গর্ভধারণের লক্ষণ সমূহ জেনে নিন: কিভাবে বুঝবো আমি গর্ভবতী?

আপনি কি গর্ভবতী? এটি আপনি কয়েকটি লক্ষণের মাধ্যমেই বুঝতে পারেন। যদি কোন নিরাপত্তা ছাড়াই আপনি যৌন সম্পর্ক করে থাকেন তাহলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থেকেই যায় এবং একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনি গর্ভধারণ করতে পারেন। কিন্তু আপনি আসলেই গর্ভধারণ করেছেন কিনা তা নিশ্চিত হতে গেলে গর্ভধারণের লক্ষণ সমূহ জেনে নিন। গর্ভধারণ লক্ষণগুলো কী কী হতে পারে তা যদি আপনার জানা না থাকে তাহলে অবশ্যই জেনে নেয়া উচিত। 

আজকে আমরা এই আর্টিকেলটিতে গর্ভধারণের লক্ষণসমূহ নিয়ে আলোচনা করবো। এর আগেও আমরা গর্ভধারণ বিষয়ে বেশ কিছু আর্টিকেল পাবলিশ করেছিলাম। আমরা চাই এই সংক্রান্ত সব তথ্য আপনাদের জানাতে। তাই আপনি যদি প্রথমবার মা হতে চলেছেন তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরো লেখাটি মন দিয়ে পড়তে থাকুন। 

আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থার কত দিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ হয়?

গর্ভধারণের লক্ষণ সমূহ কী কী? 

গর্ভধারণের বেশ কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো আপনাকে বলে দিবে যে আপনি গর্ভবতী হয়েছেন। এই লক্ষণগুলো জানা থাকলে গর্ভধারণের শুরু থেকেই সঠিক প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হয়। জেনে নিন কোন কোন লক্ষণগুলো আপনাকে জানিয়ে দিবে যে আপনি মা হতে চলেছেনঃ 

  • খাবারের প্রতি অনীহা

গর্ভাবস্থার প্রথম দিকেই অনেক মায়ের মাঝে খাবারের প্রতি অনাগ্রহ দেখা যায়, যা একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার। কোনো কোনো খাবারের গন্ধেই তখন বমি বমি ভাব হতে পারে। এর সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না পাওয়া গেলেও ধারণা করা হয়, শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় এই পরিবর্তন ঘটে। তাই আগে যেসব খাবার খুব প্রিয় ছিল, গর্ভাবস্থার এই সময়ে তা খেতে বিরক্তিকর বা বিস্বাদ লাগতে পারে; এটা অস্বাভাবিক নয়, বরং সাধারণ ব্যাপার।

  • মনের অবস্থার ওঠানামা

গর্ভাবস্থার শুরুতে মনের অবস্থা বা মেজাজ স্থির থাকে না, যা স্বাভাবিক একটি পরিবর্তন। এই মুড সুইং মূলত শরীরের হরমোন পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে। হরমোনের তারতম্য ব্রেনে নিউরোট্রান্সমিটারের পরিমাণে প্রভাব ফেলে, যার ফলে কারও কারও মাঝে আবেগ প্রবল হয়, আবার কেউ বিষণ্নতা অনুভব করতে পারেন। ভিন্ন ভিন্ন মায়ের ক্ষেত্রে এ অভিজ্ঞতা ভিন্ন হলেও মেজাজের এমন ওঠানামা গর্ভাবস্থার স্বাভাবিক অংশ।

  • ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা

গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে হরমোনগত পরিবর্তনের কারণে শরীরে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়। রক্তপ্রবাহ বেশি হলে কিডনিতে চাপ বৃদ্ধি পায়, ফলে বারবার প্রস্রাবের বেগ অনুভূত হয়। সাধারণত গর্ভধারণের প্রথম ট্রাইমেস্টারের প্রায় ছয় সপ্তাহের মাথায় এই লক্ষণ স্পষ্টভাবে ধরা দেয়। সময় যত এগোতে থাকে এবং গর্ভের শিশুটি বড় হতে থাকে, ততই এই সমস্যা আরও বেশি দেখা দেয়।

  • অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অবসন্নতা

গর্ভাবস্থার শুরুতে অনেকেই হঠাৎ করে প্রচণ্ড ক্লান্তি বা অবসন্নতা অনুভব করেন। বিশেষজ্ঞরা সুনির্দিষ্টভাবে কারণ বলতে না পারলেও ধারণা করা হয়, প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় শরীরে ঘুম ঘুম ভাব ও দুর্বলতা আসে। এর পাশাপাশি সকালের বমি বমি ভাব এবং বারবার প্রস্রাবের কারণে বিশ্রাম ব্যাহত হওয়ায় ক্লান্তিবোধ আরও বেড়ে যায়।

  • মাসিক বন্ধ হওয়া

যদি আপনার মাসিক নিয়মিত হয়ে থাকে এবং নির্দিষ্ট সময়ে তা না আসে, তাহলে এটি গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণগুলোর একটি হতে পারে। এসময় অন্য উপসর্গ না থাকলেও আপনি ঘরে বসেই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার কথা ভাবতে পারেন। তবে যাদের মাসিক অনিয়মিত, তাদের জন্য এটি বোঝা কিছুটা কঠিন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব, স্তনে অস্বস্তি বা ব্যথা, এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজনীয়তা লক্ষ্য করা যেতে পারে।

  • স্পটিং ও সাদা স্রাব

ডিম্বানু নিষিক্ত হওয়ার পর যখন জরায়ুর ভেতরের আস্তরণে নিজেকে স্থাপন করে, তখন হালকা রক্তস্রাব বা স্পটিং হতে পারে। অনেক সময় এটি মাসিকের ব্যথার মতো অস্বস্তি তৈরি করে। যেহেতু ব্যথা ও রক্তস্রাবের ধরণ মাসিকের সাথে কিছুটা মিলে যায়, অনেকেই এটিকে মাসিক ভেবে ভুল করেন। তবে এই রক্তস্রাবের পরিমাণ খুবই সামান্য এবং অল্প সময়ের জন্য হয়, ফলে শিগগিরই পরিষ্কার হয়ে যায় যে এটি মাসিক নয়।

গর্ভধারণের লক্ষণ কত দিনে বোঝা যায়?

understanding pregnancy symptoms

গর্ভধারণের লক্ষণ সাধারণত নিষেকের ১/২ সপ্তাহ পর থেকেই প্রকাশ পেতে শুরু করতে পারে, তবে অনেক ক্ষেত্রে তা মাসিক মিস না হওয়া পর্যন্ত বোঝা কঠিন হয়। আবার কিছু নারীর ক্ষেত্রে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে এসব উপসর্গ আরও স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। তবে সবার শরীর ভিন্ন হওয়ায় লক্ষণ প্রকাশের সময়ও ভিন্ন হতে পারে। গর্ভধারণ নিশ্চিতভাবে জানতে হলে মাসিক মিস হওয়ার পর একটি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়।

FAQs

মাসিক মিস হওয়া কি গর্ভধারণের নিশ্চিত লক্ষণ?

মাসিক মিস হওয়া গর্ভধারণের অন্যতম প্রাথমিক এবং সাধারণ লক্ষণ হলেও এটি সবসময় গর্ভধারণের নিশ্চিত প্রমাণ নয়। তাই শুধুমাত্র মাসিক মিস হওয়ার ওপর নির্ভর করে গর্ভধারণ নিশ্চিত করা ঠিক নয়। আরও কিছু লক্ষণ দেখে তারপর একটি সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে। নিশ্চিতভাবে জানতে হলে বাসায় প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট ব্যবহার করা জরুরি। 

গর্ভধারণের প্রথম দিকের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ কোনটি?

গর্ভধারণের প্রথম দিকের সবচেয়ে সাধারণ এবং স্পষ্ট লক্ষণ হলো মাসিক মিস হওয়া। নিয়মিত চক্রে মাসিক হওয়ার কথা থাকলেও যদি তা না হয়, তবে এটি গর্ভধারণের প্রথম ইঙ্গিত হিসেবে ধরা হয়। এর পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি লক্ষণও গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়। তবে সবার ক্ষেত্রে একই রকম লক্ষণ নাও থাকতে পারে, তাই নিশ্চিত হওয়ার জন্য গর্ভধারণ পরীক্ষা করাই সবচেয়ে ভালো উপায়।

গর্ভধারণের প্রথম দিকে সব নারীর কি একই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়?

না, গর্ভধারণের প্রথম দিকে সব নারীর একই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয় না। কারও ক্ষেত্রে মাসিক বন্ধ হওয়া ও বমিভাব বেশি স্পষ্ট হয়, আবার কারও ক্ষেত্রে ক্লান্তি, স্তনে কোমলতা বা ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ বেশি চোখে পড়ে। অনেক নারীর ক্ষেত্রে খুব সামান্য পরিবর্তন হয়, যা সহজে বোঝা যায় না। আবার কেউ কেউ একেবারেই কোনো প্রাথমিক উপসর্গ অনুভব করেন না। তাই সবার ক্ষেত্রে লক্ষণ একরকম হবে তা বলা যায় না। 

Author

  • ডাঃ তানহা একজন নিবেদিতপ্রাণ মেডিসিন ও গাইনী বিশেষজ্ঞ, যিনি বর্তমানে একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। অভ্যন্তরীণ রোগ ও নারীস্বাস্থ্য বিষয়ে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তিনি নারীদের স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সঠিক ও প্রমাণভিত্তিক তথ্য প্রচারে বিশ্বাসী। Emergencypillbd.com-এ তিনি নিয়মিতভাবে প্রেগন্যান্সি, পিরিয়ড, ইমার্জেন্সি পিল এবং নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা শেয়ার করে থাকেন, যা নারীদের সুস্থ জীবনযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

Leave a Comment