মোনাস ১০ এর কাজ কি? কখন ও কীভাবে খেতে হয়?

মোনাস ১০ হলো একটি জনপ্রিয় ওষুধ যা শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত নানা সমস্যার চিকিৎসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে কাশি, ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্ট খুবই সাধারণ সমস্যা, যা প্রায়ই জ্বরের সঙ্গেও দেখা যায়। এই অবস্থায় অনেকেই দ্রুত উপশমের জন্য বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করেন, আর মোনাস ১০ তাদের মধ্যে অন্যতম। আজ আমরা জানবো মোনাস ১০ এর কাজ কি, এটি কখন কিভাবে খেতে হয় ইত্যাদি সম্পর্কে। 

এই ওষুধের প্রধান সক্রিয় উপাদান হলো মন্টেলুকাস্ট (Montelukast), যা শ্বাসনালীর প্রদাহ বা ফোলাভাব কমিয়ে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে সহায়তা করে। এটি শরীরে লিউকোট্রিন নামক প্রদাহজনক রাসায়নিকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, ফলে কাশি ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ কমে যায়। বিশেষ করে হাঁপানি, অ্যালার্জি বা ঋতু পরিবর্তনজনিত শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য মোনাস ১০ একটি কার্যকর ও নিরাপদ চিকিৎসা উপাদান হিসেবে বিবেচিত।

আরও পড়ুনঃ Othera 20 কিসের ঔষধ?

মোনাস ১০ এর কাজ কি?

Monas 10 হলো বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ওষুধ, যা উৎপাদন করে দেশের সুপরিচিত ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ACME Laboratories Ltd.। দীর্ঘদিন ধরে ACME বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে মানসম্মত ও কার্যকর ঔষধ সরবরাহ করে আসছে। তাদের অন্যতম সফল পণ্য Monas 10 বিশেষভাবে হাঁপানি ও Allergic Rhinitis রোগের চিকিৎসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

Monas 10 mg ট্যাবলেটের প্রধান সক্রিয় উপাদান হলো Montelukast Sodium, যা শরীরে উপস্থিত Leukotriene নামক রাসায়নিক পদার্থের ক্রিয়া প্রতিহত করে। এই লিউকোট্রিন রাসায়নিকটি শ্বাসনালীর প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং সংকোচন ঘটায়, যার ফলে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। Monas 10 সেই প্রদাহ কমিয়ে শ্বাসনালীকে স্বাভাবিক রাখে এবং শ্বাস নেওয়া সহজ করে তোলে। এ এছাড়াও, এই ওষুধটি নাসারন্ধ্রের প্রদাহ ও অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি রাতের হাঁপানির সমস্যা কমায় এবং শারীরিক পরিশ্রম বা অনুশীলনের পরে শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি হ্রাস করে। 

কোন কোন ক্ষেত্রে মোনাস ১০ সেবন করা হয়? 

when to take monas 10

আগেই কিছুটা বলেছি যে মোনাস ১০ কেন খাওয়া হয়। এই ঔষধটির কার্যকারিতা অনেক। একই জাতীয় বিভিন্ন উপসর্গে এই ঔষধটি সেবন করা হয়ে থাকে।  নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো, কোন কোন ক্ষেত্রে মোনাস ১০ সেবন করা হয়ঃ  

  • হাঁপানি 

Monas 10 সেবন করলে লিউকোট্রিনের প্রভাব কমে যায়, ফলে শ্বাসনালীর প্রদাহ ও সংকোচন হ্রাস পায়। সাধারণত এটি দীর্ঘমেয়াদি রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, অর্থাৎ রোগীর দৈনন্দিন ওষুধের অংশ হিসেবে শরীরে বারবার হাঁপানি হলে আক্রমণের ধরণ ও তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। 

  • এলার্জিক রাইনাইটিস 

যাদের নাকের সমস্যা এবং হাঁপানি দুটোই আছে, তাদের ক্ষেত্রে Monas 10 একসঙ্গে উপকার দেয়। তবে নাসারাশিক্সে এর বিকল্প নয়; চিকিৎসক প্রয়োজনমতো শক্তিশালী বা সম্মিলিত থেরাপি সাজেস্ট করবেন।

  • রাত্রীকালের হাঁপানি 

অনেক হাঁপানি রোগীর সমস্যা রাতের বেলায় বেশি তীব্র হয়, রাতে শ্বাসকষ্ট, ঘন ঘন জাগনা বা কাশি বেড়ে যায়। এই ঔষধ সাধারণত রাতে খাওয়ার জন্য দেওয়া হয় কারণ এটি সারারাত শ্বাসনালীকে শান্ত রাখে এবং রাতের আক্রমণ কমায়। 

  • অ্যালার্জি জনিত সমস্যা 

এই ঔষধটি শরীরের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া কিছু মাত্রায় কমায়, ফলে মৌসুমী অ্যালার্জি জনিত ঝুঁকি হ্রাস পায়। Montas 10 নিয়মিত গ্রহণ করলে উপশম পেতে পারেন এটি থেকে উপশম পেতে পারেন। 

  • শিশুদের দীর্ঘমেয়াদী কাশি 

Monas 10 শিশুদের জন্য একটি বিশেষ ফর্মুলেশন, যা ৬ বছর বা তার বেশি বয়সী শিশুদের ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত। যেসব শিশু প্রায়ই রাতে হাঁপানির সমস্যা, কাশি বা ব্যায়াম করার পর শ্বাসকষ্টে ভোগে, তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধটি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। 

মোনাস ১০ কীভাবে সেবন করতে হয়?

মোনাস ১০ সাধারণত রাতে ঘুমানোর আগে খাওয়া হয়, কারণ রাতে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের প্রবণতা বেশি থাকে এবং এই সময় ওষুধ গ্রহণ করলে পুরো রাত কার্যকারিতা থাকে। বয়স্ক ও ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের জন্য সাধারণত প্রতিদিন ১টি ১০ mg ট্যাবলেট নির্ধারণ করা হয়, আর শিশুদের ক্ষেত্রে ৫ mg ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়, তবে বয়স অনুযায়ী ডোজ ভিন্ন হতে পারে। মোনাস ১০ খাবারের সঙ্গে বা খাবার ছাড়াও গ্রহণ করা যায়, তবে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া সবচেয়ে ভালো। নিয়মিত ও নির্ধারিত মাত্রায় মোনাস ১০ গ্রহণ করলে হাঁপানি ও অ্যালার্জির উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

মোনাস ১০ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ 

অন্যান্য সব ওষুধের মতো মোনাস ১০-এরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সাধারণত খুব বেশি গুরুতর নয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই অল্প সময়ের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে সেরে যায়। নিচে মোনাস ১০ এর সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ 

  • মোনাস ১০ সেবনের পর অনেক রোগীর মাথাব্যথা হতে পারে। এটি সাধারণত হালকা মাত্রার হয় এবং সময়ের সঙ্গে কমে যায়। 
  • এই ওষুধটি কিছু মানুষের ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিক, বুকজ্বালা বা পেটের অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। 
  • মোনাস ১০ কখনও কখনও শরীরে অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা তৈরি করতে পারে। 
  • কিছু ক্ষেত্রে এই ওষুধ সেবনের পর গলা শুষ্ক মনে হতে পারে বা তৃষ্ণা বেড়ে যেতে পারে। 
  • কিছু রোগীর ডায়রিয়া হতে পারে এবং সাধারণত এটি ১/২ দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়।
  • কিছু ক্ষেত্রে রোগীরা রাগ বা মেজাজের ওঠানামা অনুভব করতে পারেন। 

মোনাস ১০ এর দাম কত? 

বাংলাদেশে মোনাস ১০ mg দেশের প্রায় সব ফার্মেসিতে পাওয়া যায়। এর প্রতিটি ট্যাবলেটের গড় মূল্য প্রায় ১৭.৫০ টাকা, এবং একটি স্ট্রিপে সাধারণত ৩০টি ট্যাবলেট থাকে। ফলে পুরো প্যাকেটের দাম দাঁড়ায় আনুমানিক ৫২৫ টাকা। এখনও পর্যন্ত দাম এমনই আছে। স্থান ও দোকান ভেদে দাম কিছুটা কম বেশি হতে পারে। 

FAQs

মোনাস ১০ কি হাঁপানির তাৎক্ষণিক অ্যাটাক বন্ধ করতে পারে?

না, মোনাস ১০ তাৎক্ষণিকভাবে হাঁপানির অ্যাটাক বন্ধ করতে সক্ষম নয়। এটি প্রতিরোধমূলক ঔষুধ হিসেবে কাজ করে, অর্থাৎ নিয়মিত সেবনের মাধ্যমে শ্বাসনালীতে প্রদাহ কমায় এবং হাঁপানির সম্ভাব্য আক্রমণ ও উপসর্গকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই হাঁপানির তীব্রতার সময় মোনাস ১০ ব্যবহার করা উচিত নয়; এমন ক্ষেত্রে সাধারণত ব্রোঙ্কোডাইলেটর বা ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়।

মোনাস ১০ নিয়মিত সেবন না করলে কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?

যদি মোনাস ১০ নিয়মিতভাবে সেবন করা না হয়, তাহলে হাঁপানি ও এলার্জি সংক্রান্ত উপসর্গগুলো বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে শ্বাসনালীর প্রদাহ বেড়ে যায়, যার ফলে রোগীর শ্বাসকষ্ট ও কাশিও বৃদ্ধি পেতে পারে। Monas 10 এর যথাযথ উপকার পেতে হলে অবশ্যই এটি নিয়মিত সেবন করা জরুরি। 

Author

  • ডাঃ তানহা একজন নিবেদিতপ্রাণ মেডিসিন ও গাইনী বিশেষজ্ঞ, যিনি বর্তমানে একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। অভ্যন্তরীণ রোগ ও নারীস্বাস্থ্য বিষয়ে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তিনি নারীদের স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সঠিক ও প্রমাণভিত্তিক তথ্য প্রচারে বিশ্বাসী। Emergencypillbd.com-এ তিনি নিয়মিতভাবে প্রেগন্যান্সি, পিরিয়ড, ইমার্জেন্সি পিল এবং নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা শেয়ার করে থাকেন, যা নারীদের সুস্থ জীবনযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

Leave a Comment