মাসের একটি নির্দিষ্ট সময় অনেক নারীর জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে বেশ কষ্টকর হয়ে ওঠে, আর সেটা হচ্ছে পিরিয়ড। শরীরে হরমোনের ওঠানামার কারণে মুড সুইং হয়, অর্থাৎ স্বল্প সময়ের মধ্যে মেজাজের পরিবর্তন ঘটে এবং অস্থিরতা বেড়ে যায়। অনেকেই খুবই মানসিক চাপ অনুভব করেন। অথচ এই সময়ে যত চাপমুক্ত থাকা যায় ততই ভালো। স্ট্রেস কম থাকলে শরীর স্বাভাবিকভাবে হরমোন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, ফলে ব্যথা, অস্বস্তি ও মানসিক অস্থিরতা কম হয় এবং সামগ্রিকভাবে পিরিয়ডের সময় সুস্থ থাকা যায়। তাই আজকে আমরা আপনাদেরকে জানাবো যে পিরিয়ডের সময় স্ট্রেস কমানোর উপায় কী, আর এই মানসিক চাপ কেনই বা হয়।
আরও পড়ুনঃ পিরিয়ডের সময় কী কী খাবার খাওয়া উচিত?
পিরিয়ডের সময় স্ট্রেস কেন হয়?
পিরিয়ডের স্ট্রেস সাধারণত শুরু হয় পিরিয়ড হওয়ার আগে থেকেই। পিরিয়ড হবে বা কবে হবে এই নিয়ে সর্বদাই একটি চিন্তা চলতে থাকে মনের ভিতর। আবার পিরিয়ড হতে দেরি হলেও অনেকেই চিন্তা করতে থাকেন। এরপর যখন পিরিয়ড শুরু হয় তখন শারীরিক অসস্তির কারণে প্রায়ই মানসিক চাপ অনুভূত হয়। এটি মূলত হয় হরমোনের ওঠানামার কারণে। এছাড়া পেট ব্যাথা বা অন্যান্য অসস্তির কারণে অনেক নারীই রাতে ঘুমাতে পারেন না এবং প্রায় সারাদিনই এক ধরনের অসস্তি ও অস্থিরতা কাজ করে।
এই অস্থিরতার কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। আবার কারো কারো খুব বেশি রক্তপাত হয় যেটা নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন থাকেন। এই সবকিছুই মানসিক চাপের কারণ হতে পারে। মোটকথা, এই সময়ে প্রায় সকল নারীই পিরিয়ড সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে চিন্তা করেন, তা সাথে শারীরিক অসস্তি তো আছেই। এজন্য তাঁদের মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকেনা।
কী কী উপায়ে স্ট্রেস কমানো যায়?
পিরিয়ডের সময় স্ট্রেস কমানোর বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। আসলে পিরিয়ড হলে স্ট্রেস হবেই, তাই এমন কিছু করতে হবে যা আপনাকে এই স্ট্রেস অনুভব করতে দিবেনা। শারীরিক অসস্তি কম হলেও মানসিক স্থিতিশীলতা আসে। চলুন উপায়গুলো দেখে নেয়া যাকঃ
-
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে
পিরিয়ড চলাকালীন পর্যাপ্ত ঘুম নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং মুড সুইং বা মানসিক অস্থিরতা কমায়। এই সময়ে গভীর ঘুম নিশ্চিত করলে শরীর সতেজ থাকবে এবং ক্লান্তি দূর হবে। তাই পিরিয়ডের সময় ঘুমের মান বজায় রাখতে আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন, যাতে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে।
-
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন
পিরিয়ডের সময় শরীরের বিশেষ পুষ্টি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। যদি এই পুষ্টি যথাযথভাবে না পাওয়া যায়, তবে শরীরে বিভিন্ন ধরনের অভাব দেখা দিতে পারে। এছাড়া, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অভাব শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় এবং মুড সুইং বা মানসিক অস্থিরতা বাড়ায়। তাই পিরিয়ডের সময় সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
-
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
এ সময় বেশি বেশি পানি পান করার কোন বিকল্প নেই। স্বাভাবিক অবস্থায়ই আপনি যদি কম পানি পান করেন তাহলে শরীর খুব ক্লান্ত হয়ে যায় এবং মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। তাহলে পিরিয়ডের সময় যথেষ্ট পানি পান করা না হলে মানসিক চাপ বাড়াই স্বাভাবিক। পিরিয়ডের দিন গুলোতে প্রচুর পানি খান, দেখবেন পানি খেলে শরীরে সস্তি আসছে, একইভাবে মনেও আসবে।
-
চিনি ও অ্যালকোহল পরিহার করুন
পিরিয়ডের সময় অ্যালকোহল গ্রহণ করা উচিত নয়। অ্যালকোহল সরাসরি মস্তিষ্কের রাসায়নিক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে, যার ফলে মেজাজের ওঠানামা বাড়ে এবং নিজেকে শান্ত রাখা কঠিন হয়ে যায়। এর ফলে মানসিক চাপও বৃদ্ধি পায় । এছাড়া, পিরিয়ড চলাকালীন অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবারও এড়ানো উচিত।
-
চিন্তায় পরিবর্তন আনুন
পিরিয়ডের সময় যদি প্রচণ্ড মানসিক চাপ অনুভব করেন, তখন নিজের চিন্তাভাবনার ধরন পরিবর্তন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরের দিনে কোন কাজগুলো করবেন তা একটি ডায়েরিতে লিখে রাখুন। এতে মনের অস্থিরতা কমবে এবং স্ট্রেস হ্রাস পাবে। এছাড়া, এই প্রক্রিয়ায় আপনার পেটে যে ব্যথা বা অস্বস্তি হচ্ছে তা কম মনে পড়বে, ফলে মানসিকভাবে কিছুটা স্বস্তি অনুভব করতে পারবেন।
-
যোগব্যায়াম করুন
পিরিয়ডের সময় হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করুন। এটি শরীরকে রিল্যাক্স করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন নিয়ম করে এটি করুন। তবে ব্যায়াম করতে ভালো না লাগে তাহলে অন্তত কিছু সময় হাঁটুন, এতেও শরীর বেশ লাগবে এবং মানসিকভাবেও সস্তি পাবেন।
-
পছন্দের কাজ করুন
আপনি যা যা করতে ভালোবাসেন সেই কাজগুলো পিরিয়ডের সময় করুন। যদি আপনার টিভি দেখতে ভালো লাগে তাহলে তাই দেখুন। যদি হাতে মেহেদী দিতে ভালো লাগে বা যদি গান শুনতে ভালো লাগে, তাহলে এগুলোই করুন। পছন্দের কাজগুলো করার মাধ্যমে আপনি স্ট্রেস থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকবেন।
FAQs
পিরিয়ড চলাকালীন স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
মাসিক চলাকালীন সময়ে অনেক নারী শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল অনুভব করেন। যদি অতিরিক্ত স্ট্রেস থাকে, তখন শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা প্রাকৃতিক হরমোন ভারসাম্যকে ব্যাহত করে। এর ফলে পিরিয়ডের সময় পেটের ব্যথা, ক্র্যাম্প, মাথাব্যথা, ক্লান্তি এবং অনিদ্রার মতো সমস্যা আরও তীব্রভাবে অনুভূত হয়। অন্যদিকে, স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে থাকলে শরীর হরমোনের ওঠানামা সুষ্ঠুভাবে সামলাতে সক্ষম হয়। ফলে মানসিক চাপ কম থাকে, মন শান্ত থাকে, মনোযোগ বজায় থাকে এবং দিনের কাজকর্মও সহজে সম্পন্ন করা যায়।
গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস পিরিয়ডের সময় মানসিক চাপ কমাতে কতটা কার্যকর?
গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস বা ডিপ ব্রিদিং পিরিয়ডের সময় মানসিক চাপ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। ডিপ ব্রিদিং মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করে, যা মনকে সতেজ রাখে এবং উদ্বেগ বা হতাশার অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে। তাই পিরিয়ডের সময় দিনে কয়েকবার কয়েক মিনিট ধরে এই অনুশীলন করলে পেশি ব্যথা ও মানসিক অস্থিরতাও হ্রাস পায়।
বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে কথা বলা পিরিয়ড চলাকালীন স্ট্রেস কমাতে কতটা উপকারী?
পিরিয়ড চলাকালীন বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে কথা বলা মানসিক চাপ কমাতে খুবই উপকারী। মন খুলে কারো সঙ্গে নিজের অনুভূতি, অস্বস্তি বা সমস্যার কথা শেয়ার করলে মানসিকভাবে হালকা লাগে। এছাড়া গল্প করার সময় কিছুটা হাসাহাসি করার ফলেও স্ট্রেস অনেকটাই দূরে চলে যায়। পাশাপাশি পরিবারের বা বন্ধুদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ বা সহায়তা পেলে পিরিয়ডের সময় শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তি সামলানো সহজ হয়।