বাংলাদেশে বর্তমানে জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ধরনের পিল ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ইমারজেন্সি পিল হলো ইমকন ১। এটি এমন একটি পিল যা সহজে সেবন করা যায় এবং জরুরি সময়ের গর্ভধারণ নিয়ন্ত্রনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এই পিলের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে আমাদের দেশে।
তবে মনে রাখতে হবে, যেকোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের মতো ইমকন ১ এরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। পাশাপাশি এটির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলা জরুরি। যেমন, ইমকন ১ কিভাবে কাজ করে, কোন সময়ের মধ্যে সেবন করতে হবে, কতটুকু মাত্রা নেওয়া যাবে – এসব কিছু সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারনা রাখতে হবে। আজ আমরা আপনাদেরকে এই পিলটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে চেষ্টা করবো।
আরও পড়ুনঃ নরপিল ১ এর কাজ কি? Norpill 1 পিল খাওয়ার নিয়ম
Emcon কি ইমার্জেন্সি পিল?
হ্যাঁ, ইমকন একটি ইমারজেন্সি পিল যেটা অরক্ষিত সহবাসের পর একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে গ্রহণ করতে হয়। ইমকন ১ মূলত অনিরাপদ যৌনমিলনের পর জরুরি গর্ভনিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও কোনো নারী যদি ধর্ষণের শিকার হন, সেক্ষেত্রেও অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ প্রতিরোধের জন্য এ ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। সহবাসের পর যত দ্রুত সম্ভব আপনাকে এই পিলটি খেতে হবে।
যদি আপনি নির্ধারিত সময়সীমা পার করে ফেলেন তাহলে পিলের কার্যকারিতা থাকবে না। এছাড়া পিল খাওয়ার পর বমি হয়ে গেলেও এর কার্যকারিতা অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে যায়। আমরা বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি আমাদের এই আর্টিকেল এর পরবর্তী অংশে।
Emcon 1 পিল কিভাবে কাজ করে?
অনিরাপদ যৌনমিলন অনেক সময় জীবনে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত সুরক্ষা ছাড়া মিলন, অসাবধানতা কিংবা অনুপযুক্ত সময়ে মিলনের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ অবস্থায় জরুরি সমাধান হিসেবে ইমকন ১ ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে। অর্থাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এড়াতে ইমকন ১ একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। যদিও এ পিল গ্রহণে আলাদা কোনো জটিল নিয়ম মানতে হয় না, তবে এর কার্যকারিতা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে সঠিক সময়ে সেবনের ওপর।
বিশেষ করে অনিরাপদ মিলনের কতক্ষণ পর এটি খাওয়া উচিত এবং সর্বোচ্চ কত সময়ের মধ্যে সেবন করতে হবে সে বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে মনে রাখতে হবে। তবে একবারে অবশ্যই একটি ট্যাবলেট খেতে হবে এবং এটি কোনোভাবেই নিয়মিত ব্যবহার করা যাবে না। ইমারজেন্সি পিল নিয়ম মেনে না গ্রহণ করলে এটি কাজ করবে না।
Emcon পিল খাওয়ার নিয়ম
অরক্ষিত যৌনমিলনের পর যত দ্রুত সম্ভব ইমকন ১ সেবন করা জরুরি। কারণ, এই ওষুধ যত দ্রুত গ্রহণ করা হবে, তত বেশি কার্যকরভাবে শরীরে কাজ শুরু করবে। সাধারণভাবে সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য সহবাসের ১২ ঘণ্টার মধ্যে সেবন করা উচিত। তবে ৭২ ঘণ্টার পর এটি খাওয়া হলে কার্যকারিতা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায়। খাওয়ার আগে নিয়মটি ভালোভাবে জেনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজঃ
- গর্ভনিরোধের জন্য ইমকন ১ এর মাত্র একটি ট্যাবলেট যথেষ্ট। এর বেশি সেবন করার কোনো দরকার নেই, বরং তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। মাসিক চলাকালীন সময়েও এই পিল খাওয়া যেতে পারে।
- ইমকন ১ বাজারে মূলত দুই ধরনের পাওয়া যায়। প্রথম ধরণের পিলটি অরক্ষিত যৌনমিলনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খেতে হয়, আর দ্বিতীয় ধরণের পিলটি ৫ দিনের মধ্যে সেবন করা যায়। উভয় ধরণের পিলই গর্ভনিরোধক হিসেবে কার্যকর।
- এই ট্যাবলেট সাধারণ ওষুধের মতোই খাওয়া যায়। প্যাকেট থেকে বের করে এক গ্লাস পানির সাথে সেবন করলেই হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ১২ ঘণ্টার মধ্যে সেবন করলে কার্যকারিতা সর্বোচ্চ থাকে, আর ২য় বা ৩য় দিনে খেলে ধীরে ধীরে এর প্রভাব কমে যায়।
- ইমকন ১ সেবনের সময় একটির বেশি ট্যাবলেট খাওয়া উচিত নয় এবং অন্য কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বা বড়ি এর সাথে একসাথে ব্যবহার না করাই ভালো। তবে ওষুধ সেবনের পর যদি বমি হয়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি ট্যাবলেট খেতে হবে।
নোটঃ উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী ইমকন ১ সঠিকভাবে সেবন করলে এটি দ্রুত কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। তবে মনে রাখতে হবে, এ ধরনের জরুরি জন্মনিরোধক বড়ি গ্রহণের সময় নিয়মকানুন মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। সামান্য অসাবধানতা বা ভুলের কারণে কাঙ্ক্ষিত ফল নাও পাওয়া যেতে পারে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতে পারে। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে এই বড়ি ব্যবহার করা উচিত।
Emcon পিল কতো ঘণ্টার মধ্যে খেতে হয়?
ইমকন পিল সাধারণত যৌন মিলনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খেতে হয়, যাতে এটি সর্বাধিক কার্যকর হয়। তবে এই সময়ের মধ্যে যদি আপনি পুনরায় যৌন মিলন করতে চান, তাহলে কিছু বিশেষ নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে আগেই পিল গ্রহণ করা ঠিক নয়। পুনরায় মিলনের পর নতুন মিলনের জন্য আলাদাভাবে পিল সেবন করতে হবে, কারণ পূর্বের পিল সেই নতুন মিলনের জন্য কার্যকর হবে না।
ইমকন ১ পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
প্রত্যেক ওষুধেরই কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে, আর জন্মনিরোধক পিলের ক্ষেত্রেও বিষয়টি ভিন্ন নয়। তাই এ ধরনের পিল ব্যবহার করার আগে সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি সরাসরি মাতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। পাশাপাশি সব ধরনের শরীরে একইভাবে কাজ নাও করতে পারে; বরং অনেক সময় এটি হরমোনজনিত জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাছাড়া কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে গিয়ে তাৎক্ষণিক কিছু অস্বস্তিকর প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। এক নজরে দেখে নিন কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারেঃ
- ইমকন ১ কখনোই গর্ভপাতের ওষুধ নয়। অর্থাৎ এটি গর্ভপাত ঘটানোর জন্য ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষ করে যারা ইতিমধ্যে গর্ভবতী, তাদের ক্ষেত্রে এই পিল ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
- ওষুধটি সেবনের পর শরীরে বিভিন্ন শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন, অনিয়মিত মাসিক, তলপেটের ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি। এগুলো অনেক সময় অতিরিক্ত মাত্রায়ও হতে পারে।
- ইমকন ১ এর আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব হলো হরমোনের পরিবর্তন। এটি সরাসরি হরমোনের ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে। এই পরিবর্তনের কারণে মাসিক চক্রে অনিয়ম দেখা দিতে পারে।
- কখনো সময়ের আগেই পিরিয়ড শুরু হতে পারে, আবার কখনো কয়েকদিন দেরি করতেও পারে। অর্থাৎ, ইমকন ১ মাসিকের সময়সূচিকে প্রভাবিত করতে পারে।
Emcon খাওয়ার পর পিরিয়ড কবে হয়?
একজন নারীর মাসিক চক্র ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয়। তবে শরীরে হরমোনের পরিবর্তন বা কোনো ওষুধের প্রভাবে অনেক সময় মাসিক স্বাভাবিক সময়ের থেকে ৫-৭ দিন আগে বা পরে হতে পারে। একইভাবে ইমকন পিল সেবনের পরও হরমোনের ওঠানামার কারণে মাসিক কয়েক দিন দেরিতে শুরু হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রেই ইমার্জেন্সি পিল সেবনে মাসিকের সময়ের কোনো পরিবর্তন হয় না। তবে কিছু নারীর ক্ষেত্রে হরমোনের প্রভাবে মাসিক স্বাভাবিকের তুলনায় ১ সপ্তাহ মত দেরিতে হতে পারে।
এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তবে মাসিকের নির্ধারিত তারিখের পর ১০ দিন পেরিয়েও মাসিক না হলে অবশ্যই গর্ভধারণ পরীক্ষা করা উচিত। আর যদি ২০/২৫ দিনের বেশি দেরি হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এছাড়া ইমার্জেন্সি পিল গ্রহণের ফলে অনেক সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় সাদাস্রাব বেড়ে যেতে পারে।
Emcon খাওয়ার পর বমি হলে কী করবো?
Emcon পিল খাওয়ার পর বমি হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার, তবে সবার হবে এমন কোন কথা নেই। যেকোনো ইমারজেন্সি পিলে উচ্চ মাত্রার হরমোনের উপস্থিতি থাকে, তাই এটি গ্রহণ করার পর অনেকেরই বমি ভাব আসতে পারে। এমনকি কেউ কেউ বমি করে ফেলেন। যদি পিল খাওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে আপনার বমি হয়ে যায় তাহলে আরেকটি পিল অবশ্যই খেতে হবে। বমির ফলে পিলের কার্যকারিতা থাকেনা, অথবা কখনও কখনও বমি সাথেও বের হয়ে যায়। তাই আরেকটি পিল খেতে হবে, তবে এর আগে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নেয়া ভালো।
FAQ
Emcon পিল কতদিন কাজ করে?
ইমকন পিল আপনি যত তাড়াতাড়ি খাবেন তত তাড়াতাড়িই কাজ করবে। যেহেতু এটি জরুরি মুহূর্তে ব্যবহারের জন্য সেহেতু খুব বেশিদিন ধরে এটি কাজ করবে না। নিয়মিত সহবাসের ক্ষেত্রে এই পিল প্রযোজ্য নয় কারণ ইমারজেন্সি পিল নিয়মিত খাওয়া যায় না।
Emcon পিল খেলে প্রেগনেন্সি হবে না?
Emcon পিল খেলে গর্ভধারণ হবে না এটা বলা যায় না। গর্ভধারণ তখন হবে না যখন আপনি এটি সহবাসের পর যথাসময়ে গর্ভধারণ না করার উদ্দেশ্যে খাবেন। তবে যদি আপনি ভবিষ্যতের ব্যাপারে জানতে চান তাহলে বলতে পারি যে ভবিষ্যতে গর্ভধারণে ইমকন পিল কোন প্রকার প্রভাব ফেলবে না। এর প্রভাব সাময়িক যেটা সেবনের কয়েকদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়। আপনি যখন গর্ভধারণ করতে চান তখন এই পিল খাবেন না যৌন সম্পর্কের পর, তাহলেই আর কোন চিন্তা নেই।
ইমকন পিল Safe কিনা?
ইমকন পিল এমনিতে নিরাপদ। এটি খেলে গর্ভধারণ আটকানো যায়। তবে ঘন ঘন বা নিয়মিত ব্যবহার করলে হরমোনাল সমস্যা, মাসিকের অনিয়ম, মাথাব্যথা, তলপেট ব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। লিভার, হরমোনজনিত রোগ বা দীর্ঘমেয়াদী অসুখ থাকলে এটি গ্রহণ করা নিরাপদ হবে না। এছাড়া স্তন্যদানকালীন সময়ে ইমকন ব্যবহার এড়ানো ভালো।
Emcon খেয়ে Period দেরিতে হচ্ছে কেন?
ইমকন খেয়ে পিরিয়ড দেরিতে হওয়া একেবারেই স্বাভাবিক বিষয়। সবার যে দেরিতে হবে বিষয়টা এমন নয়, তবে হতেই পারে। এক্ষেত্রে ৫ থেকে ৭ দিন দেরি হওয়া স্বাভাবিক হিসেবেই ধরা হয়। যদি পিরিয়ডের নির্ধারিত তারিখের ১০ দিনের বেশি দেরি হয় তাহলে অবশ্যই চিন্তার কারণ রয়েছে। এছাড়া ২০ থেকে ২৫ দিন পার হয়ে গেলে ডাক্তার দেখাতে হবে।
Emcon খাওয়ার পর Bleeding হয় কেন?
ইমকন খাওয়ার পর জরায়ুর লাইনিং পাতলা হয়ে যায়, ফলে হালকা রক্তক্ষরণ বা সাদাস্রাব দেখা দিতে পারে। পিলের হরমোন মাসিকের চক্রকে সাময়িকভাবে প্রভাবিত করে। তাই কখনো মাসিক আগেই শুরু হতে পারে, কখনো দেরিতে। কিছু মহিলার শরীর হরমোনের পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে সময় নেয়। ফলে হালকা রক্তপাত দেখা দেয়।
Emcon খাওয়ার পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ হলে কী করবো?
Emcon খাওয়ার পর যদি প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ আসে তাহলে কিছুই করার নেই কারণ আপনি অলরেডি গর্ভধারণ করে ফেলেছেন। সম্ভবত আপনি সঠিক সময়সীমার মধ্যে ঔষধটি খাননি, অথবা খাওয়ার পর বমি হয়েছিলো তখন আপনি আরেকটি পিল গ্রহণ করেননি। এজন্যই পিল খাওয়ার পরও গর্ভধারণ করেছেন। এক্ষেত্রে আপনি যদি একেবারেই বাচ্চা জন্ম দিতে না চান তাহলে অন্য ঔষধ খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভপাত ঘটাতে পারেন অথবা বাচ্চাটি জন্ম দানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেন। তবে গর্ভপাতের বিষয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।