ব্যথানাশক বা বেদনানাশক ঔষধ হিসেবে Tufnil এর বেশ পরিচিতি রয়েছে। অনেকেই এটিকে মাইগ্রেনের ঔষধ হিসেবেও চেনেন। আবার মাইগ্রেনের ব্যথা ছাড়াও কেউ কেউ মাথা ব্যথার কারণেও খেয়ে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে Tufnil 200 mg খাওয়া হয়। কিন্তু আসলেই Tufnil 200 mg এর কাজ কি? এটা কি কেউ জানেন? সেটা জানানোর জন্যই আমরা আজকের লেখাটি প্রকাশ করছি। যেকোনো ঔষধ খাওয়ার পূর্বে এটির কাজ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে রাখা উচিৎ।
ডাক্তার যখন আপনাকে এই ঔষধ সাজেস্ট করবেন তখন অবশ্যই সঙ্গত কারণেই দিবেন। তারপরও এই ব্লগটির উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনাদেরকে প্রাথমিক কিছু ধারনা দেয়া। আশা করি, এই আর্টিকেল থেকে আপনারা এই ঔষধটির কার্যাবলী সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পাবেন। এছাড়া এটি কখন, কীভাবে এবং কাদের খাওয়া উচিৎ সে ব্যাপারেও ধারনা দেয়ার চেষ্টা করবো।
আরও পড়ুনঃ ইনডেভার ১০ এর কাজ কি – কেন খায়, খাওয়ার নিয়ম ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
Tufnil 200 mg কী ধরনের ঔষধ?
Tufnil 200 mg হলো বাংলাদেশে উৎপাদিত একটি ওষুধ, যা এসকেইএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড তৈরি করে। এতে সক্রিয় উপাদান হিসেবে টলফেনামিক অ্যাসিড ব্যবহৃত হয়েছে। এটি নন-স্টেরয়েডাল এন্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ বা এনএসএআইডি (NSAID) শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত একটি ওষুধ, যা সাধারণত প্রদাহ কমানো ও ব্যথা উপশমের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এটি তুলনামূলকভাবে উচ্চ মাত্রার একটি ওষুধ, তাই সাধারণ মাথাব্যথার চেয়ে মাইগ্রেনের মতো জটিল ব্যথার ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর। টাফনিল সেবনের ১০–২০ মিনিটের মধ্যে মাথাব্যথা প্রায় অর্ধেক কমে আসে এবং প্রায় ৩০–৪০ মিনিটের মধ্যে ব্যথা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত উপশম হয়। শুধু মাথাব্যথা নয়, শরীরের অন্যান্য ব্যথা, দুর্বলতা, এমনকি বমি বমি ভাবও কমাতে এটি সাহায্য করে।
Tufnil 200 mg এর কাজ কি?
যাদের নিয়মিত বা তীব্র মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দেয়, চিকিৎসকের পরামর্শে তারা এই ওষুধ গ্রহণ করে উপশম পেতে পারেন। এছাড়াও, শরীরে জ্বরের কারণে যে ব্যথা অনুভূত হয়, সেই ব্যথা দূর করতেও টাফনিল কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এমনকি কোনো কাটা-ছেঁড়ার পর সৃষ্ট ব্যথা বা সার্জারির পর সৃষ্ট ব্যথা কমাতেও এই ওষুধ ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ এটি শুধুমাত্র মাইগ্রেন নয়, বরং বিভিন্ন ধরণের ব্যথা কমাতে সহায়ক একটি ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
Tufnil 200 mg খাওয়ার নিয়মঃ
টাফনিল একটি ব্যথানাশক ওষুধ, যা মাথাব্যথা উপশমে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তবে মনে রাখতে হবে, ব্যথা কমানোর যেকোনো ওষুধ শরীরের ওপর দীর্ঘমেয়াদে জটিল প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এ ধরনের ওষুধ কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা উচিত নয়। একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক আপনার শারীরিক অবস্থা ও রোগের ধরন অনুযায়ী এই ওষুধ সেবনের সঠিক নিয়ম নির্ধারণ করবেন।
ওষুধের লেবেলে সাধারণ নিয়ম উল্লেখ থাকলেও তা সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য নয়। যারা তীব্র মাথাব্যথায় ভোগেন, তাদের জন্য ২০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট প্রথম উপসর্গ প্রকাশের প্রায় ১ থেকে ২ ঘণ্টা পর সেবন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। অন্যদিকে, যাদের মাথাব্যথা তুলনামূলক হালকা বা মাঝারি মাত্রার, তারা প্রতিদিন একটি সম্পূর্ণ (২০০ মি.গ্রা.) অথবা অর্ধেক (১০০ মি.গ্রা.) ট্যাবলেট দিনে তিনবার পর্যন্ত সেবন করতে পারেন।
যেহেতু টাফনিল একটি ব্যথানাশক ঔষধ, তাই এর সঙ্গে অবশ্যই একটি অ্যান্টাসিড বা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়া জরুরি, যাতে পেটে অস্বস্তি বা আলসারের ঝুঁকি কমানো যায়। সবশেষে বলা যায়, টাফনিল মাথাব্যথা দূর করতে কার্যকর হলেও এটি সঠিক নিয়মে এবং অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা উচিত।
Tufnil 200 mg এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী কী?
Tufnil ঔষধ খাওয়ার পর শরীরে বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আপনাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে অসস্তি দিতে পারে। জেনে নিন কী কী side effects রয়েছেঃ
- ওষুধ সেবনের পর অতিরিক্ত ঘুম বা ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
- পাকস্থলীর আবরণে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে পেট ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
- অত্যধিক মাত্রায় সেবনের ফলে চেতনা হারানো পর্যন্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- শ্বাস নিতে অসুবিধা বা শ্বাসের ধীরগতি হতে পারে।
- অন্ত্রে প্রভাব পড়ে পাতলা পায়খানা হতে পারে।
- কানে অবিরাম ভোঁ ভোঁ শব্দ শোনা যেতে পারে।
- ক্ষুধা কমে যাওয়া বা খাবারের প্রতি আগ্রহ হ্রাস পেতে পারে।
- স্নায়বিক প্রভাবের কারণে শরীরে খিঁচুনি দেখা দিতে পারে।
- ওষুধের প্রভাবে মাথা ব্যথা হতে পারে।
- শরীর দুর্বল বা শক্তিহীন মনে হতে পারে।
- শরীরে অস্বাভাবিক শিহরণ বা শিরশির ভাব অনুভূত হতে পারে।
- স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব পড়ে কাঁপুনি দেখা দিতে পারে।
- বমি ভাব বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
- হঠাৎ রক্তচাপ কমে অজ্ঞান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- মেজাজ পরিবর্তন হয়ে অস্থিরতা বা উত্তেজনা দেখা দিতে পারে।
- মাথা ঘোরা বা ভারসাম্যহীনতা অনুভূত হতে পারে।
Tufnil 200 mg ঔষধের দাম কত?
Tufnil 200 mg প্রতিটি ট্যাবলেটের মূল্য বর্তমানে মাত্র ১০ টাকা। একটি পাতা ট্যাবলেটে সাধারণত ১০টি ট্যাবলেট থাকে, যার মোট দাম ১০০ টাকা। আর একটি সম্পূর্ণ বক্সের দাম প্রায় ৬০০ টাকা। তবে মনে রাখতে হবে, ওষুধের বাজারমূল্য সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই ক্রয় করার সময় বর্তমান দাম যাচাই করা জরুরি। আপনি এই ওষুধ যেকোনো সময় আপনার কাছের ফার্মেসি বা ওষুধের দোকান থেকে সহজেই ক্রয় করতে পারবেন।
FAQs
টাফনিল খেলে কি ঘুম হয়?
হ্যাঁ, টাফনিল (Tufnil 200 mg) সেবনের পর কিছু ক্ষেত্রে ঘুম বা অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। এটি ওষুধের হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রে সাময়িক প্রভাবের কারণে ঘটে। তবে প্রত্যেকের শরীরে প্রভাব ভিন্ন হতে পারে; কারো কারো ক্ষেত্রে এই ঘুম খুব সাময়িক এবং হালকা, আবার কিছু ক্ষেত্রে বেশ কিছুক্ষণ পর্যন্ত অনুভূত হতে পারে।
টাফনিল বেশি খেলে কি ক্ষতি হয়?
টাফনিল ঔষধটি সাধারণত কেউ নিজের ইচ্ছায় খায় না। নিয়মিত বা অতিরিক্তভাবে টাফনিল সেবন করা স্বাস্থ্য জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এটি ব্যবহৃত হয় মূলত মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনজনিত সমস্যা উপশমের জন্য। ঔষধটি খাওয়ার পর দ্রুত মাথাব্যথা হ্রাস পেতে শুরু করে, ফলে রোগী স্বস্তি অনুভব করেন।একসাথে বেশি ট্যাবলেট খাওয়া গেলে শারীরিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
টাফনিল কি এন্টিবায়োটিক?
না, টাফনিল (Tufnil 200 mg) কোনো এন্টিবায়োটিক নয়। এন্টিবায়োটিক হলো এমন ওষুধ যা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর করতে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু টাফনিল ব্যাকটেরিয়া হত্যা করে না বা সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করে না। এটি মূলত ব্যথানাশক ঔষধ, তাই ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে এটি খেলে কোন লাভ হবে না।
মাথা ব্যথা হলেই কি Tufnil খাওয়া যায়?
মাথা ব্যথা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে Tufnil খাওয়া উচিত নয়। এটি একটি শক্তিশালী ব্যথানাশক, যা মূলত মাইগ্রেন বা তীব্র মাথাব্যথা এবং নির্দিষ্ট ধরনের ব্যথা উপশমের জন্য ব্যবহৃত হয়। সাধারণ বা হালকা মাথাব্যথার জন্য এটি নেওয়া প্রয়োজন হয় না। Tufnil খাওয়ার আগে অবশ্যই মাথাব্যথার কারণ সঠিকভাবে বোঝা জরুরি।