পিরিয়ড কত বছর বয়সে শুরু হয়? পিরিয়ডের স্বাভাবিক সময়কাল কত?

প্রত্যেক কিশোরীর জীবনে পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব একটি প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ধাপ, যা তার শারীরিক পরিণতির ইঙ্গিত দেয়। তবে পিরিয়ড কত বছর বয়সে শুরু হয় এটা অনেকেরই প্রশ্ন থাকে। আসলে এটি ঠিক কোন বয়সে শুরু হবে, তা সবার ক্ষেত্রে এক রকম নয়। কারও ক্ষেত্রে এটি একটু আগে শুরু হতে পারে, আবার কারও ক্ষেত্রে একটু দেরিতে। 

পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক সুস্থতা ও পারিবারিক প্রভাব সব মিলিয়েই পিরিয়ড শুরুর বয়সে পার্থক্য দেখা যায়। তাই পিরিয়ড শুরু হওয়ার সময়কে নির্দিষ্ট কোনো বয়সে বেঁধে দেওয়া যায় না, এটি স্বাভাবিকভাবে ভিন্ন হতে পারে। তারপরও আজকের আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনাদেরকে যতটা সম্ভব পরিষ্কার ধারনা দিতে চেষ্টা করবো। পিরিয়ড দেরি বা তাড়াতাড়ি শুরু হলেও এর একটি সাধারণ সময়সীমা আছে এবং সেটি কী বা কেমন হওয়া উচিত সে ব্যাপারে আজ আমরা জানবো। 

আরও পড়ুনঃ প্রতিমাসে পিরিয়ড হওয়া জরুরি কিনা?

পিরিয়ডের স্বাভাবিক সময়কাল কত?

সাধারণত মেয়েদের প্রথম পিরিয়ড ১০ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে শুরু হয়। তবে শারীরিক গঠন, ফ্যাটের পরিমাণ ও শরীরের ওজনের ভিন্নতার কারণে এই বয়সে তারতম্য দেখা দিতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে পিরিয়ড একটু আগে বা পরে শুরু হওয়াও স্বাভাবিক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল শুরু হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। 

আগে যেখানে ১৪ থেকে ১৬ বছরকে গড় বয়স হিসেবে ধরা হতো, এখন মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়েদের ক্ষেত্রে সাধারণত বার বা তেরো বছর বয়সেই পিরিয়ড শুরু হচ্ছে, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এরও আগে হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাজ যত আধুনিক ও উন্নত হচ্ছে, ততই মেয়েদের ঋতুস্রাব শুরুর বয়স ধীরে ধীরে কমে আসছে। তবে কোনো মেয়ের নির্ধারিত বয়স পেরিয়ে গেলেও যদি পিরিয়ড শুরু না হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

কী কারণে কারও পিরিয়ড আগে বা পরে শুরু হতে পারে?

কারো পিরিয়ড আগে বা পরে শুরু হওয়ার পেছনে নানা ধরনের কারণ থাকতে পারে। বংশগত কারণ একটি বড় ভূমিকা রাখে। মা বা বোনের ঋতুস্রাব কোন বয়সে শুরু হয়েছিল, তা কন্যার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে। শরীরের ওজন ও ফ্যাটের পরিমাণও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শরীরে পর্যাপ্ত ফ্যাট জমে গেলে হরমোন নিঃসরণ দ্রুত ঘটে এবং ফলে পিরিয়ড আগে শুরু হতে পারে। 

আবার খুব কম ওজন বা অপুষ্টিজনিত কারণে দেরি হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টির ঘাটতি, ও কঠোর শারীরিক পরিশ্রমও ঋতুস্রাবের বয়সকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই পিরিয়ডের বয়স নির্দিষ্ট নয়; এটি শরীর, পরিবেশ ও জীবনযাত্রার উপর নির্ভর করে একেকজনের ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়ে থাকে।

পরিবেশ ও জীবনযাত্রা পিরিয়ডের বয়স নির্ধারণে কীভাবে ভূমিকা রাখে?

Impact of environment

পরিবেশ ও জীবনযাত্রা পিরিয়ড শুরু হওয়ার বয়স নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেসব মেয়েরা উন্নত ও সুষম খাদ্যাভ্যাসে বড় হয়, তাদের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দ্রুত সরবরাহ হয়, ফলে সাধারণত তাদের ঋতুস্রাব তুলনামূলকভাবে আগে শুরু হতে পারে। অন্যদিকে অপুষ্টি বা দারিদ্র্য এবং অসুস্থতার কারণে শরীরের প্রয়োজনীয় ওজন অর্জন করতে দেরি হলে পিরিয়ডও দেরিতে শুরু হতে পারে। এছাড়া জীবনযাত্রার ধরনও একটি বড় প্রভাব ফেলে।একইভাবে মানসিক চাপ, অতিরিক্ত শারীরিক ব্যায়াম, ঘুমের অভাব বা অনিয়মিত জীবনযাপন হরমোনের ভারসাম্যে প্রভাব ফেলে এবং পিরিয়ডের বয়স এগিয়ে বা পিছিয়ে দিতে পারে।

FAQs

যদি ১৪ বছরের পরও পিরিয়ড শুরু না হয়, তাহলে কী করা উচিত?

যদি কোনো মেয়ের ১৪ বছর বয়স পার হওয়ার পরও পিরিয়ড শুরু না হয়, তবে এটিকে অবহেলা করা উচিত নয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রথমেই অভিভাবকদের উচিত মেয়েটির সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা এবং শারীরিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা। যদি দেখা যায় যে ১৪/১৫ বছর পার হওয়ার পরও পিরিয়ড শুরু হয়নি, তবে দ্রুত একজন গাইনোকলজিস্ট বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক প্রয়োজন হলে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা ও হরমোন টেস্ট করে সঠিক কারণ নির্ণয় করতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারেন।

১১ বছর বয়সে কি পিরিয়ড হওয়া স্বাভাবিক?

হ্যাঁ, ১১ বছর বয়সে পিরিয়ড শুরু হওয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। সাধারণত মেয়েদের প্রথম পিরিয়ড ১০ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রে ৯ থেকে ১২ বছরের মধ্যেও এটি শুরু হতে পারে, যেটিকে স্বাভাবিক ধরা হয়। তাই ১১ বছর বয়সেও ঋতুস্রাব শুরু হলে চিন্তার কোনো কারণ নেই, বরং এটিকে স্বাভাবিক পরিসরের মধ্যেই পড়ে। এমনই যদি এর আগে শুরু হয় তাতেও কোন সমস্যা নেই।  

৮ বছরের আগেই কি পিরিয়ড শুরু হতে পারে? 

কিছু ক্ষেত্রে ৮ বছরের আগেই পিরিয়ড শুরু হতে পারে, যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে Precocious Puberty) বলা হয়। এটি অনেকক্ষেত্রেই স্বাভাবিক নয় এবং এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। অকাল মাসিক শুরু হলে মেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধি, হাড়ের বিকাশ ও মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়তে পারে। তাই যদি ৮ বছরের আগেই কোনো মেয়ের পিরিয়ড শুরু হয়, তবে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা জরুরি। 

কত বছর বয়সে পিরিয়ড হওয়া সবথেকে ভালো বলে মনে করা হয়?

এমন ধারণা প্রচলিত আছে যে মেয়েদের প্রথম পিরিয়ড শুরু হওয়ার বয়স এবং তাদের গড় আয়ুর মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। যেসব মেয়েদের মাসিক টিনএজ বয়সের শেষের দিকে শুরু হয়, তারা তুলনামূলকভাবে বেশি সময় বেঁচে থাকেন। মেয়েদের প্রথম মাসিক সাধারণত সর্বনিম্ন ১২ বছর বয়সে শুরু হতে পারে। তবে যাদের ক্ষেত্রে ১২ বছরের পর পিরিয়ড শুরু হয়, তাদের গড় আয়ু অনেক সময় অন্যদের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। 

পিরিয়ড দেরিতে শুরু হলে কি ভবিষ্যতে গর্ভধারণ করতে সমস্যা হয়? 

সাধারণত পিরিয়ড দেরিতে শুরু হওয়া মানে ভবিষ্যতে গর্ভধারণে সমস্যা হবে এমন নয়। অনেক মেয়ের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাব কিছু দেরিতে শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে নিয়মিত মাসিক চলে এবং তারা সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ করতে সক্ষম হয়। তবে যদি পিরিয়ডের দেরি হরমোনজনিত বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে ঘটে তাহলে তা গর্ভধারণে প্রভাব ফেলতে পারে। 

Author

  • ডাঃ তানহা একজন নিবেদিতপ্রাণ মেডিসিন ও গাইনী বিশেষজ্ঞ, যিনি বর্তমানে একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। অভ্যন্তরীণ রোগ ও নারীস্বাস্থ্য বিষয়ে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তিনি নারীদের স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সঠিক ও প্রমাণভিত্তিক তথ্য প্রচারে বিশ্বাসী। Emergencypillbd.com-এ তিনি নিয়মিতভাবে প্রেগন্যান্সি, পিরিয়ড, ইমার্জেন্সি পিল এবং নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা শেয়ার করে থাকেন, যা নারীদের সুস্থ জীবনযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

Leave a Comment