পিরিয়ডের সময় শরীরের সঠিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে সঠিক খাবার গ্রহণ করলে শুধু শক্তি বজায় থাকে না, বরং ক্লান্তি কমাতেও সাহায্য করে। কারণ, মাসিকের সময় শরীরে হরমোনের ওঠানামা হয়, যার ফলে অনেক নারী বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তি অনুভব করেন। তাই এই সময়ে খাদ্যাভ্যাসে বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। সঠিক পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ শরীরকে সুস্থ রাখে, শক্তি জোগায় এবং অস্বস্তি অনেকটাই হ্রাস করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, পিরিয়ডের সময় কী কী খাবার খাওয়া উচিত।
আরও পড়ুনঃ পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা কেন হয়?
কী কী খাবেন পিরিয়ডের সময়?
পিরিয়ডের সময় এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো বেশি বেশি খেতে হবে। এই খাবার গুলো পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে আপনাকে সুস্থ্য থাকতে সাহায্য করবে এবং শারীরিক অসস্তি কমাবে। চলুন দেখে নেয়া যাক কী কী খাবার খেতে হবে।
-
সবুজ শাকসবজি
সবুজ শাকসবজি আয়রন ও ভিটামিন বি তে সমৃদ্ধ, পাশাপাশি এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ ও সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। পিরিয়ডের সময় ভালো হজম শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি। তাই প্রতিদিনের প্রতিটি খাবারের তালিকায় অবশ্যই সবুজ শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
-
পানি
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি হলেও, পিরিয়ডের সময় এর প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়ে যায়। কারণ এই সময় রক্তপাতের পাশাপাশি শরীর থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তরল বেরিয়ে যায়, যা শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় ডিহাইড্রেশনজনিত সমস্যা, যেমন মাথাব্যথা ও ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
-
ফল
পিরিয়ডের সময় শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে পানি সমৃদ্ধ ফল যেমন তরমুজ, শশা ও আপেল খাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল এ সময় শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী, কারণ ভিটামিন সি শরীরে আয়রনের শোষণ ও কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। পেয়ারা, আমড়া, আমলকি, লেবু, কমলা ইত্যাদি ভিটামিন সি এর চমৎকার উৎস, যা পিরিয়ডের সময় পুষ্টি ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে।
-
কলা
কলা পিরিয়ডের সময় খাওয়ার জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল যা মাসিকের সময় ক্র্যাম্প বা পেশীর ব্যথা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাই পিরিয়ডের সময় প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কলা অন্তর্ভুক্ত করলে এটি শুধু শক্তি জোগাবে না, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী হবে।
-
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
পিরিয়ডের সময় রক্তপাতের কারণে শরীরে আয়রনের মাত্রা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আয়রনের ঘাটতি হলে শরীরে দুর্বলতা, অবসাদ, মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিম করার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই এই সময় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। আয়রনের ঘাটতি পূরণে মাছ, মুরগির মাংস, ডিম, কলিজা, কচুশাক, পুঁইশাক, ডাটাশাক, খেজুর, পাকা তেঁতুল, আমড়া ইত্যাদি খাবার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
-
আদা চা
এক কাপ গরম আদা চা পিরিয়ডের সময়ের অনেক অস্বস্তি কমাতে কার্যকর হতে পারে। বিশেষ করে বমি বমি ভাব কমাতে আদা দারুণভাবে কাজ করে। তবে এর পরিমাণে সতর্ক থাকা জরুরি। দিনে ৪ গ্রামের বেশি আদা খাওয়া উচিত নয়, কারণ অতিরিক্ত আদা গ্রহণে অম্বল, পেটে অস্বস্তি বা ব্যথা হতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে আদা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
পিরিয়ডের সময় কোন কোন খাবার খাওয়া উচিৎ নয়?

পিরিয়ডের সময় খাদ্য নির্বাচনে সতর্ক থাকা জরুরি, কারণ কিছু খাবার শরীরের অস্বস্তি বাড়াতে পারে এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। বিশেষ করে অতিরিক্ত চিনি-সমৃদ্ধ খাবার যেমন মিষ্টি, কোমল পানীয়, চকলেট বা বেকারি আইটেম দ্রুত ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা এই সময়ে মুড সুইং ও শারীরিক অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। একইভাবে, ভাজা খাবার, ফাস্ট ফুড এবং অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার পিরিয়ডের সময় এড়িয়ে চলা ভালো, কারণ এগুলো শরীরে পানি জমে থাকা, ফুলে যাওয়া এবং অস্বস্তি বাড়াতে পারে।
এছাড়া ক্যাফেইন ও অ্যালকোহলও এই সময়ে শরীরের জন্য অনুকূল নয়। ক্যাফেইন হার্ট রেট বাড়িয়ে দিতে পারে এবং অনিদ্রা সৃষ্টি করতে পারে, যা ব্যথা ও অস্বস্তি তীব্র করে। অন্যদিকে, অ্যালকোহল শরীরের পানির ভারসাম্য নষ্ট করে ডিহাইড্রেশন ঘটায়, ফলে মাসিকের সময়ের ব্যথা আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই পিরিয়ডের সময় এসব খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলা স্বাস্থ্য ও স্বস্তি বজায় রাখতে সহায়ক।
FAQs
পিরিয়ডের সময় কি চকলেট খাওয়া যায়?
হ্যাঁ যায়, তবে সব চকলেট না। ডার্ক চকলেট পিরিয়ডের সময় খাওয়া ভালো কারণ এতে বেশ কিছু উপকারী পুষ্টি উপাদান থাকে যা এ সময়ের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া শরীরে পেশির টান ও ব্যথা কমাতে এবং রক্তশূন্যতা রোধেও সহায়তা করে। অন্যদিকে ফ্যাটি জাতীয় চকলেট গুলো এড়িয়ে চলা উচিৎ।
পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত চিনি বা ফাস্ট ফুড খাওয়া কী ধরনের সমস্যার কারণ হতে পারে?
পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত চিনি বা ফাস্ট ফুড গ্রহণ বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে। এই ধরনের খাবার হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে, যার ফলে পেট ফোলা বা হজম সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া, চিনি ও ফাস্ট ফুডে প্রয়োজনীয় পুষ্টির পরিমাণ কম থাকায় শরীর ক্লান্ত হয়ে যায় এবং শক্তি হ্রাস পায়। তাই পিরিয়ডের সময় স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত এবং অতিরিক্ত চিনি ও ফাস্ট ফুড এড়ানো ভালো।
পিরিয়ডের সময় লেবু খেলে কি হয়?
পিরিয়ডের সময় লেবু খাওয়া বেশ উপকারী হতে পারে। লেবুতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, যা শরীরে আয়রনের শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে এবং শক্তি বজায় রাখে। লেবুর রস শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং হালকা অ্যাসিডিক প্রভাব থাকার কারণে হজমেও সহায়তা করে। তাই পরিমিতভাবে লেবু খেলে মাসিকের সময় শরীর সুস্থ ও সতেজ রাখা যায়।
পিরিয়ডের সময় কি আইসক্রিম খাওয়া যায়?
হ্যাঁ, পিরিয়ডের সময় আইসক্রিম খাওয়া যায়। যখন আপনি ঠান্ডা কোনো খাবার বা পানীয় খান, তখন আপনার শরীর দ্রুত সেটিকে তার স্বাভাবিক তাপমাত্রায় নিয়ে আসে। তাই ঠান্ডা খাবার পেটে প্রবেশ করলে তা সরাসরি জরায়ুকে ঠান্ডা করে না বা তার কার্যকারিতায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। পিরিয়ডের সময় আইসক্রিম খেলে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। যদি আপনার আইসক্রিম খেতে ভালো লাগে এবং এর কারণে কোনো অস্বস্তি না হয়, তাহলে আপনি এটি খেতে পারেন।