ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পর বমি হলে যা করবেনঃ জরুরি নির্দেশনা

ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পর বমি বমি ভাব বা বমি হওয়াটা বেশ স্বাভাবিক একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। ইমার্জেন্সি পিল উচ্চ মাত্রার হরমোন ধারণ করে, যা শরীরে হরমোনের ভারসাম্যে দ্রুত পরিবর্তন ঘটায়। এই হরমোনের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণেই বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। কেউ কেউ বমি করেই ফেলেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সাময়িক হয় এবং কিছু দিনের মধ্যেই চলে যায়। 

তাহলে ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পর বমি হলে কি করবেন? অবশ্যই এক্ষেত্রে কিছু করণীয় আছে। বমি হলে তো শরীরে দুর্বলতা আসে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পিল কাজ নাও করতে পারে। এজন্য জেনে নেয়া ভালো যে বমি হলে বা বমি ভাব হলে কি করা উচিৎ। আজকের আর্টিকেল এ আমরা সেটাই আলোচনা করতে চলেছি। 

আরও পড়ুনঃ ইমার্জেন্সি পিল মাসে কতোবার খাওয়া যায়?

ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পর বমি হলে যা করবেন

যদি পিল খাওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে বমি হয়ে যায়, তবে যত দ্রুত সম্ভব আরেকটি পিল খেয়ে নিন। যদি বমি হওয়ার কারণে পিলটি শরীরে কাজ করেনি বলে মনে হয়, তবে পরবর্তী পিল খাওয়ার সময় সতর্ক থাকুন। এক্ষেত্রে ফার্মাসিস্ট এর পরামর্শ নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। 

যদি ২ ঘণ্টা পরে বমি হয়, তবে সা নতুন করে পিল খাওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ তখন ওষুধ অলরেডি শরীরে কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে আরেকটি কথা মনে রাখা জরুরী আপনার যদি সাধারণত পিল খাওয়ার পর রেগুলার বমি হয়, তাহলে সম্ভবত এই পদ্ধতিটি আপনার জন্য উপযুক্ত নয়; আপনাকে অন্য কোন উপায় অবলম্বন করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। 

বমি হলে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে, তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। এরপরও বমি বমি ভাব থাকলে হালকা খাবার খান কারণ বেশি খেলে বমি হয়ে যেতে পারে আবারও। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে।এছাড়া ঠান্ডা পানীয় পান করুন কারণ গরম পানীয় বমি ভাব বাড়াতে পারে। খাওয়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন। যদি বমি ভাব বা বমি বেশি হয়, তাহলে এই বিষয়ে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা ভালো। 

ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পর বমি হলে তা অবহেলা করা যাবে না। পিল খাওয়ার সময় ও বমির সময়ের মধ্যকার ব্যবধান বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। সাথে সাথে বা ২ ঘণ্টার মধ্যে বমি হয়ে গেলে আরেকটি পিল গ্রহণ করতে হবে।  

কিভাবে ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পর বমি হওয়ার সম্ভাবনা কমানো যায়?

ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পর বমি হওয়া বা বমি ভাব হওয়া অস্বাভাবিক কিছুনা, বরং এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে আপনারা চাইলেই বমি হওয়ার সম্ভাবনাকে কমিয়ে আনতে পারেন যেহেতু বমি হলে পিলের কার্যকারিতা সেভাবে থাকেনা বলাই চলে। এজন্য বমি ভাব বা ভমি হবার প্রবণতা কমিয়ে আনাই ভালো। এক্ষেত্রে কয়েকটি কাজ করা যেতে পারেঃ

  • পিল খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে হালকা খাবার খেয়ে নিন। 
  • অতিরিক্ত ভারী, তৈলাক্ত বা মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো বমি বমি ভাব বাড়াতে পারে।
  • পিল খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ বসে বা শুয়ে বিশ্রাম নিলে বমিভাব কমে।
  • পিল গ্রহণের পূর্বে ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টের পরামর্শ নিয়ে বমি বমি ভাবের ওষুধ খেয়ে নিতে পারেন।
  • পিল খাওয়ার আগে বা পরে চা, কফি পান করা থেকে বিরত থাকুন। 
  • পিল খাওয়ার পর মাথা ঘোরা বা বমি বমি লাগলে ধীরে ধীরে চলাফেরা করুন। 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন তবে অল্প অল্প করে পান করবেন কারণ একবারে বেশি খেলে পুনরায় বমি ভাব আসবে। 

ইমার্জেন্সি পিল খেয়ে বমি হওয়ার পরে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া কি প্রয়োজন?

emergency pill 2nd dose

ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পর বমি হওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন কিনা, তা নির্ভর করে বমি হওয়ার সময়ের ওপর। যদি সাথে সাথে বমি হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবার প্রয়োজন নেই। এছাড়া যদি পিল গ্রহণের ২ ঘণ্টা পরেও বমি তাহলেও উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। যদি আপনার লিভার, কিডনি বা অন্য কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে এবং আপনি ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পর বমি বা অন্য কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করেন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুনঃ ইমার্জেন্সি পিল ইসলামে হারাম নাকি হালাল?

FAQ

ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার কতক্ষণ পর বমি হলে তা কার্যকারিতা হারায়?

সাধারণত পিল খাওয়ার ২ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে বমি হলে পিলটি তাঁর কার্যকারিতা হারাতে পারে। এক্ষেত্রে গর্ভধারণ রোধ করা সম্ভব হয়না এটির পক্ষে। খুব বেশি বমি হলে ঔষধটি বমির সাথে বের হয়েও আসতে পারে। কাজেই, যদি আপনার পিল খাওয়ার এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বমি হয়ে যায় তাহলে আপনার গর্ভবতী হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ অবস্থায় চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারেন। 

ইমার্জেন্সি পিল খেয়ে বমি হওয়া কি স্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া?

অবশ্যই! পিল খাওয়ার পর শুধু বমি বা বমি ভাব না, এর সাথে মাথা ব্যাথা, পেট ব্যাথা ইত্যাদি উপসর্গও দেখা দিতে পারে। এগুলোর সবই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, এগুলোতে ভয় পাবার কিছু নেই। তবে যদি অতিরিক্ত পিল খাওয়ার কারণে এমনটা হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে কারণ বেশি পিল খাওয়ার কারণে এই উপসর্গ গুলো দীর্ঘ সমস্যায় পরিণত হয়। 

বমি হওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ নিলে কি তা নিরাপদ?

অনেকক্ষেত্রেই নিরাপদ! পিল খাওয়ার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই যদি বমি হয়ে যায়, তাহলে শরীর পিলের পুরো ডোজ শোষণ করতে পারে না। এর ফলে পিলটির কার্যকারিতা মারাত্মকভাবে কমে যায়, এবং গর্ভধারণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই অবস্থায়, পিলটির কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করতে দ্বিতীয় ডোজের প্রয়োজন হয়। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ নিলে সাধারণত কোন দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়না তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বাড়তে পারে।

ইমার্জেন্সি পিল গ্রহণের পর কী লক্ষণ দেখে বুঝব যে এটি কাজ করছে?

অনেক সময় শরীরে কোনো দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া ছাড়াও পিল ঠিকমতো কাজ করে। ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পর আপনার পরবর্তী মাসিক সাধারণত নির্ধারিত সময়েই আসবে, অথবা এটি সাত দিন পর্যন্ত দেরিতেও হতে পারে। কিছু নারীর ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পর হালকা রক্তপাত বা স্পটিং দেখা দিতে পারে। এটির অর্থ হতে পারে যে পিলটি শরীরে কাজ করা শুরু করেছে। অন্যদিকে যদি আপনার মাসিক নির্ধারিত সময়ের বেশি দেরি হয় বা একেবারেই না হয়, তাহলে বুঝতে হবে পিলটি হয়তো কাজ করেনি। এমন হলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হবে। 

Author

  • ডাঃ তানহা একজন নিবেদিতপ্রাণ মেডিসিন ও গাইনী বিশেষজ্ঞ, যিনি বর্তমানে একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। অভ্যন্তরীণ রোগ ও নারীস্বাস্থ্য বিষয়ে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তিনি নারীদের স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সঠিক ও প্রমাণভিত্তিক তথ্য প্রচারে বিশ্বাসী। Emergencypillbd.com-এ তিনি নিয়মিতভাবে প্রেগন্যান্সি, পিরিয়ড, ইমার্জেন্সি পিল এবং নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা শেয়ার করে থাকেন, যা নারীদের সুস্থ জীবনযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

Leave a Comment