‘ইমারজেন্সি পিল’ যেটার সাথে বিবাহিত বা অবিবাহিত অনেকেই পরিচিত। ইমারজেন্সি পিল সাধারণত অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণে বাঁধা দিতেই গ্রহণ করে থাকেন নারীরা। এটি একটি জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল, তবে এটি কতবার খাওয়া উচিৎ বা বেশি খেলে ফল কি হতে পারে সে বিষয়ে অবশ্যই পূর্ণ ধারণা রাখা আবশ্যক। যদি প্রশ্ন করেন যে ইমার্জেন্সি পিল মাসে কতোবার খাওয়া যায়? তাহলে উত্তর হচ্ছে ১ বারের বেশি না।
যেহেতু এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আছে তাহলে নিশ্চয় ধারণা করতে পারছেন যে বেশি পরিমাণে বা ইচ্ছামত ইমারজেন্সি পিল খেতে ক্ষতি হবার সম্ভাবনা আছে। আজকের লেখায় আমরা আলোচনা করবো ইমারজেন্সি পিল মাসে কতবার খাওয়া উচিৎ এবং কেন; যাতে আপনারা সচেতনতা বজায় রেখেই এটি গ্রহণ করতে পারেন। তাহলে চলুন মূল আলোচনায় চলে যাই।
আরও পড়ুনঃ ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম
ইমার্জেন্সি পিল মাসে কতোবার খাওয়া যায়?
ইমারজেন্সি পিল খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিয়ম মেনেই খেতে হবে, নিয়মের বাইরে গেলেই তাঁর প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে বাধ্য। ইমারজেন্সি পিল মাসে একবারের বেশি না খাওয়াই সবথেকে ভালো। তবে যদি বেশি প্রয়োজন হয় তাহলে সেক্ষেত্রে নিয়মিত যৌন জীবনে নিরাপদ থাকতে ইমার্জেন্সি পিলের উপর নির্ভর না করে দীর্ঘমেয়াদি ও নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করাই উত্তম।
আর নিয়মিত পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ কারণ সবার শারীরিক পরিস্থিতি এক নয়। তাই শারীরিক অবস্থা এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে চিকিৎসকরা যে পরামর্শ দিবেন সে অনুযায়ীই আপনাকে ইমারজেন্সি পিল গ্রহণ করতে হবে।
ইমার্জেন্সি পিল বেশি খেলে কি হয়?
ইমার্জেন্সি পিল বেশি বা ঘন ঘন খেলে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এটি যেহেতু একটি উচ্চমাত্রার হরমোনযুক্ত পিল, তাই এর যথেচ্ছ ব্যবহার শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
-
অনিয়মিত মাসিক
ঘন ঘন ইমারজেন্সি পিল খাওয়ার এটি সবথেকে সাধারণ একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এক্ষেত্রে যেটা হয় তা হচ্ছে, হয় মাসিক দেরিতে হয় বা তাড়াতাড়ি হয়। এছাড়া রক্তপাতের পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে। মাসিক অনিয়মিত হওয়া শরীরের পক্ষে ভালো নয়, আর বেশি ইমারজেন্সি পিল ব্যবহারের কারণে আপনার মাসিক সম্পূর্ণভাবে অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে।
-
তীব্র মাথাব্যথা
ইমারজেন্সি পিল বেশি খেলে তীব্র মাথাব্যাথার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ যদি কারো মাইগ্রেন আগে নাও থাকে তাহলে অতিরিক্ত পিল গ্রহণের কারণে স্থায়ী মাথাব্যাথা হতে পারে।
-
হরমোনের ভারসাম্যে অসমতা
শরীরের হরমোন গুলো স্বাভাবিকভাবে সমতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয় যদি আপনি বেশি ইমারজেন্সি পিল খেতে থাকেন। পিলের প্রভাবে শরীরের প্রাকৃতিক হরমোন ব্যাহত হয়। অর্থাৎ হরমোন ক্রমাগত উঠানামা করতে থাকে যেটা শরীর ও মনের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। এটি ছাড়াও ডিম্বাণু নিঃসরণ অনিয়মিত হতে পারে।
-
পিলের কার্যকারিতা হ্রাস
যারা বারবার ইমারজেন্সি পিল গ্রহণ করেন তাঁদের পিল গ্রহণের কার্যকারিতা আস্তে আস্তে হ্রাস পায়। যেমন একজন নারী যদি মাসে একাধিকবার পিল গ্রহণ করেন তাহলে পরবর্তীতে এমন হয় যে পিলে আর কাজ হচ্ছে না, অর্থাৎ গর্ভধারণ রোধ করতে আপনি যে পিল নিচ্ছেন তা আপনার গর্ভধারণে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারছেনা।
-
প্রজনন ক্ষমতার উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
এমন ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে যে একজন নারীর মধ্যে গর্ভধারণের প্রয়োজনীয় সবকিছু থাকা সত্ত্বেও তিনি গর্ভধারণ করতে পারছেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর জন্য অতিরিক্ত ইমারজেন্সি পিল গ্রহণই দায়ী। যারা একসময় ঘন ঘন পিল খেয়েছেন তাঁরা গর্ভধারণের সক্ষমতা হারাতে পারেন অথবা গর্ভধারণ সহজে নাও হতে পারে।
-
মানসিক অস্থিরতা
বেশি মাত্রায় পিল গ্রহণের ফলে মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়। কারো কারো মুড সুইং করে। কখনও হঠাৎ করেই অস্থিরতা বেড়ে যায় কোন কারণ ছাড়াই। মূলকথা শারীরিক বিভিন্ন প্রতিক্রয়ার সাথে মানসিক স্বাস্থ্যও ওঠানামা করে এবং মস্তিষ্কের আবেগ ও অনুভূতির ওপর প্রভাব ফেলে।
-
অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বেশি ইমারজেন্সি পিল গ্রহণের কারণে আরও বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, যেমন বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া। সাধারণত ইমারজেন্সি পিল গ্রহণের পর একটু বমি বমি ভাব হয়। তবে বেশি ইমারজেন্সি পিল খাওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে একটি স্থায়ী বমি ভাব হতে পারে এবং তাঁর সাথে খাবারে অরুচি। তাছাড়া স্তন ফুলে যাওয়া, ব্যাথা হওয়া, তলপেটে ব্যথা হওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যদি বারবার ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে করনীয় কি?
যদি বারবার ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে অবশ্যই একজন গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আপনার বয়স, স্বাস্থ্যের অবস্থা, ও সম্পর্কের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত গর্ভনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বেছে নিন। অনেক সময় দেখা যায় যে একপক্ষ জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে সচেতন থাকলেও অন্যপক্ষ না থাকলে সমস্যা হয়। সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করে কনডম বা অন্য নিরাপদ পদ্ধতি ব্যবহারের ব্যাপারে ভাবুন।
মনে রাখবেন ইমারজেন্সি পিল গ্রহণের মাত্রা যত কমাবেন ততই ভালো, বিশেষ করে যখন বেশি গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে। পিল গ্রহণ না করে কম গ্রহণ করে জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে ভাবা উচিৎ। এতে করে আপনি শারীরিক এবং মানসিক দুইদিক দিয়েই সুস্থ থাকবেন এবং ভবিষ্যতে সন্তান ধারণের অনিশ্চয়তাও দূর হবে।
FAQ
একই মাসিক চক্রে একাধিকবার ইমার্জেন্সি পিল খেলে কি হয়?
একবার ইমার্জেন্সি পিল খেলেই যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো দেখা যায় সেগুলো বারবার খেলে আরও তীব্র হতে পারে। বমি বমি ভাব ও বমি এতটাই বেশি হতে পারে যে, পিল শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে এবং এর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। এছাড়া হরমোনের তারতম্যের কারণে কিছু মহিলার মেজাজ পরিবর্তন ও বিষণ্নতার মতো মানসিক চাপ অনুভব করতে পারেন।
কিশোরী বা তরুণীদের জন্য মাসে কতবার ইমার্জেন্সি পিল খাওয়া নিরাপদ?
কিশোরী বা তরুণীদের জন্য ইমার্জেন্সি পিল মাসে যত কম খাওয়া যায়, ততই ভালো। সাধারণত মাসে একবারের বেশি ইমার্জেন্সি পিল খাওয়া নিরাপদ নয়। তবে কিশোরী বা ১৮ বছরের নিচের বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে ইমারজেন্সি পিল গ্রহণের ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা আবশ্যক। কিশোরীদের শরীর তখনো পূর্ণরূপে হরমোনগতভাবে স্থিতিশীল হয় না তাই তাঁরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
মাসে ২ বা ৩ বার ইমার্জেন্সি পিল খেলে কী ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে?
মাসে ২–৩ বার ইমার্জেন্সি পিল খেলে শরীরে হরমোনগত সমস্যা, মাসিক চক্রের গোলমালসহ একাধিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাছাড়া বারবার পিল খাওয়ার ফলে এর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে এবং যেকোনো প্রয়োজনে এটি আর ঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে। এমনকি ভবিষ্যতে প্রজনন সমস্যা হতে পারে কারো কারো ক্ষেত্রে।
ঘন ঘন ইমার্জেন্সি পিল ব্যবহারের ফলে কি দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকতে পারে?
হ্যাঁ, কারণ ইমারজেন্সি পিলে সাধারণ জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের চেয়ে অনেক বেশি হরমোন থাকে। ঘন ঘন উচ্চমাত্রার হরমোনের সংস্পর্শে আসার ফলে শরীরের জন্য অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। এর ফলে বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, স্তনে ব্যথা, মেজাজ পরিবর্তন এর মত প্রতিক্রিয়া গুলোর সাথে সাথে জরায়ুর আস্তরণ পাতলা হয়ে যেতে পারে এবং বিভিন্ন জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।