মা হওয়ার অনুভূতি একজন নারীর জীবনে সবচেয়ে আশীর্বাদপূর্ণ ও আনন্দঘন মুহূর্ত। আপনি কি জানেন গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণ কী? গর্ভধারণের সময় শরীরে একাধারে শারীরিক ও মানসিক অনেক পরিবর্তন দেখা দেয়, যা আসলে মায়ের দেহে একটি নতুন প্রাণের সূচনার ইঙ্গিত দেয়। এই পরিবর্তনগুলোই প্রেগনেন্সির প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ধরা পড়ে।
এসব লক্ষণ সাধারণত প্রেগনেন্সির শুরুর দিকেই প্রকাশ পায় এবং এগুলোর মাধ্যমে একজন নারী বুঝতে পারেন যে তাঁর শরীরে এক নতুন প্রাণ বেড়ে উঠছে। তাই গর্ভাবস্থার শুরুতেই এই লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আজ আমরা গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণ গুলো সম্পর্কে আলোচনা করবো। আশা করছি আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর এর মধ্যেই পেয়ে যাবেন।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা কি স্বাভাবিক?
গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণ কী?
যদি গর্ভাবস্থার প্রথম লক্ষণের কথা বলতে হয় তাহলে অবশ্যই সেটি হবে পিরিয়ড বা মাসিক বন্ধ হওয়া। বিবাহিত নারী যারা যৌন সঙ্গমের পর কোন পিল গ্রহণ করেননি তাঁদের যদি মাসিক বন্ধ হয়ে যায় হঠাৎ তাহলে প্রায় নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে এটি গর্ভধারণের লক্ষণ। অথবা অনেকেই আছেন যারা পিল খাওয়ার পরও নির্ধারিত সময়ে পিরিয়ড হয় না। এক্ষেত্রে পিল অনেকসময় কাজ না করার ফলে বাচ্চা কনসিভ হয়ে যায়। সুতরাং যৌন সঙ্গমের পর আপনার যদি পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করানোর দরকার কারণ রিপোর্ট পজিটিভ আসার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি।
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলিঃ

গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলো শরীরের স্বাভাবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। অনেক সময় এগুলো সাধারণ অসুস্থতার মতো মনে হতে পারে, তবে কয়েকটি লক্ষণ একসাথে দেখা দিলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা জোরালো হয়। নিচের লক্ষণগুলিকে গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়ঃ
-
মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া
গর্ভধারণের সবচেয়ে প্রথম ও স্পষ্ট লক্ষণ হলো নিয়মিত মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া। তবে এটি প্রাথমিক লক্ষণ। পিরিয়ড বন্ধ মানেই যে আপনি মা হতে যাচ্ছেন বিষয়টা এমন নয়। তাই টেস্ট করানো জরুরী।
-
বমি বমি ভাব
এটি গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ সপ্তাহের মধ্যে দেখা দিতে পারে। বমি বা বমি ভাব সাধারণত সকালে বেশি হয়, তবে সারাদিনও থাকতে পারে। এ সময় খাবার বা গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা হওয়া, অথবা এমনিতেই বমি বমি লাগতে পারে।
-
অতিরিক্ত ক্লান্তি ভাব
গর্ভাবস্থার শুরুতে প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা দ্রুত বাড়তে থাকে, যা শরীরকে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি শান্ত ও নিস্তেজ করে তোলে। এর ফলে ঘন ঘন ঘুম পেতে পারে এবং সারাক্ষণ ক্লান্তি অনুভব হতে পারে। এছাড়াও শরীরে অতিরিক্ত রক্ত উৎপন্ন হয়, ফলে হৃদপিণ্ড বেশি কাজ করে, যা ক্লান্তির একটি কারণ।
-
স্তনে ব্যথা বা ফুলে যাওয়া
গর্ভধারণের শুরুতেই শরীরে হরমোনের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায়, যার প্রভাব প্রথমে পড়ে স্তনের ওপর। এ সময় স্তন ফুলে ওঠে, স্পর্শে ব্যথা অনুভূত হয় এবং স্তনের বর্ণ একটু গাঢ় হয়ে যেতে পারে। এসব পরিবর্তন ইঙ্গিত করে যে স্তন শিশুকে দুধ খাওয়ানোর জন্য ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করছে।
-
ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ
গর্ভাবস্থায় শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়তে থাকায় কিডনির ওপর চাপও বৃদ্ধি পায়। কিডনি তখন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তরল ছেঁকে বের করে, যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ অনুভূত হয়। এই লক্ষণটি পুরো গর্ভকালীন সময়জুড়েই থাকতে পারে।
-
ঘন ঘন গ্যাস হওয়া
কনসিভ করলে হজমপ্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলে, যার ফলে পেট ফাঁপা বা গ্যাস তৈরি হয়। এটি মাসিক শুরুর আগের লক্ষণের মতো মনে হলেও গর্ভধারণের ক্ষেত্রেও এটি সাধারণ। তাই এই লক্ষণটিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
-
হালকা রক্তপাত
গর্ভধারণের ৬ থেকে ১২ দিনের মধ্যে হালকা রক্তপাত হতে পারে। এটি সাধারণত গাঢ় বাদামি বা হালকা গোলাপি রঙের হয়। এই রক্তপাত বেশিদিন স্থায়ী হয় না, মাত্র ১ থেকে ২ দিন এটি থাকতে পারে।
-
টান অনুভব করা
গর্ভাবস্থার শুরুতে যখন জরায়ু ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে, তখন পেটের নিচের দিকে টান লাগা বা হালকা ব্যথা অনুভব হতে পারে। এটি সাধারণত স্বাভাবিক একটি লক্ষণ। সব মায়েদেরই গর্ভধারণের পর এমনটা হয়ে থাকে।
-
খাবারে রুচি পরিবর্তন
অনেক সময় আগে যেসব খাবার ভালো লাগত, তা সহ্য হয় না, আবার হঠাৎ অদ্ভুত কোনো খাবার খেতে ইচ্ছা করে। সাধারণত গর্ভধারণের শুরুর দিকেই এই লক্ষণটি দেখা দেয়।
FAQs
শুধু লক্ষণ দেখে গর্ভধারণ নিশ্চিত করা সম্ভব কি?
না, শুধু লক্ষণ দেখে গর্ভধারণ নিশ্চিত করা সম্ভব নয় কারণ এর সাথে আরও কিছু লক্ষণ জড়িত থাকতে হবে যেমন বমি বমি ভাব, স্তন ফুলে যাওয়া, খাবারে অরুচি ইত্যাদি। তবে এগুলো গর্ভধারণের নিশ্চিত প্রমাণ নয়। কারণ এসব লক্ষণ অন্য অনেক শারীরিক বা মানসিক কারণে ঘটতে পারে। গর্ভধারণ নিশ্চিত করতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হলো প্রেগন্যান্সি টেস্ট। তবে আপনি যদি বিবাহিত হন তাহলে এই লক্ষণ গুলো আপনার ক্ষেত্রে পজিটিভ হবার সম্ভাবনাই বেশি।
প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কত দিনে বুঝা যায়?
গর্ভধারণের লক্ষণ সাধারণত গর্ভধারণের ১ম সপ্তাহ থেকে ৩য় সপ্তাহের মধ্যে ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করে। তবে অধিকাংশ নারী গর্ভধারণের ১০ থেকে ১৪ দিন পর, অর্থাৎ পিরিয়ড মিস হওয়ার সময়েই প্রথম লক্ষণগুলো স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন।
সব নারীর কি একই ধরনের গর্ভধারণের লক্ষণ দেখা যায়?
না, সব নারীর ক্ষেত্রে গর্ভধারণের লক্ষণ একরকম হয় না। গর্ভাবস্থার লক্ষণ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে। কিছু নারী গর্ভাবস্থার একেবারে প্রথম থেকে শরীরের পরিবর্তন বুঝতে পারেন, অন্যদিকে কেউ হয়তো অনেক সপ্তাহ পর গর্ভধারণ বুঝতে পারেন। এজন্য লক্ষণ দেখেই নিশ্চিত না হয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া উচিত।
ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ কি গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে?
হ্যাঁ, ঘন ঘন প্রসাবের চাপ থাকা সাধারণত গর্ভধারণেই লক্ষণ। গর্ভাবস্থার প্রথম ২ থেকে ৩ সপ্তাহ থেকেই অনেক নারী দিনে এবং রাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ অনুভব করতে পারেন। তবে প্রসাবের চাপ মানেই যে আপনি গর্ভধারণ করেছেন বিষয়টা এমন নাও হতে পারে, অন্যান্য শারীরিক সমস্যার জন্যও অনেক সময় প্রসাবের চাপ বাড়ে। তাই নিশ্চিত হবার জন্য টেস্ট করাতে হবে।
গর্ভধারণের ফলে কেন অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব হয়?
গর্ভধারণের শুরুতেই অনেক নারী প্রচণ্ড ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব অনুভব করেন। এর প্রধান কারণ শরীরে প্রোজেস্টেরন নামক হরমোনের দ্রুত বৃদ্ধি। এই হরমোন নারীর দেহে অবসাদ এনে দেয়, ফলে সারাদিনই ঝিম ঝিম ভাব থাকতে পারে। একজন নারী গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে বিশেষভাবে ক্লান্ত বোধ করেন।