গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে সাধারণত তেমন কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তাই শুধু শারীরিক লক্ষণ দেখে এ সময়ে গর্ভধারণ হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া বেশ কঠিন। এ সময় সঠিকভাবে জানতে হলে বিশেষ কিছু পরীক্ষা করা জরুরি। বর্তমানে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার জন্য ডাক্তারের কাছে ছুটে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। চাইলে ঘরে বসেই সহজ একটি কিট ব্যবহার করে আপনি গর্ভধারণ হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করতে পারেন। এটি সময় এবং ঝামেলা উভয়ই কমিয়ে দেয়।
আমরা সাধারণত প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কিনতে কাছাকাছি কোনো লোকাল ফার্মেসিতে যাই। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, কিটের গায়ে যে দাম লেখা থাকে তা এক রকম হলেও বাস্তবে বিভিন্ন দোকানে গিয়ে একই কিটের আলাদা আলাদা দাম বলা হয়। এতে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন এবং ঠিক আসল দামের ধারণা পান না। আজকের আর্টিকেল থেকে আমরা জানবো প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট দাম কত এবং এটি দিয়ে টেস্ট করার নিয়ম সম্পর্কে।
আরও পড়ুনঃ প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কীভাবে ব্যবহার করতে হয়?
কখন প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা উচিত?
যদি মাসিক নির্দিষ্ট সময়ে না হয় এবং আপনি সম্প্রতি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করে সহবাস করে থাকেন, তাহলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে দেখুন। মাসিক মিস হওয়ার প্রথম দিন থেকেই এই টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আপনি গর্ভবতী কি না।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট মূলত নারীর প্রস্রাবে একটি বিশেষ হরমোনের উপস্থিতি শনাক্ত করে। এই হরমোনটি হলো hCG, যা গর্ভধারণের পর শরীরে তৈরি হতে শুরু করে। তবে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে এই হরমোনের মাত্রা খুব কম থাকে। তাই সহবাসের পরপরই বা গর্ভধারণের একেবারে প্রথম দিকে টেস্ট করলে ফলাফল সবসময় নির্ভুল নাও হতে পারে।
সঠিক ফলাফলের জন্য সাধারণত সহবাসের কমপক্ষে ২১ দিন পর বা পরবর্তী মাসিকের সম্ভাব্য তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত। তবে বর্তমানে কিছু উন্নত প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট বাজারে পাওয়া যায়, যা মাসিকের তারিখ আসার আগেই, এমনকি গর্ভধারণের ৯ দিন পর থেকেই ফলাফল জানাতে সক্ষম। এর ফলে নারীরা আরও দ্রুত গর্ভাবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ শুরু করতে পারেন।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট সকালে না রাতে করবো?
সাধারণত বাজারে যে ধরনের প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট পাওয়া যায়, সেগুলোতে একটি ছোট স্ট্রিপ বা বক্স থাকে। এতে একটি বিশেষ ঘর থাকে যেখানে ‘S’ লেখা থাকে। ওই ঘরে প্রস্রাবের কয়েক ফোঁটা ফেলার পর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। এরপর টেস্ট বক্সে থাকা ‘C’ এবং ‘T’ লেখা ঘরগুলোর দিকে লক্ষ্য করতে হবে।
যদি শুধু ‘C’ ঘরে একটি দাগ দেখা যায়, তবে ফলাফল হবে নেগেটিভ, অর্থাৎ আপনার গর্ভধারণ হয়নি। আর যদি ‘C’ এবং ‘T’ – দুইটি ঘরেই দাগ দেখা দেয়, তবে ফলাফল হবে পজিটিভ, অর্থাৎ আপনি গর্ভবতী।
অনেকে মনে করেন, শুধুমাত্র সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর টেস্ট করা জরুরি। তবে আসলে দিনের যেকোনো সময়েই এই পরীক্ষা করা যায়। প্রয়োজনে একই দিনে বা ভিন্ন সময়ে একাধিকবারও টেস্ট করা সম্ভব, যাতে ফলাফল আরও নিশ্চিতভাবে জানা যায়।
বাসায় প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার নিয়মঃ
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের ব্যবহারবিধি সব কিটে একরকম নয়; প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানভেদে এতে কিছু পার্থক্য থাকতে পারে। প্রতিটি কিটের প্যাকেটের ভেতর একটি নির্দেশিকা থাকে, যেখানে ধাপে ধাপে কিভাবে টেস্ট করতে হবে তা বিস্তারিতভাবে লেখা থাকে। নির্দেশনাগুলো মনোযোগ দিয়ে অনুসরণ করলে ঘরে বসেই সহজে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা সম্ভব। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুনঃ
- সকালের প্রথম প্রস্রাব ব্যবহার করলে hCG ঘনত্ব বেশি থাকে, ফলে ফল নির্ভুল হয়।
- নির্দেশিকা অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থানে প্রস্রাবের কয়েক ফোঁটা ফেলুন অথবা কিছু কিটে সরাসরি প্রস্রাবের প্রবাহে স্ট্রিপ ধরতে হয়।
- ফলাফলের জন্য ২ থেকে ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
- কিটে প্রদর্শিত দাগ বা লাইন দেখে গর্ভধারণ নিশ্চিত করুন।
- প্রয়োজনে ভবিষ্যতের জন্য ফলাফলের ছবি সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের দাম কত?
বাংলাদেশে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের দাম ব্র্যান্ড ও ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। নিচে কিছু জনপ্রিয় প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের তালিকা ও তাদের আনুমানিক মূল্য দেওয়া হলো:
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের নাম | টেস্ট কিটের মূল্য |
Ovulation | ৮৫ থেকে ৭০০ টাকা |
i-can | ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা |
Good News Digital | ৭২ টাকা |
MAM CHECK | ৮০ থেকে ১০০ টাকা |
Moon Digital | ৫৬ টাকা |
NOVA | ৪০ টাকা প্রায় |
নোটঃ এখানে আমরা বিভিন্ন দামের প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের দাম উল্লেখ করেছি। এগুলোর প্রতিটিই ভালো কাজ করে। আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনোটি কিনতে পারেন। তবে যেটা কিনবেন অবশ্যই সেটা সম্পর্কে জেনে নিবেন।
কিভাবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট নির্বাচন করতে হয়?
আপনি যখন লোকাল ফার্মেসি বা অনলাইন থেকে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কিনতে যাবেন, তখন দেখতে পাবেন বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কিট বাজারজাত করছে। কিন্তু এর মধ্যে সবগুলো সমান কার্যকর নয়। সঠিক ফলাফল পাওয়ার জন্য অবশ্যই নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত কিট বেছে নেওয়া জরুরি। না হলে পরীক্ষার ফল ভুল হতে পারে এবং গর্ভধারণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।
বর্তমানে বাজারে যে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এবং বিশ্বস্ত হিসেবে বিবেচিত হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো Ovulation, NOVA, MAM CHECK, i-can, Moon Digital এবং Good News Digital। এগুলো ব্যবহার করা সহজ, দ্রুত ফল দেখায় এবং নির্ভুলতার দিক থেকেও এগিয়ে।
FAQs
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহার করার সময় কোন বিষয়গুলো বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হয়?
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহার করার সময় কিছু বিষয় বিশেষভাবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। সবচেয়ে আগে পিরিয়ড মিস হওয়ার পর টেস্ট করা উচিত, কারণ তখন ফলাফল সবচেয়ে নির্ভুল হয়। সকালে প্রথম প্রস্রাব ব্যবহার করলে HCG হরমোনের ঘনত্ব বেশি থাকে, ফলে ফলাফল সঠিক আসে। কিটের সঙ্গে দেওয়া নির্দেশনা ভালোভাবে অনুসরণ করা জরুরি। এছাড়া ফলাফল দেখার সময় সীমা মানা উচিত।
কম দামী প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহার করলে কি কোন ক্ষতি হয়?
কম দামী প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট সাধারণত সস্তা উপাদান বা অজানা ব্র্যান্ডের হতে পারে, তবে এগুলো ব্যবহারে সরাসরি স্বাস্থ্যগত কোনো ক্ষতি হয় না। তবে এই ধরনের কিটে ফলাফল ভুল আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে কম দামী মানেই যে ভুল রিপোর্ট আসবে সেটা বলা যায় না। ভালো ব্র্যান্ডের কিট কম দামী হলেও সমস্যা নেই।
বাসায় প্রেগন্যান্সি টেস্ট করলে কি ভুল হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে?
না, আপনি যদি সঠিক উপায়ে এটি ব্যবহার করেন তাহলে কোনোভাবেই ভুল হবেনা। তবে কিট ভুলভাবে ব্যবহার করলে ফলাফল স্বাভাবিকভাবেই ভুল আসবে। বর্তমানে সবাই প্রথমে বাসায়ই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে থাকে। তাই আপনি যদি নির্দেশনা মেনে টেস্ট করেন তাহলে ফলাফল সঠিক আসতে বাধ্য। যদি সন্দেহ থাকে তাহলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করে নিন।