ইমার্জেন্সি পিল খেলে সন্তান হবে না? জানুন অজানা বিষয়গুলো

ইমার্জেন্সি পিল যা অরক্ষিত বা অনিরাপদ সহবাসের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যবহার করলে গর্ভে সন্তান আসার সম্ভাবনা প্রায় থাকে না বললেই চলে। বিবাহিত বা অবিবাহিত অনেকেই সহবাসের পর ইমার্জেন্সি পিল গ্রহণ করে থাকেন যাতে সন্তান ধারনের কোন সম্ভাবনা তৈরি না হয়। তাহলে ইমার্জেন্সি পিল খেলে সন্তান হবে না? যৌন সম্পর্কের পর নারীরা যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি ইমার্জেন্সি পিল খান তাহলে তাঁরা গর্ভধারণ করবেন না। তবে ভবিষ্যতে সন্তান ধারনে ইমার্জেন্সি পিল কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।  

তবে, বারবার বা অতিরিক্ত সেবন শরীরে সাময়িক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলো শুধু অনিরাপদ সহবাস কিংবা কোন দুর্ঘটনায় পড়লে মানুষ ব্যবহার করে থাকেন। বর্তমানে বাজারে নানা ধরনের ইমার্জেন্সি পিল পাওয়া যায়, আর প্রতিটির সেবন পদ্ধতি ও নির্দেশনা আলাদা। তাই যেকোনো পিল ব্যবহারের আগে এর সঠিক নিয়ম জানা জরুরি।

আরও পড়ুনঃ কত দিন পর ইমার্জেন্সি পিল কাজ করে?

ইমার্জেন্সি পিল কি স্থায়ীভাবে গর্ভধারণ রোধ করে নাকি সাময়িকভাবে কাজ করে?

ইমার্জেন্সি পিল হলো এমন একটি ওষুধ যা শুধু জরুরি পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে গর্ভধারণ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। এটি স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় নয়। অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের পর নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এই পিল সেবন করলে তা কার্যকর হয়। এর কার্যপ্রক্রিয়ায় মূলত ডিম্বস্ফোটন দেরি করানো, শুক্রাণুর সাথে ডিম্বাণুর মিলন ঠেকানো বা নিষিক্ত ডিম্বাণুকে গর্ভাশয়ে স্থাপিত হতে বাধা দেওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকে।

তবে এ বিষয়টি মনে রাখা জরুরি যে, ইমার্জেন্সি পিল শুধুমাত্র সাময়িক ব্যবহারের জন্য। নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণের বিকল্প হিসেবে এটি ব্যবহার করা যায় না। অনেক সময় এই ওষুধ খাওয়ার পর অস্থায়ী হরমোনজনিত প্রভাব দেখা দিতে পারে, যেমন মাসিকের চক্রে সামান্য পরিবর্তন বা শারীরিক অস্বস্তি। কিন্তু এসব প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী নয় এবং ভবিষ্যতে প্রজনন ক্ষমতায় স্থায়ী কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না।

ইমার্জেন্সি পিল খেলে কি ভবিষ্যতে সন্তান ধারণে সমস্যা হতে পারে?

সাধারণভাবে, ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে সন্তান ধারণের ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এই পিল মূলত হরমোনের ওপর সাময়িক প্রভাব ফেলে, যার কারণে শরীরে অস্থায়ী পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে পিরিয়ড কিছুদিনের জন্য অনিয়মিত হতে পারে। এছাড়া সাময়িক শারীরিক অস্বস্তির মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে এসব প্রভাব সাধারণত অল্প সময়ের জন্য থাকে এবং কয়েকদিনের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

যদি ইমার্জেন্সি পিল অতিরিক্ত বা ঘন ঘন নেওয়া হয়, তবে শরীরের হরমোনের স্বাভাবিক ছন্দ সাময়িকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে। আপনি যদি নিয়মানুযায়ী এই পিল গ্রহণ করেন তাহলে শুধু বর্তমানেই এটি গর্ভধারণ থেকে বিরত রাখবে আপনাকে। ভবিষ্যতে এটি আপনার উপর কোন প্রভাব ফেলবে না।  

ইমার্জেন্সি পিল খাওয়া সত্ত্বেও কি সন্তান হয়? 

when to take emergency pill

যদি পিল নির্ধারিত সময়ের বাইরে খাওয়া হয়, তবে এটি গর্ভধারণ প্রতিরোধ করতে কম কার্যকর হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে পিল খাওয়ার পরও সন্তান ধারণ হতে পারে। যদি ডিম্বস্ফোটন ইতিমধ্যেই হয়ে থাকে, অর্থাৎ ডিম্বাণু শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে নিষিক্ত হয়ে যায়, তাহলে পিল গর্ভধারণ রোধ করতে পারবে না। 

এছাড়া কিছু ওষুধ পিলের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। স্বাস্থ্যগত সমস্যা বা হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে ও পিল কম কার্যকর হতে পারে। পিল খাওয়ার পর অনেকেরই বমি হয়, এর ফলে পিলের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। 

আপনি ভাবতে পারেন যে আমিতো পিল খেয়েছি তাহলে কেন এটি কাজ করলো না? কারণ আপনি বমির বিষয়টি খেয়ালই করেননি। যদি পিল সেবনের ১/২ ঘণ্টার মধ্যে বমি হয়ে যায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে আরেকটি পিল খেয়ে নিতে হবে, নতুবা পিল খাওয়ার আর না খাওয়ার একই কথা। 

ইমার্জেন্সি পিলের কার্যকারিতা আসলে কতদিন পর্যন্ত থাকে?

ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার কার্যকারিতা মূলত পিল গ্রহণের সময়ের ওপর নির্ভর করে। যদি যৌন সম্পর্কের পর ১২–২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিল সেবন করা হয়, তবে এটি প্রায় ৯৫% কার্যকর। অর্থাৎ এই সময়ে খেলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা খুব কমে যায়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণভাবে ইমার্জেন্সি পিল প্রায় ৫০–৮৫% ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। এর প্রধান কারণ হলো নারীর শরীরের ওভুলেশন বা ডিম্বস্ফোটনের সময়।

যদি যৌন সম্পর্ক এমন সময় ঘটে, যখন নারীর ডিম্বাশয় ইতিমধ্যেই ডিম্বাণু নিঃসরণ করেছে, তখন পিলের কার্যকারিতা অনেকটা কমে যায়। সাধারণত মাসিক চক্রের প্রায় পরবর্তী মাসিক শুরু হওয়ার ১৪ দিন আগে ওভুলেশন ঘটে। অর্থাৎ ওই সময়ের মধ্যে পিল গ্রহণ করলে গর্ভধারণ প্রতিরোধে কার্যকারিতা সীমিত হতে পারে।

FAQs

বারবার ইমার্জেন্সি পিল খাওয়া কি প্রজনন ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে?

বারবার ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার ফলে প্রজনন ক্ষমতা কমে যায় না, তবে কিছু সাময়িক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে পিরিয়ডের ক্ষেত্রে। ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার একটি নির্ধারিত সীমা আছে যে বছরে বা মাসে আপনি এই কয়টি খেতে পারবেন। এর বেশি খাওয়ার উচিৎ নয়। আসলে প্রজনন ক্ষমতা অনেক কিছুর উপরই নির্ভর করে। ইমার্জেন্সি পিল প্রজনন ক্ষমতার উপর সরাসরি প্রভাব না ফেললেও এটি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এর ফলে ভবিষ্যতে সন্তান ধারণে কোন বিলম্ব হলেও হতে পারে। 

গর্ভধারণ ইতিমধ্যেই হলে ইমার্জেন্সি পিল কি সেটি বন্ধ করতে পারে?

না, ইমার্জেন্সি পিল গর্ভধারণ ইতিমধ্যেই হলে সেটি বন্ধ করতে পারে না। এটি শুধুমাত্র গর্ভধারণ রোধ করার জন্য কার্যকর, অর্থাৎ পিল খাওয়ার সময় যদি ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়ে গর্ভাশয়ে বসে যায় বা গর্ভধারণ শুরু হয়ে যায়, তাহলে পিল আর কোন কাজে লাগবে না। তাই গর্ভধারণ না করতে চাইলে যৌন সম্পর্কের পরই এটি খেয়ে নিন। একবার ডিম্বাণু শুক্রাণু মিলে গেলে আর কিছু করার থাকবে না। 

জরুরি গর্ভনিরোধক খাবার বড়ি কীভাবে খেলে বাচ্চা হবে না? 

ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার ক্ষেত্রে সময় এবং পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত খালি পেটে বা কিছু খাওয়ার পরপরই, বা ঘুমানোর আগে পিলটি নেওয়া যায়। এতে হজম ও শোষণ ভালো হয় এবং পিল দ্রুত কার্যকর হয়। পিলটি সঠিকভাবে কার্যকর করতে, অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের পর ১২ ঘণ্টার ভিতর খাওয়া সবচেয়ে ভালো। এটি গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ হারে কমায়। যদিও কিছু পিল ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে, তবুও কখনোই ৭২ ঘণ্টার পরে পিল গ্রহণ করা উচিত নয়, কারণ দেরিতে খাওয়ার ফলে কার্যকারিতা অনেক কমে যায়।

Author

  • ডাঃ তানহা একজন নিবেদিতপ্রাণ মেডিসিন ও গাইনী বিশেষজ্ঞ, যিনি বর্তমানে একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। অভ্যন্তরীণ রোগ ও নারীস্বাস্থ্য বিষয়ে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তিনি নারীদের স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সঠিক ও প্রমাণভিত্তিক তথ্য প্রচারে বিশ্বাসী। Emergencypillbd.com-এ তিনি নিয়মিতভাবে প্রেগন্যান্সি, পিরিয়ড, ইমার্জেন্সি পিল এবং নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা শেয়ার করে থাকেন, যা নারীদের সুস্থ জীবনযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

Leave a Comment