প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কীভাবে ব্যবহার করতে হয়? নিয়ম জানুন

প্রেগন্যান্সি কিট হলো এমন একটি সহজ পরীক্ষার উপকরণ, যার মাধ্যমে কোনো নারী গর্ভধারণ করেছেন কি না তা দ্রুত এবং প্রায় সঠিকভাবে জানা যায়। এটি ব্যবহার করা খুবই সুবিধাজনক, বিশেষত ঘরে বসেই পরীক্ষা করা সম্ভব। গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে শরীরে বিটা এইচসিজি নামের একটি বিশেষ হরমোন তৈরি হয়, যা প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। সেই হরমোন শনাক্ত করেই কিটটি ফলাফল জানায়। তাই কয়েক ফোঁটা প্রস্রাব দিয়েই গর্ভধারণ নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। 

তবে অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কীভাবে ব্যবহার করতে হয় বা এর ফলাফল কতটা নির্ভরযোগ্য সে নিয়ে। সঠিক নিয়মে ব্যবহার না করলে ভুল ফল পাওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়। তাই, আজকে আমরা হাজির হয়েছি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাতে। আমাদের আজকের এই লেখাটি মন দিয়ে পড়লে আশা করি আপনি নিজেই আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহার করে গর্ভধারণ পরীক্ষা করতে পারবেন। 

আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থার কত দিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ হয়?

কখন প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবেন? 

যাদের মাসিক নিয়মিত আসে, তাঁদের জন্য সঠিক ফল পেতে হলে নির্ধারিত তারিখ পার হওয়ার অন্তত এক সপ্তাহ পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা উচিত। তবে যাঁদের মাসিক অনিয়মিত, তাঁদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলেই পরীক্ষা করা উত্তম। কেউ যদি নিশ্চিতভাবে পিরিয়ডের তারিখ মনে রাখতে না পারেন, তাহলে অসুরক্ষিত সহবাসের ২১ দিন পর টেস্ট করলে তুলনামূলক নির্ভুল ফলাফল পাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে, প্রেগন্যান্সি কিট বেশ নির্ভরযোগ্য হলেও এটি কখনোই শতভাগ নিশ্চিত ফল দেয় না। তাই পরীক্ষার ফল পজিটিভ বা নেগেটিভ যাই হোক না কেন, গর্ভধারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহারের নিয়মঃ 

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহারের অবশ্যই একটি নিয়ম আছে এবং আপনাকে এই নিয়ম অনুসরণ করেই টেস্ট করতে হবে। মনে রাখবেন এই পদ্ধতি ভুলভাবে প্রয়োগ করা হলে আপনি গর্ভবতী হওয়া সত্ত্বেও তা কিটে ধরা পড়বে না। তাই, প্রতিটি স্টেপ খুবই মনোযোগের সাথে সম্পন্ন করুন।

সাধারণত বাজারে যেসব প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট পাওয়া যায়, সেগুলোর ভেতরে একটি স্টিক বা ছোট বক্স থাকে। এতে একটি ‘S’ চিহ্নিত ঘর থাকে, যেখানে কয়েক ফোঁটা প্রস্রাব ফেলতে হয়। এরপর কিছু সময় অপেক্ষা করলে কিটের ‘C’ এবং ‘T’ চিহ্নিত ঘরগুলোতে দাগ দেখা দেয়। যদি কেবলমাত্র ‘C’ ঘরে একটি লাইন দেখা যায়, তবে পরীক্ষার ফল নেগেটিভ, অর্থাৎ গর্ভধারণ হয়নি। কিন্তু যদি ‘C’ ও ‘T’ দুই ঘরেই লাইন দেখা যায়, তবে সেটি পজিটিভ ফলাফল নির্দেশ করে, অর্থাৎ আপনি গর্ভবতী। যাইহোক, নিচের স্টেপ গুলো অনুসরণ করুনঃ 

  • প্রথমে একটি পরিষ্কার কাপে প্রস্রাব সংগ্রহ করুন।
  • এরপর ড্রপারের সাহায্যে ২ থেকে ৩ ফোঁটা প্রস্রাব কিটের নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন।
  • তারপর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন।
  • যদি কিটে দুইটি লাল রঙের দাগ ভেসে ওঠে তাহলে আপনি গর্ভধারণ করেছেন। 

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটে ফলাফল পেতে সাধারণত কত মিনিট অপেক্ষা করতে হয়?

সবচেয়ে সঠিক ফলাফলের জন্য কিটের সাথে দেওয়া নির্দেশাবলী সঠিকভাবে অনুসরণ করা জরুরি। যদি প্রস্রাবে হরমোনের পরিমাণ বেশি থাকে, তাহলে পজিটিভ ফলাফল এক মিনিটের মধ্যেই চলে আসতে পারে। কিন্তু নেগেটিভ ফলাফল নিশ্চিত করার জন্য পুরো নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত। মনে রাখবেন, নির্দেশিত সময়ের পরে আসা কোনো ফলাফল নির্ভরযোগ্য নয়।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটে ফলাফল পেতে সাধারণত ৩ থেকে ৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। কিছু কিটের ক্ষেত্রে এটি ১০ মিনিট পর্যন্ত সময় নিতে পারে। তবে ১০ মিনিটের বেশি অপেক্ষা করে ফলাফল দেখা উচিত নয়, কারণ তখন ফলাফল ভুল হতে পারে। তাছাড়া ব্র্যান্ডভেদে অপেক্ষার সময় কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের ফলাফল শতভাগ নির্ভরযোগ্য না হওয়ার কারণ কী?

pregnancy test kit result

কিটে টেস্ট করার পরও ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারে। তবে ফলাফল নেগেটিভ মানেই যে আসলেই নেগেটিভ তা নয়। অনেকসময় ভুল সময়ে বা ভুলভাবে টেস্ট করার ফলেও ফলাফল নেগেটিভ আসে। জেনে নিন কী কী কারণে ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারেঃ 

  • গর্ভধারণের একেবারে শুরুতে HCG হরমোনের মাত্রা কম থাকে, ফলে কিট শনাক্ত করতে পারে না।
  • সকালে প্রথম প্রস্রাব না দিলে হরমোনের ঘনত্ব কম থাকায় ফলাফল ভুল হতে পারে।
  • বেশি পানি খেলে প্রস্রাব পাতলা হয়ে যায়, এতে HCG হরমোনও পাতলা হয়ে পড়ে।
  • নির্দিষ্ট স্থানে ফোঁটা না দেওয়া বা ভুলভাবে ব্যবহার করলে ফলাফল সঠিক আসে না।
  • নষ্ট বা এক্সপায়ার্ড কিটে ফলাফল নির্ভুল হয় না।
  • এমন কিছু হরমোনজনিত ওষুধ আছে যা টেস্টের ফলকে প্রভাবিত করতে পারে।

FAQs

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের ফলাফল কি শতভাগ নির্ভরযোগ্য?

সঠিক নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট সাধারণত নির্ভরযোগ্য ফলাফল দেয়। তবে গর্ভধারণের একেবারে শুরুর দিকে শরীরে HCG হরমোনের মাত্রা কম থাকে, যা কিট দ্বারা শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই হরমোনের পরিমাণ বাড়ে, ফলে পরীক্ষার ফলাফলও বেশি স্পষ্ট হয়। এজন্য অনেক সময় গর্ভাবস্থার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে টেস্ট করলে ফল নেগেটিভ আসতে পারে, যদিও নারী আসলে গর্ভবতী।

অন্যদিকে, যাঁদের মাসিক অনিয়মিত, তাঁদের জন্য সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে অনেকেই পর্যাপ্ত হরমোন তৈরি হওয়ার আগেই পরীক্ষা করে ফেলেন। এ অবস্থাতেও প্রকৃতপক্ষে গর্ভবতী হলেও টেস্টে নেগেটিভ ফল দেখা দিতে পারে।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহারের জন্য প্রস্রাব সংগ্রহের সঠিক পদ্ধতি কী?

গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথম প্রস্রাব ব্যবহার করা। কারণ এই সময়ে প্রস্রাবে HCG হরমোন সবচেয়ে বেশি ঘন থাকে, যা সঠিক ফলাফল দিতে সাহায্য করে। প্রস্রাব সংগ্রহের জন্য একটি পরিষ্কার ও শুকনো কাপ ব্যবহার করতে হবে, যাতে কোনো ধরনের ময়লা বা পানি মিশে না যায়। এছাড়া প্রস্রাব এমনভাবে সংগ্রহ করুন যেন তা বাইরে পড়ে না যায় সংগ্রহ করার সময়। 

এক বার ব্যবহার করার পর কি পুনরায় সেই কিট ব্যবহার করা যেতে পারে?

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের ভিতরে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান থাকে যা প্রস্রাবে থাকা গর্ভাবস্থার হরমোন এর সাথে বিক্রিয়া করে ফলাফল দেখায়। এই বিক্রিয়াটি একবার হয়ে যাওয়ার পর কিটটির উপাদানগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং পুনরায় তা ব্যবহার করলে কোনো সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে না, বরং ভুল ফলাফল আসার সম্ভাবনা থাকে। তাই, নির্ভরযোগ্য ফলাফলের জন্য সবসময় একটি নতুন ও অব্যবহৃত কিট ব্যবহার করা উচিত।

Author

  • ডাঃ তানহা একজন নিবেদিতপ্রাণ মেডিসিন ও গাইনী বিশেষজ্ঞ, যিনি বর্তমানে একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। অভ্যন্তরীণ রোগ ও নারীস্বাস্থ্য বিষয়ে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তিনি নারীদের স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সঠিক ও প্রমাণভিত্তিক তথ্য প্রচারে বিশ্বাসী। Emergencypillbd.com-এ তিনি নিয়মিতভাবে প্রেগন্যান্সি, পিরিয়ড, ইমার্জেন্সি পিল এবং নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা শেয়ার করে থাকেন, যা নারীদের সুস্থ জীবনযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

Leave a Comment