গর্ভধারণ একজন নারীর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়, যা নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন এনে দেয়। এই সময়টিতে মায়ের শরীরে একাধিক লক্ষণ ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করে। আপনি কি জানেন প্রেগন্যান্সির প্রথম সপ্তাহে কী হয়? যদিও বেশিরভাগ নারী প্রথমে পিরিয়ড মিস করেই বুঝতে পারেন যে তারা গর্ভবতী, আসলে গর্ভধারণের প্রথম দিকেই শরীরে কিছু স্পষ্ট সংকেত দেখা যায়।
আগেভাগেই এসব উপসর্গ সম্পর্কে জানা থাকলে গর্ভধারণ চিহ্নিত করা আরও সহজ হয়ে ওঠে। আজকের আর্টিকেল এ আমরা আলোচনা করবো প্রেগন্যান্সির প্রথম সপ্তাহে আসলে একজন নারীর শরীরে কী কী হয় বা কোন লক্ষণ দেখা দেয় কিনা। আশা করি লেখাটি আপনারা মন পড়বেন, বিশেষ করে আপনি যদি গর্ভধারণ করতে চান।
আরও পড়ুনঃ গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণ কী? প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কত দিনে বুঝা যায়?
গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহে কী কী হয়?
পিরিয়ড বন্ধ হওয়া গর্ভধারণের একটি সাধারণ লক্ষণ হলেও, শরীরে আরও বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা দিতে পারে যা গর্ভবতী হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। শরীরের এই সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলো গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ধরা যায়। আসুন জেনে নিই, পিরিয়ড বন্ধ ছাড়াও প্রথম সপ্তাহে গর্ভধারণের ইঙ্গিত দিতে পারে এমন কিছু শারীরিক লক্ষণ সম্পর্কে।
-
ডিম্বাণু পরিপক্কতা পায়
মাসিক চক্রের প্রথম সপ্তাহে নারীর শরীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া শুরু হয়, যেটি হলো ডিম্বাণুর পরিপক্বতা। এই সময় জরায়ুর অভ্যন্তরীণ আবরণ হরমোনের প্রভাবে পুরু হতে থাকে, যাতে পরবর্তী সময়ে নিষিক্ত ডিম্বাণু আসলে সেখানে বাসা বাঁধতে পারে। ডিম্বাণু প্রস্তুতির এই ধাপ গর্ভধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পরিপক্ব ও সুস্থ ডিম্বাণুই একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার ভিত্তি তৈরি করে।
-
হরমোনের পরিবর্তন হয়
গর্ভধারণের প্রথম দিকে শরীরে হরমোনজনিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন ঘটে। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন – এই দুটি হরমোন কেবল গর্ভধারণে সহায়তা করে না, বরং পুরো গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের সঠিক বিকাশ ও গর্ভাশয়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
-
মানসিক পরিবর্তন হয়
গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহে মানসিক দিক থেকে বড় কোনো পরিবর্তন সাধারণত দেখা যায় না, কারণ অধিকাংশ নারী তখনও বুঝতে পারেন না যে তারা গর্ভবতী। কেউ কেউ অকারণে চিন্তিত, মনমরা বা বিরক্ত বোধ করতে পারেন। আবার কারও ক্ষেত্রে হালকা মানসিক ক্লান্তি, উদ্বেগ বা অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এ সময় এমন অনুভূতি হওয়া স্বাভাবিক এবং তা ধীরে ধীরে সামঞ্জস্যে চলে আসে।
-
শরীর দুর্বল লাগে
সকালে ঘুম থেকে উঠেই শরীরে অজানা এক দুর্বলতা অনুভব করছেন? সারাদিন যেন এক ধরনের ক্লান্তি সঙ্গী হয়ে থাকে? এটাই হতে পারে গর্ভাবস্থার প্রাথমিক এবং খুবই সাধারণ একটি লক্ষণ। গর্ভধারণের শুরুতেই অনেক নারীর এমন অনুভূতি হয়ে থাকে, বিশেষ করে প্রথম এক মাসে এটি প্রায় নিয়মিতভাবে দেখা দেয়। শরীর তখন নতুন হরমোনের সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করে, যার ফলে এমন অসহ্য ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দেয়।
প্রথম সপ্তাহে কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ দেখা যায় কি?
গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহে সাধারণত স্পষ্ট কোনো লক্ষণ দেখা যায় না, কারণ এই সময়টি মাসিক চক্রের প্রথম দিন থেকে গণনা করা হয় এবং প্রকৃত গর্ভধারণ তখনো শুরু হয় না। এ সময় হরমোনের মাত্রাও এতটা পরিবর্তিত হয়না যা চোখে পড়ার মতো লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।
তবে শরীরে কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তন হতে শুরু করে, যা অনেক সময় মাসিকের আগের লক্ষণের মতোই মনে হতে পারে। এই সব লক্ষণ অনেক সময় মাসিকের আগাম সংকেত হিসেবেই ধরা হয়, তাই গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহে গর্ভধারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া কঠিন।
প্রেগন্যান্সির প্রথম সপ্তাহে শরীরে কী ধরনের পরিবর্তন শুরু হয়?
প্রেগন্যান্সির প্রথম সপ্তাহে শরীর মূলত গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। এই পর্যায়ে বেশিরভাগ নারীর শরীরে কোনো স্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায় না, তবে শরীরের অভ্যন্তরে কিছু অসস্তি হতে পারে। পিরিয়ড মিস হওয়ার আগেই প্রথম সপ্তাহে প্রায় ৮০ শতাংশ নারী বমির সমস্যায় ভুগতে পারেন। এর পাশাপাশি প্রথম সপ্তাহ বা এর পর থেকে স্তনে ব্যথা শুরু হয় এবং স্তন ফুলে যাওয়ার অনুভূতিও অনেকের হয়। এই পরিবর্তনগুলো দেখে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, কারণ এগুলো গর্ভধারণের সাধারণ ও প্রাথমিক লক্ষণ। কখনো কখনো স্তন ভারী ও বেশ চাপ অনুভূত হতে পারে।
গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহেই অনেক নারীর খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায় এবং তারা খেতে ইচ্ছুক হন না। এই খাবারের অনিচ্ছা সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং অনেক সময় তারা এমন কিছু শাকসবজি বা খাবার খেতে শুরু করেন যা আগে তাদের পছন্দ ছিল না। আবার তাদের প্রিয় খাবারও তখন আর আগের মতো মজাদার লাগে না। এছাড়া প্রথম সপ্তাহ থেকেই মাথাব্যথার সমস্যা হতে পারে। এই সময় তীব্র মাথাব্যথা সঙ্গে ক্লান্তিও বোধ হতে পারে।
FAQs
প্রথম সপ্তাহেই কি গর্ভধারণ হয় নাকি এটি প্রস্তুতির সময়?
গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহ আসলে বাস্তব গর্ভধারণের সময় নয়, বরং এটি গর্ভধারণের প্রস্তুতির সময় হিসেবেই ধরা হয়। এই সময়ে আপনি সাধারণত আপনার শেষ মাসিকের রক্তপাত লক্ষ্য করবেন। এ সময় কেবল ডিম্বাণু নিষিক্ত হতে শুরু করে। তাই এটিকে ডাক্তাররাও প্রস্তুতি হিসেবেই বিবেচনা করেন। সাধারণত দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই গর্ভধারন শুরু হয়।
গর্ভধারণের প্রাথমিক প্রস্তুতির সময় কীভাবে নিজের যত্ন নেওয়া উচিত?
গর্ভধারণের প্রাথমিক প্রস্তুতির সময় নিজের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, কারণ এই সময়টাই একটি সুস্থ গর্ভাবস্থার ভিত্তি তৈরি করে। প্রথম সপ্তাহেই যদি আপনি প্রায় নিশ্চিত হয়ে যান যে আপনি মা হতে চলেছেন তাহলে এই সময় থেকেই খাবারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। এছাড়া গর্ভাবস্থার আগে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। পাশাপাশি আপনার সঙ্গী এবং পরিবারের সাথে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করুন। এতে আপনার মানসিক চাপ কমবে। এছাড়া শারীরিক সাবধানতা এই সময় থেকেই অবলম্বন করা উচিৎ।
প্রথম সপ্তাহে কি গর্ভাবস্থার টেস্ট করা যায়?
১ম সপ্তাহে টেস্ট করলে অনেক সময় রিপোর্ট নেগেটিভ আসে, কারণ শরীরে তখনো hCG হরমোনের পরিমাণ পর্যাপ্তভাবে বৃদ্ধি পায় না। তাই এই সময়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট না করাই ভালো কারণ টেস্টের রিপোর্ট আপনাকে কনফিউজড করে দিতে পারে। আপনি গর্ভধারণ করেছেন কিনা তা সন্দেহ হলে নিয়ম মেনে চলুন এবং কিছুদিন অপেক্ষা করুন টেস্ট করার জন্য।
প্রথম সপ্তাহে গর্ভধারণের নিশ্চিত হওয়ার উপায় কী?
প্রথম সপ্তাহে গর্ভধারণ নিশ্চিত করার আসলে কোনো উপায় নেই। আপনি প্রাথমিক লক্ষণ গুলো খেয়াল করুন। যদি পরপর কিছুদিন এগুলোই চলতে থাকে তাহলে ধরে নিতে পারেন যে আপনি গর্ভধারণ করেছেন। তবে নিশ্চিত হবার জন্য অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে।