প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট পজিটিভ মানে কি? গর্ভধারণ নিশ্চিত?

আপনি কি জানেন প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট পজিটিভ মানে কি? প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট পজিটিভ মানে আপনি বাচ্চা গর্ভধারণ করতে পেরেছেন! বেশিরভাগ সময়ই এটি ঠিক হয়, তবে খুব সময়ই এই রিপোর্ট ভুল হয়। অনেকেই বারিতেই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে থাকেন। প্রেগন্যান্সি পরীক্ষার সবচেয়ে সহজ এবং সাধারণ উপায় হলো হোম প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহার করা। এটি ওষুধের দোকানে সহজলভ্য এবং ব্যবহার করতেও খুব সহজ।

খুশির খবর চেপে রাখতে পারেন না অনেকেই। তাই প্রেগনেন্সি টেস্ট পজিটিভ আসার সঙ্গে সঙ্গেই তা প্রথমে পার্টনারকে জানান। তারপর বাড়ির সকলকে জানানোর পরই শুরু হয়ে যায় উদযাপন। এই পজিটিভ রিপোর্টের মাঝেই অনেক মায়ের স্বপ্ন নিহিত থাকে। বলা হয়ে থাকে যে নারী জীবনের পূর্ণতা পায় সন্তান গর্ভধারণ বা জন্মদানের মধ্য দিয়ে। তবে এই সময় মায়েদের একটি লম্বা জার্নির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যাতে মায়েদের এই জার্নি নির্ঝঞ্ঝাট হয় সেজন্যই আমাদের আজকের এই লেখাটি।  

আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে শিশু নড়তে শুরু করে?

হোম প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ হলে কি ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি?

অবশ্যই! হোম প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ হলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। যদিও আধুনিক হোম প্রেগন্যান্সি টেস্টগুলো অত্যন্ত নির্ভুল হয়, তবুও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ছাড়া গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে না। ডাক্তারের কাছে গিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে, ভ্রূণ জরায়ুর ভেতরে সঠিকভাবে স্থাপন হয়েছে। 

কখনও কখনও এমন হয়ে থাকে যে ভ্রূণ জরায়ুর বাইরে, যেমন ডিম্বনালিতে বিকশিত হতে শুরু করে; এই অবস্থাকে বলে একটোপিক প্রেগন্যান্সি। এটি গর্ভাবস্থার একটি গুরুতর জটিলতা, যা যদি সঠিক সময়ে শনাক্ত ও চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে মারাত্মক রক্তক্ষরণসহ মায়ের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। শুরু থেকেই মা ও অনাগত বাচ্চার সঠিক যত্ন নিশ্চিত করতে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার বিকল্প নেই। 

প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট পজিটিভ আসলে কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে? 

যখনই প্রেগন্যান্সি টেস্টে পজিটিভ রেজাল্ট আসে, তখনই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন অভিজ্ঞ স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আগে থেকেই যদি কোনও পরিচিত বা বিশ্বস্ত গাইনোকোলজিস্ট থেকে থাকে, তাহলে সেটি অনেকটাই সুবিধাজনক হয়। গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরে পুষ্টির চাহিদা বেড়ে যায়, বিশেষ করে আয়রনের ঘাটতি একটি সাধারণ সমস্যা। 

তাই প্রেগন্যান্সি কনফার্ম হওয়ার পরপরই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রিন্যাটাল ভিটামিন গ্রহণ শুরু করা উচিত। মনে রাখতে হবে যে, এই সময়ের প্রতিটি কেয়ার শুধু একজন মায়ের জন্যই নয় বরং তাঁর ভিতরে থাকা বাচ্চার জন্যও। তাই প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর এটি কোনভাবেই অবহেলা করা যাবেনা বরং এই মুহূর্ত থেকেই শুরু হোক মায়ের যত্ন ও শিশুর সুস্থ ভবিষ্যতের প্রস্তুতি।

পজিটিভ রিপোর্ট আসার কতদিন পরে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানো উচিত?

Ultrasound scans in pregnancy

হোম প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ আসার পর সাধারণত গর্ভাবস্থার ৫ থেকে ৭ সপ্তাহের মধ্যে প্রথম আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানো উচিত। তবে, কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার আরও আগে বা পরে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দিতে পারেন। যদি কোনো শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়, তাহলে ডাক্তার সাধারণত কিছু আগেই আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে এটি সব ক্ষেত্রে না। 

অনেকেই মনে করেন যে পজিটিভ রিপোর্ট আসার সাথে সাথেই আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে হয়, এই ধারনাটি সম্পূর্ণ ভুল। যদি খুব তাড়াতাড়ি আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানো হয়, তাহলে গর্ভথলি দেখা গেলেও ভ্রূণ বা তার হৃদস্পন্দন নাও দেখা যেতে পারে। এতে অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। অথচ এখানে উদ্বেগের কোন কারণই নেই। 

তাই পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানোর আগে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা উচিৎ। মোটকথা যদি আপনি গর্ভবতী হবার সাথে সাথে কোন জটিল শারীরিক সমস্যা দেখা না দেয় তাহলে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানোর কোন প্রয়োজন নেই। আর যদি করেনও তাহলে ভ্রূণ দেখতে না পেলে চিন্তার কিছু নেই। 

FAQs

পজিটিভ রিপোর্ট মানেই কি ১০০% নিশ্চিত গর্ভধারণ?

হোম প্রেগন্যান্সি টেস্টে পজিটিভ আসার মানে গর্ভধারণ প্রায় নিশ্চিত কিন্তু ১০০% নিশ্চিতকরণের জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা এবং আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিশ্চিত করবেন এবং আপনার ও আপনার শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যখন একটি হোম প্রেগন্যান্সি টেস্ট বা রক্ত পরীক্ষা পজিটিভ আসে, তখন গর্ভধারণ নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনাই সবথেকে বেশি। খুব কম ক্ষেত্রেই এর উল্টোটা হয়।

কি কারণে কখনো ভুল পজিটিভ রিপোর্ট আসতে পারে?

প্রাথমিক পর্যায়ে, প্রস্রাবে hCG হরমোনের পরিমাণ এতটাই কম থাকে যে সাধারণ প্রেগন্যান্সি কিট দিয়ে তা সহজে ধরা পড়ে না। তাই, সহবাসের পরপরই বা মাসিক মিস হওয়ারও অনেক আগে পরীক্ষা করলে নেগেটিভ আসার সম্ভাবনা থাকে। সঠিক ও নির্ভরযোগ্য ফলাফল পাওয়ার জন্য সাধারণত সহবাসের অন্তত ২১ দিন পর অথবা পরবর্তী মাসিকের নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করাই উত্তম। 

৪ সপ্তাহের প্রেগনেন্সি টেস্ট নেগেটিভ আসার কারণ কি?

৪ সপ্তাহের প্রেগন্যান্সি টেস্ট নেগেটিভ আসার অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে এর মানে এই নয় যে আপনি গর্ভবতী নন। গর্ভধারণের মাত্র প্রথম দিনগুলোতে প্রস্রাবে গর্ভধারণের হরমোন এতোটাই কম থাকে যে সেটি টেস্ট কিট দিয়ে শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে। তাই খুব তাড়াতাড়ি টেস্ট করলে ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারে, যদিও গর্ভধারণ হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া টেস্টটি যদি সঠিক পদ্ধতিতে বা সঠিক সময়ে না করা হয় তাহলেও ফলাফল ভুল আসার সম্ভাবনা থাকে।  

গর্ভধারণের কোন কোন উপসর্গ পজিটিভ রিপোর্টের সাথে মিলে যায়?

গর্ভধারণের পজিটিভ রিপোর্টের সাথে সাধারণত কিছু শারীরিক উপসর্গের মিল পাওয়া যায়। সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রাথমিক লক্ষণ হলো মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর পাশাপাশি দেখা দিতে পারে বমি বমি ভাব বা বমি, যা সাধারণত সকালে বেশি হয়। এই সময় অতিরিক্ত ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব অনুভব করেন, যা শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের প্রভাবে হয়ে থাকে। এছাড়া ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ, হালকা সাদা স্রাব, এবং খাবারে অরুচিও গর্ভধারণের লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়। এসব উপসর্গ পজিটিভ প্রেগন্যান্সি রিপোর্টের সাথে মিল খেলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা আরও বেশি জোরালো হয়। 

প্রেগন্যান্সি পজিটিভ আসার পর কোন ওষুধ এড়িয়ে চলা উচিত?

গর্ভাবস্থায় সামান্যতম অসতর্কতাও বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, তাই এই সময়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি যাতে অসুস্থ হয়ে অতিরিক্ত ওষুধের উপর নির্ভর করতে না হয়। কারণ, প্রতিটি ওষুধের সঙ্গে কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জড়িত থাকে, যা গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই সময় ওষুধের ব্যবহার যতটা সম্ভব সীমিত রাখা প্রয়োজন। যারা দীর্ঘদিন ধরে কোনো রোগে ভুগছেন, তাদের অবশ্যই গর্ভধারণের সঙ্গে সঙ্গেই তাদের নিয়মিত ব্যবহৃত ওষুধ গর্ভাবস্থায় নিরাপদ কিনা তা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নিশ্চিত করতে হবে।

Author

  • ডাঃ তানহা একজন নিবেদিতপ্রাণ মেডিসিন ও গাইনী বিশেষজ্ঞ, যিনি বর্তমানে একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। অভ্যন্তরীণ রোগ ও নারীস্বাস্থ্য বিষয়ে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তিনি নারীদের স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সঠিক ও প্রমাণভিত্তিক তথ্য প্রচারে বিশ্বাসী। Emergencypillbd.com-এ তিনি নিয়মিতভাবে প্রেগন্যান্সি, পিরিয়ড, ইমার্জেন্সি পিল এবং নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা শেয়ার করে থাকেন, যা নারীদের সুস্থ জীবনযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

Leave a Comment