গর্ভাবস্থায় খাবারে অরুচি হওয়া স্বাভাবিক কি? কি মনে হয় আপনাদের? আসলে গর্ভাবস্থায় অনেক সময় দেখা যায়, কিছু খাবারের প্রতি হঠাৎ করেই অনীহা বা অরুচি তৈরি হয়। এতে করে মায়েরা প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার ঠিকমতো খেতে পারেন না, যা শারীরিক দুর্বলতা বা অপুষ্টির কারণ হতে পারে। তবে এমন অরুচি থাকা মানেই যে সবাই বিপদে পড়বেন তা নয়। অনেক গর্ভবতী নারীই এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যান, আবার কারও ক্ষেত্রে এটি একেবারেই হয় না।
এই সময় অপ্রয়োজনীয় দুশ্চিন্তার বদলে সচেতনভাবে খাবার বাছাই করাই সবচেয়ে ভালো উপায়। এমন খাবার নির্বাচন করুন যা খেতে আরামদায়ক হলেও পুষ্টিগুণে ভরপুর। সঠিকভাবে খাদ্য পরিকল্পনা করতে পারলে অরুচির মাঝেও শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। চলুন এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে আসা যাক।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা কি স্বাভাবিক?
গর্ভাবস্থায় কোন খাবারে অরুচি হয়?
গর্ভাবস্থায় সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো সময় থেকে কোনো খাবারের প্রতি অরুচি শুরু হয় না। যেহেতু অরুচির কোনো নির্দিষ্ট ধরন নেই সেহেতু আপনার যেকোনো খাবারের প্রতিই অরুচি সৃষ্টি হতে পারে। তবে সাধারণত মাছ, মাংস, পেঁয়াজ ও ডিমের প্রতি অরুচি বেশি দেখা যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে কিছুটা কড়া গন্ধযুক্ত যেকোনো খাবারে বেশি অরুচি হয়ে থাকে। একেকজনের ক্ষেত্রে একেকসময়ে ও একেক খাবারের প্রতি এই লক্ষণ দেখা দেয়। আবার কারও কারও এধরনের কোনো লক্ষণই প্রকাশ পায় না। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব ও বমির সাথে বিভিন্ন খাবারে অরুচি হওয়ার সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে।
গর্ভাবস্থায় খাবারে অরুচি কেন হয়?
গর্ভাবস্থায় খাবারে অরুচি হওয়া একটি স্বাভাবিক এবং সাধারণ সমস্যা, যা বেশিরভাগ গর্ভবতী নারীই এ যাত্রার কোনো না কোনো সময় অনুভব করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। যাতে আপনারা অযথা ভয় না পান সেজন্য কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করছি।
-
হরমোনের পরিবর্তন জনিত কারণ
গর্ভাবস্থায় শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মতো হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন অনেক সময় স্বাদের অনুভূতি ও গন্ধের স্বাভাবিক ধরনকে প্রভাবিত করে। এর ফলে পরিচিত খাবার গুলোতেও অরুচি চলে আসে।
-
বমি বমি ভাব
প্রথম ত্রৈমাসিকে অনেক নারীরই বমিভাব অনুভব করেন। এই অবস্থায় মুখে স্বাদ নষ্ট হয়ে যায় এবং খাবার গ্রহণে অনীহা তৈরি হয়। তবে সবার এমন হয়না। কারো কারো ক্ষুধা বেড়ে যায়। কোন টাই চিন্তার কিছু নেই।
-
হজম সমস্যা
গর্ভাবস্থায় হজমের গতি কিছুটা কমে যেতে পারে। এতে পেটে গ্যাস, বা অস্বস্তি তৈরি হয়। এর ফলে খাবারে অরুচি সৃষ্টি করতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই গ্যাস হতে থাকলে সাধারণ খাবারেই অরুচি আসতে পারে।
-
গন্ধ সংবেদনশীল
গর্ভকালীন সময়ে নারীরা অনেক সময় বিভিন্ন গন্ধের প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে ওঠেন। এমনকি সাধারণ রান্নার গন্ধও অনেকের কাছে অসহ্য মনে হতে পারে, যার ফলে খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়। খাবারের রুচি আসে অনেকটা গন্ধ থেকে। কাজেই গন্ধই যদি সহ্য না হয় তাহলে খাবারও মুখে রুচবে না।
-
মানসিক চাপ
গর্ভাবস্থায় মানসিক উদ্বেগ বা টেনশন থাকলেও অনেক নারীর খাবারে অরুচি তৈরি হয়। তবে সাধারণত এটি কিছু সময় পর আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। এ সময় যতটা সম্ভব মানসিক চাপ ও ভয়মুক্ত থাকতে হবে।
গর্ভাবস্থায় খাবারে অরুচি হলে কী করবেন?
এই অবস্থায় খুব বেশি দুশ্চিন্তা না করে ধীরে ধীরে নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া বুঝে খাবার গ্রহণ করা উচিত। হালকা ও সহজপাচ্য খাবার যেমন খিচুড়ি, ভাত-ডাল, স্যুপ, ফলমূল ইত্যাদি বেছে নিতে পারেন। একবারে বেশি পরিমাণে না খেয়ে দিনে ৫ থেকে ৬ বার অল্প অল্প করে খেলে পেট ভরার পাশাপাশি অরুচিও কিছুটা কমে যায়। যদি কোনো খাবারের গন্ধ সহ্য না হয়, তবে তা ঠান্ডা অবস্থায় খাওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে, কারণ ঠান্ডা খাবারে গন্ধ কম থাকে।
খাবারে পুদিনা, আদা বা লেবুর রস যোগ করেও রুচি বাড়ানো সম্ভব। গর্ভাবস্থায় খাবারে অরুচির ফলে গর্ভবতী মায়েরা যদি দিনের পর দিন কম কম খেতে থাকেন তাহলে একটা সময় শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিবে। তাই যে খাবার খেতে রুচি হয় সেটিই খেতে হবে আর এখানে উল্লেখ করা নিয়ম গুলো মানলেই হবে।
FAQs
গর্ভাবস্থার কোন সময়ে সাধারণত খাবারে অরুচি আসে?
এটি সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে বেশি দেখা যায় এবং পরে ধীরে ধীরে কমে যায়। তবে কেউ কেউ পুরো গর্ভকালেই খাবারের প্রতি অনীহা অনুভব করতে পারেন। এ সময় পর্যাপ্ত পুষ্টিকর ও হালকা খাবার বেছে নেওয়া উচিত এবং দিনে বারবার অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়া সাহায্য করতে পারে।
কখন খাবারে অরুচিকে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ধরা উচিত?
যদি আপনার খাবারে অরুচি এতটাই তীব্র হয় যে আপনি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন হারাতে থাকেন, তবে নিঃসন্দেহে চিন্তার কারণ রয়েছে। গর্ভাবস্থায় সামান্য ওজন হ্রাস স্বাভাবিক হতে পারে, তবে তা যেন অতিরিক্ত না হয়। যদি খাবারে অরুচি খুব বেশি হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অরুচি থাকলে কি গর্ভের শিশুর পুষ্টির ঘাটতি হয়?
হ্যাঁ, যদি গর্ভাবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে খাবারে অরুচি থাকে এবং তার ফলে মায়ের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান না পৌঁছায়, তাহলে গর্ভের শিশুর পুষ্টির ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অপুষ্টির কারণে শিশুর কম ওজন, প্রিম্যাচিউর বার্থ, জন্মগত ত্রুটি এবং ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যগত জটিলতার ঝুঁকি বাড়তে পারে। তবে অল্প কিছুদিনের হালকা অরুচি হলে সাধারণত শিশুর বড় কোনো ক্ষতি হয় না, কারণ শরীরে আগে থেকেই থাকা পুষ্টি থেকেও কিছুটা শিশুর প্রয়োজন মেটানো হয়।
সব গর্ভবতী নারীর কি অরুচির সমস্যা হয়?
না, সবার ক্ষেত্রে যে খাবারে অরুচি হয় এমন না। কারো কারো খাবারে রুচি আরও বেড়ে যায় এবং তাঁরা নিয়মিত সব খাবারই গ্রহণ করে থাকেন। এর অর্থ হলো, আপনার শরীর হরমোনের পরিবর্তনগুলো ভালোভাবে সামলে নিচ্ছে। গর্ভাবস্থায় যদি আপনার খাবারে অরুচি না হয় তাহলে এটি খুবই ভালো কারণ আপনি প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণের মাধ্যমে নিজের ও বাচ্চার সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারবেন।
গর্ভাবস্থায় অরুচি কত দিন পর্যন্ত থাকতে পারে?
এটি নির্দিষ্ট করে বলা যায় না কারণ সবার ক্ষেত্রে অরুচি একই সময়ে বা একইভাবে হয়না। কারো কারো প্রথম তিনমাস পর্যন্ত এমন অরুচি ভাব থাকতে পারে এবং তারপর ঠিক হয়ে যায়। আবার কারো ক্ষেত্রে পুরো গর্ভকালীন সময়টাই অরুচিতে কেটে যায়। তবে অরুচির কারণে যেনো গর্ভবতী মা প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত না হন। যে খাবারে রুচি লাগে সেটাই খেতে হবে, একেবারে না খেয়ে থাকা যাবে না কখনও।