ইমার্জেন্সি পিল কি নাবালকেরা খেতে পারে? কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়?

ইমারজেন্সি পিল সাধারণত খাওয়া হয় যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ না ঘটে। যাদের গর্ভধারণের শারীরিক সক্ষমতা আছে তাঁরা সবাই ই এটি খেতে পারেন। তবে সাধারণের মনে অনেকসময় এমন একটি প্রশ্নের উদয় হয় যে ইমার্জেন্সি পিল কি নাবালকেরা খেতে পারে? আসলে, নাবালক বলতে ১৮ বছরের নিচে থাকা ছেলেমেয়েদের কে বোঝানো হয়। ছেলেরা তো আর ইমারজেন্সি পিল খায় না, খায় মেয়েরা। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর শরীরে হরমোন যেভাবে কাজ করে, একজন নাবালিকার শরীরে সেভাবে ভারসাম্য রক্ষা করে না। এজন্য একজন নাবালিকা ইমার্জেন্সি পিল খেতে পারবে কিনা বা কিভাবে খাবে সে ব্যাপারে ভালোভাবে জানা দরকার। চলুন আজকে আমরা এই সম্পর্কেই জানি।

আরও পড়ুনঃ ইমার্জেন্সি পিল ছেলেরা কিনতে পারে?

এখানে আপনি পাবেন

নাবালকরা কি ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া ইমার্জেন্সি পিল খেতে পারে?

ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নাবালকদের ইমার্জেন্সি পিল খাওয়া একদমই উচিৎ নয় কারণ আগেই বলেছি যে একজন নাবালকের শরীরের বিকাশ এ সময় ঠিক ভাবে হয় না, যদিও সে গর্ভধারণের উপযোগী হয়। আপনারা হয়তো জানেন যে ইমার্জেন্সি পিলগুলোতে উচ্চ মাত্রার হরমোন থাকে, যা শরীরের হরমোন ভারসাম্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীই অনেকসময় এই হরমোনের সাথে তাল মেলাতে পারেন না, সেখানে একজন নাবালিকা আরও সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। 

আমাদের সমাজে এখনও একজন নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে বিয়ের পরই যদি সন্তান নিতে না চায় তাহলে যৌন সম্পর্কের পর তাঁকে ইমার্জেন্সি পিল খেতে হয়, তবে অবশ্যই তাঁর আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। এছাড়া অনিরাপদ যৌন সম্পর্কেও কেউ কেউ জড়িয়ে যান এবং গর্ভধারণ এড়াতে ইমার্জেন্সি পিল খেয়ে ফেলেন। যদি একান্তই গর্ভধারণ না করতে চান তাহলে লজ্জা না করে অভিজ্ঞ কারো সাথে কথা বলে তারপর খেতে হবে। সবথেকে ভালো হয় চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে। 

ইমার্জেন্সি পিল নাবালকদের শরীরে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে?

emergency pill side effects

যারা প্রাপ্ত বয়স্ক নন তাঁদের শরীরে ইমার্জেন্সি পিল খেলে বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। অনেক সময় এটি এমন হয় যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো কিছুটা প্রকট আকার ধারন করে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে। 

সাধারণভাবে, ইমার্জেন্সি পিল খেলে এমনিতেই বমি ভাব, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা দেয়। কিশোরীদের শরীরের হরমোন গঠন হতে সময় নেয়, তাই পূর্ণ গঠন হওয়ার আগেই যদি ইমার্জেন্সি পিল খাওয়া হয় তাহলে তা কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এমনিতেই কিশোরী বয়সে পিরিয়ড নিয়মিত হয়না অনেকেরই। পিল খেলে পিরিয়ড পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া পেট ব্যাথা, হজমে সমস্যা, তীব্র মাথা ব্যাথা তো হবেই। কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ইমার্জেন্সি পিল শরীরে কোন স্থায়ী সমস্যা তৈরি করে ফেলেছে। এছাড়া মানসিকভাবেও চাও তৈরি হয় নিজের মধ্যেই। 

নাবালকদের ইমার্জেন্সি পিল খাওয়া ছাড়া কি বিকল্প কোন উপায় আছে?

একজন নাবালক কিশোরী যদি সজ্ঞানে শারীরিক সম্পর্ক করতে চান তাহলে আগে থেকেই বিষয়টিতে সচেতন থাকতে হবে উভয়কেই। যতটা সম্ভব মার্জেন্সি পিল খাওয়া এড়াতে হবে। বিকল্প হিসেবে পুরুষ সঙ্গীকে কনডম ব্যবহার করতে হবে। এখানে কারোরই কোন শারীরিক ঝুঁকি থাকবে না। অনেকসময় নাবালকরা নিজের ইচ্ছার বিপরীতেই শারীরিক সম্পর্ক করে বসে বা তাঁদের উপর কেউ জোর করে। এক্ষেত্রে পিল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। 

নাবালক বয়সে ইমার্জেন্সি পিল খেলে ভবিষ্যতে সন্তান ধারণে কোনো সমস্যা হতে পারে কি?

হ্যাঁ, এই সম্ভাবনাকে কোন ভাবেই উড়িয়ে দেয়া যায় না, বিশেষ করে যদি তা বারবার বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নেওয়া হয়। এ সময় এমন উচ্চ হরমোনভিত্তিক ওষুধ শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও প্রজনন ক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এই হরমোন একজন নাবালকের শরীরে স্বাভাবিক হরমোন চক্রকে ব্যাহত করে। দীর্ঘ সময় ধরে এই ভারসাম্যহীনতা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ডিম্বাণু উৎপাদনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে ১/২ বার  ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে সন্তান ধারণের ক্ষমতা একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে এমনটা নয়। তবে কিশোর বয়সে নিয়ম না মেনে, বারবার বা অতিরিক্ত মাত্রায় এই পিল গ্রহণ করা মোটেও উচিৎ নয়।

FAQs

নাবালকদের জন্য ইমার্জেন্সি পিল কি দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে?

হ্যাঁ, নাবালক কিশোরীদের জন্য ইমার্জেন্সি পিল দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি বারবার ব্যবহার করা হয় অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা হয়। কিশোর বয়সে শরীর ও হরমোনের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং ভারসাম্য রক্ষার জন্য সময় প্রয়োজন, আর এই সময় হরমোনভিত্তিক ওষুধ গ্রহণ করলে তা শরীরের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায়  স্বাভাবিকভাবেই বিঘ্ন ঘটাতে পারে।

নাবালকদের জন্য ইমার্জেন্সি পিলের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করা কতটা জরুরি?

নাবালকদের জন্য ইমার্জেন্সি পিল নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা খুবই জরুরি, কারণ এই বয়সে তাঁরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সংবেদনশীল অবস্থার মধ্য দিয়ে যায়। অনেক কিশোরী সোশ্যাল মিডিয়া বা বন্ধু বান্ধবদের থেকে ভুল তথ্য পেয়ে নিজেরাই গোপনে ইমার্জেন্সি পিল গ্রহণ করে। এর ফলে দেখা দেয় নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি। সচেতনতা তৈরি করা গেলে কিশোরীরা বুঝতে শেখে কখন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত এবং কাকে জানানো দরকার।

ইমার্জেন্সি পিল নাবালকদের মানসিক স্বাস্থ্যে কোনো প্রভাব ফেলে কি?

আমাদের মতে এটি নাবালকদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এমনকি তাঁরা ঠিক করছে নাকি ভুল সেটাও অনেকসময় তাঁদের চিন্তায় থাকেনা। যদি অবিবাহিত কোন মেয়ে ইমার্জেন্সি পিল খায়, তাহলে তাঁর মনে হতে পারে যে গর্ভধারণ না করার জন্য এটি বারবার খাওয়া যাবে। এছাড়া যদি তাঁরা এটি গোপনে করে থাকে তাহলে এভাবে ভবিষ্যতে আরও অপরাধ করে তা গপন করতে শিখবে। এছাড়াও, বিষয়টি গোপন রাখতে গিয়ে তারা মানসিক চাপে পড়ে যায় এবং কারো সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে না পারায় একাকীত্ব ও বিষণ্নতায় আক্রান্ত হতে পারে। মোটকথা, সব দিক থেকেই তাঁরা কোন না কোন ভাবে মানসিক চাপ অনুভব করে যেটা এই বয়সে পাওয়া উচিৎ নয়। 

নাবালকদের ইমার্জেন্সি পিল গ্রহণের ক্ষেত্রে নৈতিক সচেতনতা কতটা জরুরী?

একজন নাবালকের পিল গ্রহণের ক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি নৈতিক সচেতনতাও জরুরী। প্রথমত একজন কিশোরী যদি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়ায় সেটা অবশ্যই ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণ অনৈতিক। এরপর সে যখন পিল গ্রহণের মাধ্যমে তাঁর শরীরকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে সেটিও নৈতিকতার অবমাননা কারণ এতে সে ভবিষ্যতে সন্তান ধারণের ক্ষমতা হারাতে পারে। ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে একজন কিশোরী শিখতে পারে কীভাবে আত্মসম্মান বজায় রেখে জীবনযাপন করতে হয় এবং কীভাবে ভুল পথে যাওয়ার আগেই নিজেকে রক্ষা করতে হয়।

Author

  • ডাঃ তানহা একজন নিবেদিতপ্রাণ মেডিসিন ও গাইনী বিশেষজ্ঞ, যিনি বর্তমানে একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। অভ্যন্তরীণ রোগ ও নারীস্বাস্থ্য বিষয়ে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তিনি নারীদের স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সঠিক ও প্রমাণভিত্তিক তথ্য প্রচারে বিশ্বাসী। Emergencypillbd.com-এ তিনি নিয়মিতভাবে প্রেগন্যান্সি, পিরিয়ড, ইমার্জেন্সি পিল এবং নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা শেয়ার করে থাকেন, যা নারীদের সুস্থ জীবনযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

Leave a Comment