ্ধির জন্য দোয়া করার মূল উদ্দেশ্য কী?
ইসলামে দুধ বৃদ্ধির জন্য দোয়া করার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাওয়া ও তাঁর উপর পূর্ণ ভরসা প্রকাশ করা। মানুষ যতই চেষ্টা করুক, প্রকৃত ফলাফল ও বরকত কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। মায়ের বুকের দুধ সন্তানের জন্য একটি পবিত্র রিযিক, তাই দোয়া করার মাধ্যমে মা আল্লাহর কাছে আবেদন করেন যেন তিনি সেই রিযিকে বরকত দান করেন।
আল্লাহর উপর ভরসা রাখা কীভাবে দুধ উৎপাদনে সহায়তা করে?
আল্লাহর উপর ভরসা রাখা সরাসরি শারীরিক প্রক্রিয়া না হলেও, এটি মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে, যা পরোক্ষভাবে বুকের দুধ উৎপাদনে অত্যন্ত সহায়ক। যখন একজন মা দৃঢ়ভাবে আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন, তখন জীবনের সব প্রতিকূলতা ও দুশ্চিন্তা থেকে তিনি মুক্তি পান। এই মানসিক শান্তি স্ট্রেস হরমোন এর মাত্রা কমিয়ে দেয়।