গর্ভধারণের প্রথম মাসে গর্ভবতী হওয়ার তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তাই এসময়ে লক্ষণের ভিত্তিতে গর্ভাবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া বেশ কঠিন। এই অবস্থায় আপনি যদি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করেন তাহলে নেগেটিভ রেজাল্ট পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এজন্য সহবাসের পর কমপক্ষে ২১ দিন অথবা পরবর্তী মাসিকের সম্ভাব্য তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। সন্দেহ হবার সাথে সাথেই টেস্ট করলে আপনি সঠিক রেজাল্ট পাবেন না।
কাজেই, আপনাকে জানতে হবে যে গর্ভাবস্থার কত দিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ হয় বা কখন আসলে টেস্ট করা উচিৎ। আজকের এই লেখাটি থেকে আপনারা এগুলোর বিস্তারিত জানবেন। সঠিক তথ্য না জানার কারণে অনেকেই নেগেটিভ ফলাফল পান এবং ভাবেন যে তাঁরা গর্ভধারণ করেন নি। তাই আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করবে যে আপনি শুরুর দিকে কতটা সত্যি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণ কী? প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কত দিনে বুঝা যায়?
প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার সঠিক সময়
যদি নির্দিষ্ট সময়ে মাসিক না হয় এবং সম্প্রতি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করে সহবাস করে থাকেন, তবে গর্ভধারণ হয়েছে কি না নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা প্রয়োজন। সাধারণত মাসিক মিস হওয়ার প্রথম দিন থেকেই হোম প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহার করে পরীক্ষা করা যায়। এতে দ্রুত জানা সম্ভব হবে আপনি গর্ভবতী কিনা, ফলে প্রয়োজনে সময়মতো নিজের যত্ন নেওয়া এবং গর্ভের শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করতে পারবেন।
তবে অনেক সময় প্রথম পরীক্ষায় নেগেটিভ আসলেও গর্ভধারণ হয়ে থাকতে পারে। তাই যদি মাসিক বন্ধ হওয়ার পরও গর্ভধারণের লক্ষণ যেমন বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা বা শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তাহলে ২/৩ দিন পর আবার পরীক্ষা করা উচিত। আর নিশ্চিতভাবে ফলাফল জানার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা বা সরাসরি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
কতদিন পর টেস্ট করলে রিপোর্ট পজিটিভ আসে?
আপনি যদি প্রেগন্যান্সি টেস্ট এর সঠিক রিপোর্ট পেটে চান তাহলে পিরিয়ড মিস হওয়ার ১০ দিন পর টেস্ট করুন। এ সময়ের মধ্যে শরীরে hCG-এর পরিমাণ বেড়ে যায় এবং টেস্টে সহজেই ধরা পড়ে। ফলে রিপোর্ট পজিটিভ আসার সম্ভাবনা বেশি হয়। যদি সাথে সাথে টেস্ট করেন তাহলে আপনি গর্ভধারণ করলেও রিপোর্ট আসবে নেগেটিভ। তাই কিছুটা দেরি করে টেস্ট করলে আপনি সঠিক রিপোর্টই পাবেন, অর্থাৎ রিপোর্ট পজিটিভ আসবে।
তবে যদি মাসিক বন্ধ হওয়ার প্রথম দিনেই টেস্ট করে নেগেটিভ ফল পান, অথচ শরীরে গর্ভধারণের মতো লক্ষণ যেমন বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, স্তনে টান অনুভূত হওয়া ইত্যাদি দেখা যায়, তাহলে কয়েক দিন অপেক্ষা করে আবার টেস্ট করা উচিত। আরও নিশ্চিত হতে চাইলে রক্ত পরীক্ষা করতে পারেন। এটি ইউরিন টেস্টের তুলনায় অনেক আগে থেকেই গর্ভধারণ শনাক্ত করতে পারে।
একটি মিসড পিরিয়ড কী গর্ভধারণের ইঙ্গিত হতে পারে?
মাসিক মিস হওয়া সাধারণত গর্ভধারণের প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। তবে অনেক সময় মহিলারা তাদের মাসিকের তারিখ ঠিকমতো হিসাব রাখেন না, ফলে পিরিয়ড দেরি হয়েছে নাকি একেবারেই মিস হয়েছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়। সাধারণত যদি শেষ মাসিকের পর থেকে এক মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে যায়, তবে গর্ভধারণের সম্ভাবনা আছে কি না নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা উচিত।
সকালে প্রস্রাবে hCG হরমোনের ঘনত্ব বেশি থাকে, তাই অনেক সময় ফলাফল দ্রুত ধরা পড়ে। তবুও দিনে যেকোনো সময়ে পরীক্ষা করলেও ফলাফল সঠিক আসতে পারে।
এছাড়া, প্রথম টেস্ট নেগেটিভ আসলেও গর্ভধারণ হয়ে থাকতে পারে। কারণ, গর্ভধারণের শুরুর দিকে শরীরে হরমোনের মাত্রা খুব বেশি থাকে না। তাই যদি মাসিক মিস হওয়ার পরও গর্ভধারণের লক্ষণ অনুভব করেন, তবে কয়েক দিন পর আবার টেস্ট করা উচিত। প্রয়োজনে একাধিকবার পরীক্ষা করলে আরও নির্ভুল ফলাফল পাওয়া যায়।
FAQs
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিসের উপর নির্ভর করে পজিটিভ দেখাবে?
প্রেগন্যান্সি টেস্টের ফলাফল আসলে শরীরে উপস্থিত একটি বিশেষ হরমোনের উপর নির্ভর করে, যার নাম হলো hCG। গর্ভসঞ্চার হওয়ার পর ভ্রূণ যখন জরায়ুর ভেতর স্থাপিত হয়, তখন থেকেই এই হরমোন মায়ের শরীরে উৎপাদন শুরু হয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর মাত্রা বাড়তে থাকে। টেস্ট করার সময় প্রস্রাব বা রক্তে এই হরমোনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হলে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। সাধারণত হোম ইউরিন টেস্ট কিট প্রস্রাবের মধ্যে hCG সনাক্ত করে। তাই বলা যায়, প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ দেখাবে তখনই, যখন শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ hCG হরমোন তৈরি হবে।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার সঠিক সময় কখন?
প্রেগন্যান্সি টেস্টের সঠিক ফলাফল পাওয়ার জন্য সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথম প্রস্রাব দিয়ে পরীক্ষা করা সবচেয়ে উপযোগী। সকালে প্রস্রাব সাধারণত দিনের অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ঘনীভূত থাকে, ফলে এতে থাকা hCG হরমোন সহজে শনাক্ত হয়। এই কারণে সকালে টেস্ট করলে ফলাফল অনেক নির্ভুল আসে। তবে মাসিক মিস হওয়ার দিনেই পরীক্ষা করলে কখনও কখনও রিপোর্ট ভুল নেগেটিভ দেখাতে পারে, কারণ গর্ভসঞ্চারের পর শরীরে hCG হরমোনের মাত্রা পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পায়নি। বেশি তাড়াহুড়ো করে পরীক্ষা করলে ফলাফল নির্ভুল নাও হতে পারে, তাই ধৈর্য ধরে সঠিক সময়ে পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রেগন্যান্সি টেস্টের ফলাফল কখন ভুল হতে পারে?
প্রেগন্যান্সি টেস্টের ফলাফল কিছু ক্ষেত্রে ভুল হতে পারে। সাধারণত গর্ভধারণের খুব শুরুর দিকে টেস্ট করলে শরীরে hCG হরমোনের পরিমাণ কম থাকে, তাই তখন টেস্ট নেগেটিভ দেখাতে পারে, যদিও আসলে গর্ভধারণ হয়ে গেছে। আবার কখনও টেস্ট সঠিকভাবে না করা, মেয়াদোত্তীর্ণ টেস্ট কিট ব্যবহার করা বা প্রস্রাবের নমুনা যথাযথভাবে না নেওয়ার কারণেও ভুল ফলাফল আসতে পারে।এছাড়াও খুব বেশি পরিমাণে পানি পান করার পর টেস্ট করলে প্রস্রাব পাতলা হয়ে যায়, ফলে hCG হরমোন শনাক্ত করা কঠিন হয়। তাই টেস্ট সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে এবং প্রয়োজনে একাধিকবার করা জরুরি।
হরমোন hCG কীভাবে প্রেগন্যান্সি টেস্টে ফলাফল প্রভাবিত করে?
HCG হরমোনের উপস্থিতিই হলো টেস্টের ফলাফল পজিটিভ হওয়ার একমাত্র কারণ। আপনার প্রস্রাবে hCG এর পরিমাণ যত বেশি হবে, টেস্ট লাইনের রঙ তত গাঢ় হবে। hCG না থাকলে বা এর মাত্রা খুব কম হলে কিটে রঙিন রেখাটি দেখা যাবে না। HCG হরমোনের পর্যবেক্ষণ গর্ভাবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে কাজ করে এবং এটি নিশ্চিত করে যে সবকিছু স্বাস্থ্যকরভাবে অগ্রসর হচ্ছে। যদি এই মাত্রা প্রত্যাশিতভাবে বৃদ্ধি না পায়, তাহলে এটি কোনো জটিলতার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিতে পারে।