পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হওয়ার কারণ কী? পিরিয়ডের সময় কম রক্তপাত হলে কী করব?

পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হওয়ার কারণ কী – এই প্রশ্নটি অনেক নারীর মনে তৈরি হয় যখন মাসিক নির্ধারিত সময়ের আগেই শুরু হয়। এই অবস্থাটি একবার ঘটলে খুব একটা চিন্তার কারণ নাও হতে পারে, কিন্তু বারবার হলে এটি শরীরের কোনো সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হতে পারে দুইভাবে – একটি হচ্ছে যাদের প্রথম পিরিয়ড তাড়াতাড়ি শুরু হয়, আর যাদের নিয়মিত পিরিয়ড ২৮ দিনের আগেই হয়ে যায়। 

পিরিয়ড আগে বা পরে হওয়ার আসলে অনেক কারণ রয়েছে। আজ আমরা সেই কারণ গুলো সম্পর্কে জানবো এবং এর ফলে আসলেই কোন জটিলতা তৈরি হয় কিনা সেটাও ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো। তাই একজন নারী হিসেবে আপনার উচিত এই লেখাটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া।

আরও পড়ুনঃ পিরিয়ড কত বছর বয়সে বন্ধ হয়?

পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হওয়ার কারণ কী?

আগেই বলেছি যে পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হওয়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, অকারণে পিরিয়ড কখনও তাড়াতাড়ি হবেনা। পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হওয়া মানেই যে কোন শারীরিক সমস্যা তা নয়। খুব স্বাভাবিক কিছু কারণ রয়েছে যেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ 

  • হরমোনের ভারসাম্য না থাকা 

স্ট্রেস, ঘুমের অভাব, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস বা অতিরিক্ত ওজন হ্রাস বৃদ্ধির হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। এর ফলে মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্য কমে গিয়ে পিরিয়ড আগেই চলে আসে। কখনো কখনো থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা থেকেও মাসিক চক্র বিঘ্নিত হয়।

  • অত্যধিক মানসিক চাপ 

আধুনিক জীবনে মানসিক চাপ একটি নিত্যসঙ্গী। অতিরিক্ত উদ্বেগ, বিষণ্নতা বা টেনশন শরীরের কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলাফল হিসেবে মাসিক চক্রের স্বাভাবিক সময় কমে যেতে পারে, অর্থাৎ পিরিয়ড নির্ধারিত সময়ের আগেই শুরু হয়। 

  • ওজনের পরিবর্তন

শরীরের ওজন হঠাৎ কমে গেলে বা বেড়ে গেলে হরমোনের উৎপাদনে ভারসাম্য নষ্ট হয়। বিশেষত, যারা অতিরিক্ত ডায়েটিং করেন বা পুষ্টিহীন খাবার খান, তাদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। একইভাবে, ওজন অতিরিক্ত থাকলে শরীরে ইস্ট্রোজেনের অতিরিক্ততা হয়, যা পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হওয়ার কারণ। 

  • অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ব্যায়াম

অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরে স্ট্রেস তৈরি করে। অনেক সময় খেলোয়াড় বা জিমে অতিরিক্ত ট্রেনিং নেওয়া নারীদের মাসিক অনিয়ম দেখা যায়। এর কারণে পিরিয়ড আগেভাগে হতে পারে।

  • শারীরিক অসুস্থতা

শারীরিক অসুস্থতা পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হওয়ার জন্য দায়ী অনেকাংশে। যেমন থাইরয়েড, ডায়াবেটিস বা অন্যান্য হরমোনজনিত অসুখ মাসিককে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে মাসিক আগে আগে ঘটে। 

  • মেনোপজের প্রাককালীন পরিবর্তন

মেনোপজের আগে হরমোনের মাত্রা অনিয়মিতভাবে কমে বা বাড়ে। এর ফলে মাসিক চক্রের ব্যবধান কমে গিয়ে আগেভাগে পিরিয়ড হতে পারে। এটি অনেকের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। 

বয়ঃসন্ধিকালে পিরিয়ড কেন তাড়াতাড়ি শুরু হয়?

আধুনিক জীবনধারা এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে কিশোরী ও কম বয়সী মেয়েদের মধ্যে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বাড়ছে, যা পিরিয়ড দ্রুত শুরু হওয়ার একটি প্রধান কারণ। কিশোরীদের মাসিক তাড়াতাড়ি হওয়া মূলত তাদের প্রজনন তন্ত্রের সাময়িক অপরিপক্বতা এবং হরমোনজনিত সামঞ্জস্যহীনতার ফল, যা সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঠিক হয়ে যায়। 

বর্তমানে ৬ থেকে ৯ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যেও পিরিয়ড শুরু হতে দেখা যাচ্ছে। কোনো মেয়ের ঠিক কত বছর বয়সে প্রথম মাসিক শুরু হবে, তা মূলত হরমোন, শারীরিক গঠন এবং বংশগত কারণ বা জিনের উপর নির্ভর করে। এই কারণে, প্রথম মাসিকের কোনো সুনির্দিষ্ট বয়স নির্ধারণ করা কঠিন। তারপরও, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ মেয়ের প্রথমবার মাসিক শুরু হওয়ার স্বাভাবিক বয়স হলো ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে; পরিসংখ্যান অনুসারে, এই বয়সসীমার মধ্যে প্রতি ১০ জন মেয়ের মধ্যে ৮ জনের মাসিক শুরু হয়ে থাকে। 

পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হলে কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে? 

When to see a doctor

পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হওয়া অনেক সময় সাময়িক হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘটে এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা চিন্তার বিষয় নয়। তবে এটি যদি নিয়মিতভাবে ঘটে বা সাথে অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। জেনে নিন কখন ডাক্তার দেখাবেনঃ 

  • যদি ২০ দিনের আগেই প্রতিবার পিরিয়ড শুরু হয়, তাহলে এটি পলিমেনোরিয়া নামের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে এবং এটি অবহেলা করা যাবে না; 
  • যদি রক্তপাত স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়;
  • যদি পিরিয়ডের সময় বা পরবর্তী সময়ে জ্বর, পেট ব্যথা, দুর্গন্ধযুক্ত বা রঙ পরিবর্তিত স্রাব দেখা যায়;
  • রক্তপাতের ধরন পাল্টানো বা মাঝেমধ্যে স্পটিং হওয়া। 

FAQs

জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি গ্রহণে কি পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হতে পারে?

হ্যাঁ, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি গ্রহণের কারণে পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সাধারণত গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে। তবে, নতুন করে বড়ি খাওয়া শুরু করা, মাঝপথে বন্ধ করা, কিংবা বড়ি খাওয়ার সময় অনিয়ম হলে শরীরের হরমোনের ওঠানামা ঘটে। এই হরমোন পরিবর্তনের ফলেই ডিম্বাণু পরিপক্ব হওয়ার সময় ও জরায়ুর আস্তরণ ঝরে যাওয়ার সময় বদলে যেতে পারে, ফলে মাসিক প্রত্যাশিত সময়ের আগেই শুরু হয়ে যায়।

থাইরয়েড সমস্যার কারণে পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হওয়ার কারণ কী?

থাইরয়েড সমস্যার কারণে পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হওয়া একটি সাধারণ হরমোনজনিত বিষয়। যখন এই গ্রন্থি স্বাভাবিকভাবে কাজ করে না, তখন মাসিক চক্রে অনিয়ম দেখা দিতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে পিরিয়ড তাড়াতাড়ি শুরু হয়। 

পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হওয়া কি সবসময় উদ্বেগের বিষয়?

না, পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হওয়া সবসময় উদ্বেগের বিষয় নয়। তবে এটি কখন এবং কেন ঘটছে তার ওপর এর গুরুত্ব নির্ভর করে। এটি কখন স্বাভাবিক এবং কখন উদ্বেগের কারণ হতে পারে তা অবশ্যই জেনে রাখা প্রয়োজন। ১/২ বার পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হওয়া সাধারণত বড় কোনো সমস্যা নয়। তবে, যদি এটি ধারাবাহিকভাবে ঘটতে থাকে এবং এর সাথে অন্যান্য অস্বস্তিকর লক্ষণ যুক্ত হয় তাহলে তা উদ্বেগের বিষয়। 

পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হওয়ার কি কোন ভালো দিক রয়েছে? 

হ্যাঁ আছে। যদি মাসিক সাধারণ সময়ের থেকে কয়েক দিন আগে আসে, তাহলে তা অনেক সময় বোঝায় যে শরীরের হরমোন চক্র ঠিকভাবে কাজ করছে। এছাড়া অনেক সময় শরীরের ভেতরে স্ট্রেস, খাদ্যাভ্যাস বা ওজন পরিবর্তন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। পিরিয়ড কিছুটা এগিয়ে আসা অনেক সময় এই ভারসাম্য পুনরুদ্ধার হয়ে এমনটাই বোঝায়।

Author

  • ডাঃ তানহা একজন নিবেদিতপ্রাণ মেডিসিন ও গাইনী বিশেষজ্ঞ, যিনি বর্তমানে একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। অভ্যন্তরীণ রোগ ও নারীস্বাস্থ্য বিষয়ে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তিনি নারীদের স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সঠিক ও প্রমাণভিত্তিক তথ্য প্রচারে বিশ্বাসী। Emergencypillbd.com-এ তিনি নিয়মিতভাবে প্রেগন্যান্সি, পিরিয়ড, ইমার্জেন্সি পিল এবং নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা শেয়ার করে থাকেন, যা নারীদের সুস্থ জীবনযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

Leave a Comment