যারা বিভিন্ন ধরনের ইমার্জেন্সি পিলের নাম জানেন তাঁরা পিউলি পিলের নামও শুনে থাকবেন। পিউলি হলো এক ধরনের ইমার্জেন্সি পিল যা জরুরি অবস্থায় ব্যবহৃত হয়। যৌন সম্পর্কের পর অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এড়াতে অনেকেই এই পিল গ্রহণ করে থাকেন, বিশেষ করে যারা নিয়মিত পিল খান না বা যৌন সম্পর্কের সময় কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তবে যারা এটি এখনও ব্যবহার করেননি তাঁরা জানতে চেয়ে থাকেন যে Peuli এর কাজ কি।
প্রথমেই বলে রাখা ভালো যে এই পিলের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। সহজলভ্যতা, সাশ্রয়ী মূল্য এবং কার্যকারিতার কারণে পিউলি পিল মানুষের আস্থার জায়গা তৈরি করেছে। ফলে তুলনামূলকভাবে অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে এবং জনজীবনে এটি একটি পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে। তবে যতই জনপ্রিয়তা থাকুক, ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই Peuli পিল খাওয়ার নিয়ম ও দাম সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারনা রাখতে হবে। ইমার্জেন্সি পিল মানুষ খায় যাতে গর্ভধারণ না হয়, কিন্তু সঠিক নিয়ম না জানার ফলে এটি খাওয়ার পরও অনেকসময় কাজ হয় না। তাই আজ আমরা এই পিলটি সম্পর্কে আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিবো।
আরও পড়ুনঃ MM Kit কিসের ঔষধ, দাম ও খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
Peuli এর কাজ কি?
পিউলির প্রধান সক্রিয় উপাদান হলো উলিপ্রিস্টাল অ্যাসিটেট। এই উপাদান মূলত ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের হওয়ার প্রক্রিয়াকে দেরি করায় কিংবা সম্পূর্ণভাবে থামিয়ে দেয়। ফলে ডিম্বাণু নির্গত না হলে শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে নিষিক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে না, আর এতে গর্ভধারণের সম্ভাবনাও কার্যকরভাবে হ্রাস করে। তবে যদি ডিম্বস্ফোটন ঘটে যায়, তবুও পিউলি ভিন্নভাবে কাজ করে। এটি জরায়ুর ভেতরের আবরণে পরিবর্তন ঘটায়, যাতে নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর ভেতরে গিয়ে বসতে না পারে।
আমাদের দেশে এটি প্রেসক্রিপশন ছাড়াই সরাসরি ফার্মেসি থেকে কেনা যায়, ফলে সময়মতো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এটি আরও সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে। পিউলি পিল গ্রহণের ফলে ভবিষ্যতে সন্তানধারণের সক্ষমতার ওপর কোনো স্থায়ী প্রভাব পড়ে না। এটি নারীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করে না এবং ভবিষ্যতে গর্ভধারণে কোনো বাধা সৃষ্টি করে না।
Peuli পিল খাওয়ার নিয়মঃ
অরক্ষিত যৌনমিলনের পর যত দ্রুত সম্ভব পিউলি পিল সেবন করলে গর্ভধারণ প্রতিরোধের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে সর্বোচ্চ ১২০ ঘণ্টা পর্যন্ত এটি কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, নারীরা পিউলি পিল সঠিক নিয়ম না জেনেই সেবন শুরু করেন। এতে প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই জরুরি অবস্থায় এই পিল সেবনের আগে সঠিক ব্যবহারবিধি জানা অত্যন্ত জরুরিঃ
- অরক্ষিত যৌনমিলনের পর যত দ্রুত সম্ভব পিউলি পিল খাওয়া উচিত। দ্রুত খাওয়া হলে কার্যকারিতা বেশি হয়।
- একবারে ৩০ মি.গ্রা ট্যাবলেট খালি পেট বা ভরা পেটে, যেকোনো অবস্থায় সেবন করা যায়।
- যদি সেবনের ৩ ঘণ্টার মধ্যে বমি হয়, তবে ওষুধ শরীরে পুরোপুরি শোষিত হয় না। সে ক্ষেত্রে আরেকটি ট্যাবলেট খেতে হবে।
- এটি শরীরে প্রায় ৫ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে। তাই মিলনের ৫ দিনের মধ্যে খেলে গর্ভধারণ রোধ করতে সহায়ক হয়।
- পরবর্তী যৌনমিলনে অবশ্যই কনডম বা অন্য কোনো সুরক্ষিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
Peuli পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
পিউলি পিলের বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যেগুলো না জানার ফলে আপনি আতঙ্কিত হতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই ইমার্জেন্সি পিল খেলে কিছু side effects দেখা দেয়, তবে সব ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এক হবেনা। তাই আপনি যেটা গ্রহণ করছেন বা করতে চান সেটার সম্পর্কে জেনে রাখলে ভালো হয়। কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে পিউলি পিল খাওয়ার পর?
- মাথা হালকা ঘুরানো, ভারী লাগা বা ঝিমুনি অনুভূত হতে পারে।
- শরীরে সাময়িক ক্লান্তি বা শক্তির অভাব অনুভূত হতে পারে।
- কাজের মধ্যে মনোযোগ কমে যেতে পারে।
- মাসিকের সময় এবং পরিমাণে ভিন্নতা আনতে পারে।
- কখনও কখনও রক্তপাতের মাত্রা কম বা বেশি হতে পারে।
- জরায়ুর অভ্যন্তরীণ আবরণের উপর প্রভাব এবং হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হালকা থেকে মাঝারি পেট ব্যথা হতে পারে।
- পেটে চাপ, খিঁচুনি বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
- স্তন স্পর্শকাতর বা ব্যথাযুক্ত হতে পারে।
- মাসিক ছাড়াও রক্তপাত হতে পারে।
Peuli পিলের দাম কত এবং এটি কোথায় পাওয়া যায়?
পিউলি পিলের দাম ১৯৫ টাকা এবং এটি আপনি যেকোনো ফার্মেসিতে পেয়ে যাবেন। আবার কখনও এটি কোন কোন অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও খুঁজে পাবেন। অনলাইন সেলাররা অনেকসময় ডিসকাউন্ট দেয়, অর্থাৎ সেক্ষেত্রে পিলের দাম কিছুটা কম হতে পারে। কাজেই আপনি এমন কোন বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পেলে সেখান থেকেও ক্রয় করতে পারবেন।
FAQs
পিউলি পিল কত সময়ের মধ্যে কার্যকর হয়?
পিউলি পিল অরক্ষিত যৌন সম্পর্কের পর ১২০ ঘণ্টার (৫ দিন) মধ্যে খেলে কার্যকর হয়। এর কার্যকারিতা নির্ভর করে আপনি এটি কত দ্রুত গ্রহণ করছেন তার ওপর। এটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, অর্থাৎ প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খেলে এর কার্যকারিতা সর্বোচ্চ থাকে এবং সময় যত গড়ায়, পিলের কার্যকারিতা তত কমে যায়। পিলটি মূলত ডিম্বস্ফোটন বিলম্বিত বা বন্ধ করে দিয়ে কাজ করে, যা গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে। তবে, মনে রাখতে হবে, পিউলি একটি ইমার্জেন্সি পিল এবং এটি নিয়মিত জন্ম নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নয়, তাই নিয়মিত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
পিউলি পিল খাওয়ার পর মাসিকের ধরন কেমন হতে পারে?
পিউলি পিল খাওয়ার পর অনেক সময় মহিলাদের মাসিকের সময় ও ধরনে কিছু পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। কারো মাসিক স্বাভাবিক সময়ের আগেই চলে আসতে পারে, আবার কারো ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দেরিতেও হতে পারে। এ ছাড়া মাসিকের প্রবাহও স্বাভাবিকের চেয়ে হালকা বা বেশি হতে পারে। অনেকেই মাসিক চলাকালীন বা মাসিকের বাইরেও অনিয়মিত রক্তপাতের অভিজ্ঞতা পেতে পারেন। সাধারণত এসব পরিবর্তন অস্থায়ী হয় এবং কয়েকটি মাসিক চক্রের পর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তবে মাসিক যদি ৫ দিনের বেশি দেরি হয়, সেক্ষেত্রে গর্ভধারণের সম্ভাবনা যাচাই করতে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা জরুরি।
Peuli পিল খাওয়ার পরে গর্ভধারণের উপর কোনো দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে কি?
না, পিউলি পিল খাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে গর্ভধারণের ক্ষমতার ওপর কোনো দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে না। এটি শুধুমাত্র জরুরি অবস্থায় ব্যবহারের জন্য তৈরি, তাই শরীরের প্রজনন ক্ষমতা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। একজন নারী ভবিষ্যতে সন্তান নিতে চাইলে স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ করতে পারবেন। যেহেতু এটি একটি ইমার্জেন্সি পিল, তাই এটি ইমার্জেন্সিতেই কাজে লাগে। নিয়মিত বা ভবিষ্যতে এর কোন প্রভাব থাকবে না।
Peuli পিল কি শুধু ডিম্বস্ফোটন বিলম্বিত করে নাকি জরায়ুতেও প্রভাব ফেলে?
পিউলি পিল কেবল ডিম্বস্ফোটন বিলম্বিত করেই কাজ করে না, বরং এটি জরায়ুতেও প্রভাব ফেলে। এটি খাওয়ার ফলে শুক্রাণুর দ্বারা ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তবে যদি কোনো কারণে ডিম্বস্ফোটন হয়ে যায়, তখনও পিউলি জরায়ুর আস্তরণে এক ধরনের পরিবর্তন আনে যেটার ফলে নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুতে স্থাপন হতে পারে না, ফলে গর্ভধারণ আটকানো যায়।