পিরিয়ড নিয়মিত হওয়াটাকেই স্বাভাবিক সাস্থ্যের অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই এটি যখন নিয়মিত হয়না তখন একে বলে অনিয়মিত পিরিয়ড। অনেক নারীরই পিরিয়ড অনিয়মিত হয়। এ ধরনের সমস্যা শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নয়, মানসিক অবস্থার ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট কারণে এ অনিয়ম তৈরি হয়, তবে সঠিক চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। অনেকেই জানতে চান যে পিরিয়ড অনিয়মিত হলে কি ওষুধ খেতে হবে!
যেহেতু আমরা এখানে চিকিৎসার কথা বলছি সেহেতু ওষুধ অবশ্যই খেতে হবে, তবে তা অবশ্যই সঠিক বিবেচনার পর। আমরা পিরিয়ড সংক্রান্ত বেশ কিছু আর্টিকেল ইতিমধ্যেই এই ওয়েবসাইট এ পাবলিশ করেছি যাতে আপনারা এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারেন। সেই ধারাবাহিকতায় আজকে অনিয়মিত পিরিয়ডকে নিয়মিত করা সম্পর্কে আপনাদের যাবতীয় তথ্য দিতে চেষ্টা করবো।
আরও পড়ুনঃ পিরিয়ডের সময় মুড সুইং হওয়ার কারণ কী?
পিরিয়ড অনিয়মিত হয় কেন?
পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ কাজ করে। পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ায় চিকিৎসা নেওয়ার পূর্বে এই কারণ গুলো সম্পর্কে আগে জানতে হবে এবং আপনার কোন কারণে পিরিয়ড অনিয়মিত হচ্ছে তা বুঝতে হবে তারপর প্রয়োজন হলে চিকিৎসা নিতে হবে। কারণগুলো নিম্নরূপঃ
-
হরমোনের পরিবর্তন
হরমোনের অসমতা পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার প্রধান কারণ। বিশেষ করে প্রজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা মাসিক চক্রে প্রভাব ফেলতে পারে। এ দুই হরমোন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ওঠানামা করলে কারও মাসিক অনেক আগে চলে আসতে পারে, আবার কারও একেবারেই মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
-
মানসিক চাপ
অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ শরীরের স্বাভাবিক হরমোন নিঃসরণে প্রভাব ফেলে। মানসিক চাপের কারণে মাসিক চক্রে অনিয়ম দেখা দিতে পারে। কারও ক্ষেত্রে মাসিক একেবারে দেরি হয়ে যায়, আবার কারও ক্ষেত্রে স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রুত হতে পারে। তাই মানসিকভাবে অশান্ত বা চাপে থাকা নারীদের পিরিয়ডের নিয়মিততায় পরিবর্তন আসাটা বেশ স্বাভাবিক বিষয়।
-
ওজনের ভারসাম্যহীনতা
ওজন বাড়া বা কমার উপরে পিরিয়ড নিয়মিত হওয়ার ব্যাপারটি নির্ভর করে। আপনার ওজন যদি অনেক বেশি হয় তাহলে পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার চান্স থাকে। আবার ওজন যদি খুব কম হয় তাহলেও পিরিয়ড নিয়মিত হতে বাঁধা পায়। মোটকথা, ওজন স্বাভাবিক না থাকলে তা পিরিয়ডের উপরেও প্রভাব ফেলে।
-
থাইরয়েড সমস্যা
কারো যদি থাইরয়েড সমস্যা থাকে তাহলে তা মাসিক চক্রকেও প্রভাবিত করতে পারে। তাই যাদের থাইরয়েড এর সমস্যা আছে তাঁদের মসিক প্রায়ই অনিয়মিত হয়ে থাকে।
-
বেশি শারীরিক পরিশ্রম
অনেকেই আছেন যারা খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রম করেন বা নিয়মিত অনেক বেশি ব্যায়াম করেন। খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রম অনেক সময় হরমোন উৎপাদনে বাঁধা দেয়। আবার ব্যায়াম সাস্থ্যের পক্ষে ভালো হলেও খুব পরিশ্রমের ব্যায়াম গুলো একইভাবে মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করে।
-
ডিম্বাশয়ে সিস্ট হওয়া
এটি অনেক নারীদেরই হয়ে থাকে। একে বলে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম। এই সমস্যাটির ফলে ডিম্বাণু পরিপক্ব হতে বাধা পায়। ফলে পিরিয়ড দেরিতে হয় বা কখনও কখনও একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।
-
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের প্রভাব
অনেকসময় জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল সেবন করলে মাসিক অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে। এটি ইমারজেন্সি পিলের ক্ষেত্রে বেশি হয়। আবার কেউ কেউ মাত্রাতিরিক্ত পিল যেসব করে থাকেন এবং পরবর্তীতে তাঁদের মাসিক অনিয়মিত হয়।
-
দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা
দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণে মাসিক স্বাভাবিকভাবে হয়না। শরীর ক্রমাগত অসুস্থ থাকলে ডিম্বাণু সেভাবে উৎপন্ন হয়না, ফলে মাসিকের সময় পিছিয়ে যায়। এমনকি অনেকদিন পরপর অল্প অল্প হতে দেখা যায়।
পিরিয়ড অনিয়মিত হলে কি ওষুধ খাওয়া ঠিক হবে?
আগেই বলেছি যে পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে হয় এটি সময়ের আগে হচ্ছে নয়তো সময় পার হয়ে গেছে তাও হচ্ছেনা। এমনকি যদি এক মাসে কয়েকবার মাসিক হয় তাহলেও তা অনিয়মিত মাসিক হিসেবেই ধরা হয়। আপনাকে ওষুধ খেতে হবে কিনা তা নির্ভর করে মাসিক অনিয়মিত হওয়ার ধরন কেমন বা কারণ কী তাঁর উপর। যদি মাসিক দেরিতে হয় তাহলে ওষুধ খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
এমনকি মাসিক যদি ১ মাস বন্ধও থাকে তাও ওষুধ খেতে হবেনা। তবে যদি ১ মাসে ২/৩ বার পিরিয়ড হয় বা প্রচুর রক্তপাত হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে কখনোই নিজে ধারনা করে বা কারো থেকে শুনে ওষুধ খাওয়া যাবেনা। চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে এবং তিনি যদি কোন ওষুধ খেতে বলেন তাহলে সেটাই খেতে হবে।
যে বয়সেই হোক না কেন, মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়া মেয়েদের জন্য একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণভাবে, মাসিক শুরু হওয়ার সময় থেকে মেনোপজ পর্যন্ত নিয়মিত মাসিকই নারী প্রজননস্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। যদি এই নিয়ম ভেঙে যায় বা দীর্ঘসময় ধরে অনিয়ম দেখা দেয়, তবে অবহেলা না করে অবশ্যই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে জটিল রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয় এবং ভবিষ্যতের বড় ধরনের ঝুঁকি থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।
পিরিয়ড অনিয়মিত হলে কোন ওষুধ খেতে হয়?
Normens Tablet মূলত নারীদের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং মাসিক সংক্রান্ত সমস্যাগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবহৃত হয়। এটি পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS), অনিয়মিত মাসিক, হরমোনজনিত অসুবিধা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। সাধারণত Normens Tablet ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা হতে পারে, তবে সঠিক সময়কাল নির্ভর করে নারীর সমস্যার ধরন ও তীব্রতার উপর। চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করলে সর্বোত্তম ফলাফল পাওয়া যায়। এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সাধারণত খুব কম, তবে কারো কারো হজমের সমস্যা বা মাথাব্যথা হতে পারে।
FAQs
পিরিয়ড অনিয়মিত হলে কি সবারই ওষুধ খাওয়া দরকার?
না, সবার ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি সমস্যা গুরুতর হয় তাহলে ওষুধ খাওয়া যেতে পারে তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে। সাধারণত অনিয়মিত পিরিয়ডকে নিয়মিত করতে হলে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হয়। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করা, মানসিক চাপমুক্ত থাকা, ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা – এগুলো করলেই পিরিয়ডের এই অনিয়মিততা দূর হয়ে যায়।
পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার কোন পরিস্থিতিতে চিকিৎসক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন?
যদি মাসিকে দীর্ঘমেয়াদী অনিয়ম থাকে তাহলে তখন চিকিৎসকরা ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন। এছাড়া যাদের থাইরয়েড সমস্যা আছে বা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর মত সমস্যা আছে তাঁদের পিরিয়ড অনিয়মিত হতেই থাকে। এক্ষেত্রে চিকিৎসাই একমাত্র সমাধান হিসেবে বিবেচিত হয়।
পিরিয়ড অনিয়মিত হলে নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধ খাওয়া কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?
নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া কোনো সমাধান নয়, বরং এটি আপনার জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়া কেবল সাময়িক সমস্যা নয়, বরং এর পেছনে অন্য কোনো গুরুতর স্বাস্থ্যগত কারণ থাকতে পারে। নিজে ওষুধ খাওয়ার ফলে অন্য কন শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই যদি সমস্যা বেশি মনে হয় তাহলে অবশ্যই ভালো ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিৎ।
পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি হলে কি ঔষধ খেতে হবে?
হ্যাঁ, সাধারণভাবে যদি পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি চলে এবং স্বাভাবিকের তুলনায় রক্তপাত অনেক বেশি হয়, তবে এটি অস্বাভাবিক অবস্থার লক্ষণ। পিরিয়ড সাধারণত ৩ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়, বা ৭ দিনও হতে পারে। তবে ১০ দিনের বেশি হয়না বা হওয়া উচিৎ নয়। যদি কারো এমনটা হয়ে থাকে তাহলে এটি অবহেলা না করে চিকিৎসা করাতে হবে।