মাসিকের ব্যথা একটি সাধারণ শারীরবৃত্তীয় সমস্যা, যা অনেক মহিলা তাদের মাসিকের সময় অনুভব করেন। এই ব্যথা হালকা থেকে তীব্র হতে পারে এবং অনেক সময় কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়, ফলে দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। সবার ক্ষেত্রে ব্যথা তীব্র হয় এমন না, তবে কারো কারো ক্ষেত্রে অসহনীয় ব্যথা অনুভব হতে পারে। মহান আল্লাহ তায়ালা নারীদের জন্য বিশেষ দোয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে সব ধরণের কষ্টে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দিয়েছেন।
নবী করিম (সাঃ) এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে এমন অনেক দোয়া শিখিয়েছেন যা এসময় শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি আনে। মাসিকের সময় ব্যথা কমানোর জন্য দোয়া ও আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া মুসলমানদের একটি ঈমানি চর্চা। আসুন আমরা আজকে পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর দোয়া সম্পর্কে জানি।
আরও পড়ুনঃ পিরিয়ড কত বছর বয়সে শুরু হয়?
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর দোয়াঃ
পিরিয়ডের ব্যথা হলে মুসলমান মেয়েরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে পারেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের ব্যথার সময় একটি বিশেষ দোয়া পড়তে বলেছেন।
তিনি বলেছেন —
ব্যথার স্থানে ডান হাত রেখে তিনবার “বিসমিল্লাহ” বলো।
এরপর সাতবার নিচের দোয়াটি পড়ো:
أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ
উচ্চারণঃ “আউযু বি-ইজ্জাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু।”
অর্থ: “আমি আল্লাহর মর্যাদা ও তাঁর কুদরতের মাধ্যমে আমি যা অনুভব করছি ও ভোগ করছি তার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।”
এই দোয়া পাঠ করলে আল্লাহর ইচ্ছায় ব্যথা লাঘব হতে পারে।
এছাড়া আরও দুইটি আমল করা যেতে পারে –
১) প্রথমে এক গ্লাস পানি নিন। এরপর একবার দরুদে ইব্রাহিম পাঠ করুন। তারপর আল্লাহ তায়ালার একটি গুণবাচক নাম সাতবার পাঠ করুন। এরপর সেই পানির ওপর তিনবার ফুঁ দিন। আবার একবার দরুদে ইব্রাহিম পাঠ করুন। শেষে বিসমিল্লাহ বলে পানি পান করুন।
আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় ও রহমতে ইনশাআল্লাহ ব্যথা হালকা হয়ে যাবে।
২) একটি গ্লাস পানি নিন। আল্লাহ তায়ালার ইয়া মুতাআল বা ইয়া মুতায়ালী নামটি ১২১ বার মনোযোগ সহকারে পাঠ করুন। এরপর পানির ওপর ফুঁ দিয়ে দোয়া করুন যেন আল্লাহ তায়ালা এই ব্যথা দূর করে দেন। তারপর সেই পানি পান করুন।
প্রতিদিন একবার করে এই আমলটি চালিয়ে যেতে হবে যতদিন ব্যথা থাকে।
আল্লাহর রহমতে ইনশাআল্লাহ ব্যথা লাঘব হবে।
৩) এক গ্লাস পানি নিয়ে লা’ ফীহা’ গওলুন ওয়া লা’হুম আনহা’ ইউনযাফূন আয়াতটি ৩, ৭ বা ১১ বার মনোযোগ সহকারে পাঠ করুন। এরপর সেই পানির ওপর তিনবার ফুঁ দিন। তারপর আল্লাহর নাম নিয়ে পানি পান করুন।
ব্যথা থাকা পর্যন্ত প্রতিদিন এই আমলটি একবার করে করা যেতে পারে।
পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে দোয়া পড়ার উপকারিতা কী?
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে যদি আল্লাহর উপর ভরসা করে কিছু আমল করতে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। জেনে নিন কেন করবেন এই আমল বা দোয়া পড়লে কি উপকার হয়ঃ
-
আল্লাহর উপর ভরসা বৃদ্ধি পায়
দোয়া ও আমলের মাধ্যমে একজন নারী ব্যথার সময় আল্লাহ তাআ’লার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। এতে তার অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভরসা ও ঈমান দৃঢ় হয়।
-
আত্মিক শান্তি আসে
দোয়া, জিকির ও কুরআনের আয়াত পাঠ মনকে শান্ত করে, মানসিক চাপ কমায় এবং উদ্বেগ দূর করে। মানসিকভাবে প্রশান্ত থাকলে শরীরও শিথিল হয়, ফলে ব্যথার অনুভূতি কিছুটা হালকা হয়ে আসে।
-
আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য বাড়ে
নিয়মিত আমল করার মাধ্যমে একজন নারী নিজের মধ্যে ধৈর্য ও দৃঢ়তা অনুভব করেন। ব্যথার মুহূর্তে নিজেকে অসহায় না ভেবে, আল্লাহর দিকে মনোযোগ দিলে ভেতর থেকে শক্তি আসে। এটি মানসিকভাবে ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ায়।
-
শারীরিক স্বস্তিতে সহায়ক
অনেকেই নির্দিষ্ট দোয়া পাঠ করে পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করলে মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি শারীরিক আরামও অনুভব করেন। এটি দোয়ার আধ্যাত্মিক প্রভাব ও পানির স্বাভাবিক উপকারিতার মিশ্রণ, যা ব্যথা কিছুটা লাঘব করতে সহায়তা করে।
দোয়া ও চিকিৎসা – এ দুটির সমন্বয় কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এই দুইটির সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ ইসলাম উভয়কেই সমানভাবে উৎসাহিত করেছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের দোয়ার মাধ্যমে তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে বলেছেন, আবার রোগ ব্যাধির জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করতেও নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু দোয়া করে চিকিৎসা না নিলে শারীরিক সমস্যার মূল কারণ দূর নাও হতে পারে, আবার শুধু চিকিৎসা নিয়ে আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা না রাখলে আত্মিক প্রশান্তি পাওয়া কঠিন।
ইসলামে দোয়া ও চিকিৎসা একে অপরের পরিপূরক। ব্যথার সময় আমল করলে আধ্যাত্মিক সান্ত্বনা মেলে, আর চিকিৎসা নিলে শারীরিক কারণ দূর হয়। এই দুইয়ের সমন্বয়ে পিরিয়ডের সময় অনেক বেশি স্বস্তি পাওয়া সম্ভব।
FAQs
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর দোয়ায় ব্যথার স্থানে ডান হাত রাখার উদ্দেশ্য কী?
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যথা বা অসুস্থ স্থানে ডান হাত রেখে দোয়া করার পরামর্শ দিয়েছেন, যা মূলত আল্লাহর কাছে আরোগ্য চাওয়ার একটি সুন্নত পদ্ধতি। দোয়ার সময় ব্যথার স্থানে হাত রাখলে মন ও শরীর একসাথে দোয়ার প্রতি মনোযোগী হয়। যখন হাত ব্যথাযুক্ত অংশে রাখা হয়, তখন দোয়াটি সেই সুনির্দিষ্ট শারীরিক কষ্টের নিরাময়ের জন্য বিশেষভাবে আল্লাহর কাছে নিবেদন করা হচ্ছ, এই বিষয়টি মনকে দৃঢ়ভাবে বোঝানো যায়।
ইসলাম কি চিকিৎসা গ্রহণকে নিরুৎসাহিত করে?
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) শুধুমাত্র অসুস্থদের জন্য দোয়া করতেন না, বরং তিনি নিজেও চিকিৎসা গ্রহণ করতেন এবং সাহাবিদেরকে চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করতেন। যদি পিরিয়ড এবং এর ব্যথা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায় তাহলে দোয়া-আমল করার পাশাপাশি চিকিৎসা নেয়া যেতে পারে।
দোয়া বা আমল করার মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি কীভাবে আসে?
পিরিয়ডের সময় দোয়া বা আমল করার মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি আসে মূলত আল্লাহর প্রতি ভরসা ও অন্তরের প্রশান্তির কারণে। নিয়মিত আমল করলে মন একাগ্র হয়, উদ্বেগ দূর হয় এবং ভেতরে এক ধরনের ভরসা ও শান্তির অনুভূতি জাগে। এতে ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।