অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এড়াতে ইমারজেন্সি পিল খান কেউ কেউ। তবে বিশেষ প্রয়োজনের সময় খাওয়া হয় বলেই এর নাম ইমারজেন্সি পিল। বিবাহিতদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের ইমার্জেন্সি পিলের দরকার হয়ে পড়ে। তবে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় কিংবা দূর্ঘটনায় মিলনের ফলে আমরা অনেক বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ি। তখন আমাদের যেকোন রকমের সমাধানের দরকার হয়। তাছাড়া আমাদের সামনে যে সহজ একটা সমাধান আছে তা হল ইমার্জেন্সি পিল খাওয়া।
এটি একটি বিশেষ জন্ম নিরোধক প্রক্রিয়া। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ রোধে এটি অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এজন্য পিল সেবনের পর অনেকেই চিন্তা করেন যে কত দিন পর ইমার্জেন্সি পিল কাজ করে। আমরা ইমার্জেন্সি পিল সম্পর্কে আগেও বিভিন্ন তথ্য দিয়েছি আপনাদেরকে। ইমার্জেন্সি পিল কখন বা কিভাবে কাজ করে সেটা অবশ্যই পিল সেবনের পূর্বে আপনাদেরকে জেনে রাখতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পর বমি হলে যা করবেন
ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার কত সময় পরে কাজ করে?
ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পর এটি বেশ দ্রুত শরীরে কাজ করতে শুরু করে। সাধারণত ট্যাবলেট খাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এর ভেতরের হরমোন রক্তে মিশে ডিম্বাণু মুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে থাকে। তবে এর কার্যকারিতা নির্ভর করে কত দ্রুত এটি খাওয়া হয়েছে তার ওপর। যদি অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খাওয়া হয়, তবে কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খেলে কার্যকারিতা ধীরে ধীরে কমে যায়। বিশেষ কিছু ইমার্জেন্সি পিল আছে, যেগুলো ৫ দিন পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে, তবে সময় যত দেরি হবে, কার্যকারিতা তত কমবে।
যদি এমন সময়ে শারীরিক সম্পর্ক ঘটে, যখন নারীর ওভুলেশন বা ডিম্বাণু নিঃসরণ হয়ে গেছে, তখন ইমার্জেন্সি পিল ততটা কার্যকর নাও হতে পারে। কারণ, এই পিল মূলত ডিম্বাণু নিঃসরণ বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত করে কাজ করে। সাধারণভাবে ধরে নেওয়া হয়, মাসিক শুরু হওয়ার প্রায় ১৪ দিন আগে ওভুলেশন ঘটে। তবে অনেক সময় সঠিকভাবে বোঝা যায় না ঠিক কোন দিনে ওভুলেশন হয়েছে। তাই ওভুলেশন হয়ে গেলে ইমার্জেন্সি পিল গ্রহণ করলেও গর্ভধারণ প্রতিরোধের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
কখন বা কাদের ক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি পিল কাজ করেনা?
কিছু মহিলার ক্ষেত্রে বেশি ওজন থাকার কারণে ইমার্জেন্সি পিলের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। এছাড়া কেউ যদি অন্যান্য কোন হরমোনাল ওষুধ গ্রহণ করেন তাঁদের ক্ষেত্রেও ইমার্জেন্সি পিল কাজ না করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সব পরিস্থিতিতেই ইমার্জেন্সি পিল ১০০% কার্যকর নয়। আপনি সময় মত ওষুধ খেয়েছেন মানে এটা নয় এটা কাজ করবেই। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজ করে তারপরও কাজ না করারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারো যদি গুরুতর শারীরিক সমস্যা থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রেও পিল কাজ না করার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডিম্বস্ফোটন হয়ে গেলে ইমার্জেন্সি পিল কতটা কার্যকর হয়?
যদি ডিম্বস্ফোটন ইতিমধ্যেই হয়ে থাকে, তাহলে ইমার্জেন্সি পিলের কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। কারণ এই পিল মূলত ডিম্বস্ফোটনকে বিলম্বিত বা প্রতিরোধ করার মাধ্যমে গর্ভধারণ রোধ করে। ডিম্বস্ফোটন হয়ে গেলে ডিম ইতিমধ্যেই ডিম্বাশয় থেকে মুক্ত হয়েছে এবং শুক্রাণুর সাথে মিলিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমন পরিস্থিতিতে পিল খাওয়া হলেও তা গর্ভধারণ রোধে কার্যকর হয় না বা খুব সীমিত মাত্রায় কার্যকর হয়। তাই ডিম্বস্ফোটন এর আগেই খেতে হবে, নাহলে আর কিছু করার থাকবেনা।
ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পর যদি বমি হয়, তাহলে ওষুধ কতক্ষণে কার্যকর হবে?
ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পরে যদি বমি হয়, বিশেষ করে খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে, তখন ওষুধের পুরো কার্যকারিতা কাজ করতে পারে না। কারণ পিল পুরোপুরি শোষিত হওয়ার আগে বমি হলে ওষুধের বড় অংশ বের হয়ে যায় এবং গর্ভধারণ রোধের সম্ভাবনা কমে যায়। এই জন্য ২ ঘণ্টার মধ্যে বমি হলে সাধারণত নতুন একটি ইমার্জেন্সি পিল নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে পুনরায় ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পূর্বে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিতে হবে। অথবা ফার্মাসিস্ট এর সাথেও কথা বলতে পারেন।
FAQs
পিল খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কি গর্ভধারণের ঝুঁকি কমে যায়?
না, পিল খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গর্ভধারণের ঝুঁকি পুরোপুরি কমে যায় না। ইমার্জেন্সি পিল শরীরে হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন করে ডিম্বস্ফোটন বিলম্বিত করে বা নিষিক্ত ডিম্বাণুকে জরায়ুতে স্থাপন হতে বাধা দেয়। তাই পিল খাওয়ার পর এর কাজ শুরু হতে কিছুটা সময় লাগে। সাধারণত সম্পর্কের পর যত দ্রুত সম্ভব খেলে কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি থাকে এবং সময় যত দেরি হয়, কার্যকারিতা তত কমতে থাকে।
ইমার্জেন্সি পিল কি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কার্যকর হয় নাকি আরও বেশি সময় লাগে?
ইমার্জেন্সি পিল সবচেয়ে কার্যকর তখনই, যখন শারীরিক সম্পর্কের পর অবিলম্বে খাওয়া হয়। সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিল সেবন করলে। এই সময়ের মধ্যে খেলে গর্ভধারণের ঝুঁকি প্রায় ৯০% বা তার বেশি হারে কমে যায়। মোটকথা, ইমার্জেন্সি পিল একটি সময়সীমাভিত্তিক প্রতিকার, যেখানে দ্রুত সেবনই সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা দেয়।
৭২ ঘণ্টা বা ৫ দিনের মধ্যে খেলে কি সমান কার্যকর থাকে?
৭২ ঘণ্টা বা ৫ দিনের মধ্যে খেলে কার্যকারিতার পার্থক্য রয়েছে, তবে সেটা নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের ইমার্জেন্সি পিল ব্যবহার করছেন তার ওপর।লেভোনরজেস্ট্রেল যুক্ত পিল অরক্ষিত সহবাসের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সবচেয়ে খেতে হয় কারণ এই পিলের কার্যকারিতা এভাবেই রাখা হয়েছে। তবে সময় যত বাড়তে থাকে, এর কার্যকারিতা তত কমতে থাকে। অন্যদিকে, ইউলিপ্রিস্টাল অ্যাসিটেট যুক্ত পিলঅরক্ষিত সহবাসের পর ১২০ ঘণ্টা বা ৫ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে। এটি লেভোনরজেস্ট্রেল যুক্ত পিলের চেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কার্যকর।
যদি পিল সময়মতো খাওয়া না হয়, তাহলে এর কার্যকারিতা কতটা কমে যায়?
ইমার্জেন্সি পিল সময়মতো খাওয়া না হলে এর কার্যকারিতা দ্রুত কমে যায়। ইমার্জেন্সি পিল মানে এটি ইমার্জেন্সি ভাবেই খেতে হবে। যে পিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খেতে হবে সেটি যদি আপনি ২৪ ঘণ্টা পর খান তাহলে এর কার্যকারিতা থাকবেনা বললেই চলে। এছাড়া অন্যান্য মেয়াদে যে পিলগুলো রয়েছে সেগুলোই নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে না খেলে তাঁর আর কোন কার্যকারিতা থাকেনা। আপনি যদি পুরোপুরি নিশ্চিন্ত থাকতে চান তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিল খেয়ে নেওয়াই উত্তম।