আই-পিল ডিএস ১.৫ মি.গ্রা. ট্যাবলেট হলো একটি জরুরি গর্ভনিরোধক পিল, যা মহিলাদের অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ থেকে সুরক্ষা দিতে ব্যবহৃত হয়। এতে প্রোজেস্টিন নামক হরমোন থাকে যা গর্ভধারণের ঝুঁকি কমায়। সাধারণত এটি তখন ব্যবহার করা হয়, যখন নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে মনে রাখতে হবে, আই-পিল মূলত জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে; এটি দীর্ঘমেয়াদী গর্ভনিরোধক হিসেবে ব্যবহার করার জন্য উপযুক্ত নয়।
এই ট্যাবলেট সম্পর্কে আরও অনেক কথাই রয়েছে যেগুলো হয়তো আপনাদের অজানা। এই পিল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে যদি আপনারা না জানেন তাহলে অবশ্যই এই লেখাটি প্রথম থেকে শেষ অবধি আপনাদের পড়া উচিত। শুধু খাওয়ার নিয়মই নয়, বরং এই পিল খেলে কি ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় তাও আমরা তুলে ধরবো এখানে। আশা করছি, এই সম্বন্ধে সমস্ত তথ্যই আপনারা এখান থেকে পেয়ে যাবেন।
আরও পড়ুনঃ মারভেলন পিল খাওয়ার নিয়ম
i-Pill পিল কিভাবে কাজ করে?
আই-পিলের মূল উপাদান লেভোনরজেস্ট্রেল, যা প্রোজেস্টেরনের একটি সিনথেটিক রূপ। এটি শরীরে উচ্চমাত্রার প্রোজেস্টেরন বজায় রেখে জরুরি গর্ভনিরোধক হিসেবে কাজ করে। এর ফলে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের হতে বাধা দেয়, অর্থাৎ ওভুলেশন বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে এটি শুক্রাণুর সঙ্গে ডিম্বাণুর মিলন প্রতিরোধ করে এবং গর্ভাশয়ের আস্তরণে এমন পরিবর্তন ঘটায়, যাতে নিষিক্ত ডিম্বাণু গর্ভাশয়ে বসতে না পারে। এভাবে আই-পিল মহিলাদের অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ এড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
i-Pill পিল খাওয়ার নিয়মঃ
i-Pill কেবলমাত্র জরুরি গর্ভনিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়, নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য নয়। এটি খাওয়ার একটি নির্ধারিত নিয়ম রয়েছে, আপনাকে অবশ্যই সেই নিয়ম অনুযায়ী খেতে হবে। নিয়মটি দেখে নিনঃ
- ১ বার একটিমাত্র ট্যাবলেটই খেতে হবে।
- অরক্ষিত যৌনমিলনের পর যত দ্রুত সম্ভব, বিশেষ করে প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিলটি খাওয়া উচিত।
- সর্বোচ্চ কার্যকারিতার জন্য অবশ্যই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এটি সেবন করতে হবে।
- খালি পেটে বা খাবার খাওয়ার পর – যেকোনো সময় এটি খাওয়া যায়।
- পিল খাওয়ার পর যদি ২ ঘণ্টার মধ্যে বমি হয়, তাহলে আরেকটি ট্যাবলেট খাওয়া প্রয়োজন হতে পারে।
- এই পিল খাওয়ার পরবর্তী মাসিক পর্যন্ত অতিরিক্ত সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা ব্যবহার করা উত্তম।
যদি কোনো কারণে একটি ডোজ মিস হয়ে যায়, তবে এটি অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ প্রতিরোধে কার্যকর নাও হতে পারে। তাই এমন পরিস্থিতিতে দেরি না করে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। আবার, যদি মনে হয় আপনি এই পিল প্রয়োজনের তুলনায় বেশি গ্রহণ করেছেন, তাহলেও অবিলম্বে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
i-Pill কত ঘণ্টার মধ্যে খেতে হবে?
লেভোনর্জেস্ট্রেল উপাদানযুক্ত ইমার্জেন্সি পিলগুলো অরক্ষিত যৌন সম্পর্কের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খেলে সবচেয়ে কার্যকর হয়। এই সময়ের মধ্যে প্রথম ২৪ ঘণ্টায় এর কার্যকারিতা সর্বোচ্চ থাকে। আই পিল হচ্ছে সেই জাতীয় পিল যা আপনাকে অবশ্যই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খেয়ে নিতে হবে। আপনি যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খান তাহলে আরও ভালো হয়।
i-Pill পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
আই-পিল গ্রহণের পর সাধারণত যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো দেখা দিতে পারে। অনেকেই এগুলো প্রথমে বুঝতে না পেরে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো নিম্নরূপঃ
- কিছু মহিলার মধ্যে বমি ভাব বা বমি অনুভূত হতে পারে। এটি সাধারণত অস্থায়ী হয় এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
- মাথাব্যথা প্রায়শই দেখা যায়। এটি সাধারণত হালকা ধরনের হয় এবং কোনো বিশেষ চিকিৎসা ছাড়াই নিজেই কমে যায়।
- স্তনে কোমলতা বা সংবেদনশীলতা অনুভূত হতে পারে, যা কয়েক দিনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে শেষ হয়ে যায়।
- আই-পিল ব্যবহারের ফলে কিছু মহিলার মধ্যে মনোসংযোগ বা মেজাজে পরিবর্তন, যোনি স্রাবের মাত্রা বা ধরনে পরিবর্তন, এবং যৌন ইচ্ছার হ্রাস দেখা দিতে পারে।
- জন্মনিয়ন্ত্রণ ট্যাবলেট গ্রহণের কারণে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে বা কখনও কখনও কয়েকদিনের জন্য মাসিক বন্ধও হতে পারে।
এটি মনে রাখা জরুরি যে, এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সাধারণত স্বল্পস্থায়ী এবং গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে না। তবে, যদি কোনো গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে তা চিন্তার কারণ হতে পারে।
i-Pill কবে খাওয়া উচিত?
আই-পিল এমন একটি পিল যা একজন নারীকে যৌন সম্পর্কের পর যত দ্রুত সম্ভব খেতে হয়। একজন নারী হিসেবে যদি আপনি চান যে পরের দিন গ্রহণ করবেন সেটাও সম্ভব। তবে বেশিদিন দেরি করা উচিত নয় কারণ আই-পিল খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে এটি অবশ্যই ৩ দিনের মধ্যে খেতে হবে।
FAQ
i-Pill খাওয়ার পর bleeding হয়?
i-Pill খাওয়ার পর কিছু মহিলার মধ্যে রক্তপাত বা অস্বাভাবিক মাসিকস্রাব দেখা দিতে পারে। সাধারণত এটি হালকা এবং অস্থায়ী হয়। এই রক্তপাতকে মাসিক বলে মনে করা উচিত নয়। এটি কেবল হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘটে এবং আপনার পরবর্তী মাসিক স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আগে বা পরে শুরু হতে পারে। যদি রক্তপাত খুব বেশি হয়, অর্থাৎ একটি স্বাভাবিক মাসিকের মতো হয়, বা যদি এটি এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে কথা বলা উচিত।
i-Pill খেয়ে বমি হলে কী করবো?
যদি i-Pill খাওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে আপনার বমি হয়, তবে ধরে নিতে হবে যে পিলটি আপনার শরীর সম্পূর্ণভাবে শোষণ করতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে, পিলের সম্পূর্ণ কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য আপনাকে অবিলম্বে আরেকটি পিল খেতে হবে। আসলে পিল খাওয়ার পর অনেকেরই বমি হয়ে থাকে। এতে ভয়ের কিছু নেই। তবে যেহেতু আপনি ইমারজেন্সি পিল গ্রহণ করছেন সেহেতু খাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে বমি হয়ে গেলে এটি আসলে সেভাবে কাজ করে না। তাই সবথেকে ভালো হয় যদি অভিজ্ঞ কারো পরামর্শে আরেকটি পিল খেয়ে অতি দ্রুত।
i-Pill খেলে ভবিষ্যতে বাচ্চা হবে না?
না, i-Pill খাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে সন্তান হওয়ার ক্ষমতা প্রভাবিত হয় না। এটি শুধুমাত্র একটি জরুরি গর্ভনিরোধক পিল। পিলের উচ্চ মাত্রার হরমোন শরীরে কিছু সময়ের জন্য থাকে এবং দ্রুতই তা শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। একবার পিলের প্রভাব চলে গেলে, একজন নারীর প্রজনন ক্ষমতা আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। এর ফলে, ভবিষ্যতে তিনি যখনই গর্ভধারণের পরিকল্পনা করবেন, তখনই স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ করতে পারবেন।
i-Pill দাম কত?
i-Pill সাধারণত একটি ছোট, গোলাপী রঙের ট্যাবলেটের আকারে পাওয়া যায়। প্রতিটি প্যাকেটে শুধু একটিমাত্র ট্যাবলেট থাকে, যা জরুরি পরিস্থিতিতে একবারে গ্রহণ করা হয়। এটি ব্যবহারের জন্য খুবই সহজ এবং সুবিধাজনক। বাজারে i-Pill-এর মূল্য প্রায় ৭০ টাকা, যা অন্যান্য জরুরি গর্ভনিরোধক পদ্ধতির তুলনায় সাশ্রয়ী। এটি সহজলভ্য হওয়ায় মেয়েরা জরুরি মুহূর্তে দ্রুত প্রয়োগ করতে পারেন এবং অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণ এড়িয়ে চলতে পারেন।