মহিলাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো প্রজনন ক্ষমতা। গর্ভধারণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও অনেকেই জানেন না ঠিক কখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। অনেক দম্পতি সন্তান নিতে চান নির্দিষ্ট সময়ে, আবার কেউ কেউ গর্ভধারণ এড়াতে সচেতনভাবে পরিকল্পনা করেন। তাই পিরিয়ডের পর কোন সময়ে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকে এই বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। আজকের লেখার মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে এগুলোই জানানোর চেষ্টা করবো।
আরও পড়ুনঃ পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হওয়ার কারণ কী?
পিরিয়ডের কতদিন পর একজন নারী মিলন করলে গর্ভবতী হবেন
গর্ভধারণের সময় মূলত একজন নারীর মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়। সাধারণত যেসব নারীর মাসিক চক্র ২৮ দিনে সম্পূর্ণ হয়, তাদের ক্ষেত্রে মাসিকের প্রথম দিন থেকে গণনা করলে ১৪তম দিনে ডিম্বস্ফোটন ঘটে। এই সময়টিই গর্ভধারণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী বলে ধরা হয়, কারণ এই সময় ডিম্বাণু পরিপক্ব হয়ে শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে।
পিরিয়ডের প্রথম দিন থেকে ১১ থেকে ১৪তম দিন পর্যন্ত সময়কে গর্ভধারণের আদর্শ সময় হিসেবে গণ্য করা হয়। এই সময় যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। একজন নারী নিজের ফার্টাইল উইন্ডো বা গর্ভধারণের সম্ভাবনাময় সময় চিহ্নিত করতে বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করতে পারেন। একাধিক পদ্ধতি একসাথে অনুসরণ করলে গর্ভধারণের সঠিক সময় আরও নির্ভুলভাবে জানা সম্ভব হয়।
এই সময়ের মধ্যে যদি ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন ঘটে, তাহলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়। মনে রাখতে হবে, ডিম্বস্ফোটনের পরে গর্ভধারণের সম্ভাবনা দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে, তাই সময়ের আগেই প্রস্তুতি নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। সঠিক সময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে দ্রুত গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
কোন কোন লক্ষণ দেখে বোঝা যায় যে ডিম্বস্ফোটন হচ্ছে?
ডিম্বস্ফোটন বা ডিম্বাণু নিঃসরণের সময় শরীরে কিছু বিশেষ পরিবর্তন ঘটে, যেগুলোর মাধ্যমে সহজেই বোঝা যায় যে একজন নারী ডিম্বস্ফোটনের সময়ের মধ্যে রয়েছেন। নিচে সেই লক্ষণগুলো দেওয়া হলোঃ
সাদা ও পিচ্ছিল স্রাব বৃদ্ধি পাওয়া: ডিম্বস্ফোটনের সময় যোনি থেকে নির্গত স্রাব স্বচ্ছ, টানটান ও ডিমের সাদা অংশের মতো হয়ে যায়।
শরীরের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পাওয়া: ডিম্বস্ফোটনের পর বডি টেম্পারেচার প্রায় ০.৫ থেকে ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত বেড়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে তাপমাত্রা মাপলে তা বোঝা যায়।
পেটের নিচে হালকা ব্যথা অনুভব: অনেক নারীর ক্ষেত্রে ডিম্বাশয় থেকে ডিম নিঃসরণের সময় পেটের নিচের দিকে হালকা ব্যথা বা চাপ অনুভূত হয়।
যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পাওয়া: ডিম্বস্ফোটনের সময় শরীরে হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যার ফলে যৌন ইচ্ছা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি হয়।
স্তনে হালকা ব্যথা: হরমোনের প্রভাবে অনেক নারীর স্তনে হালকা ব্যথা বা ভারী অনুভূতি হতে পারে।
যোনির ভেতর অস্বস্তি অনুভব: ডিম্বস্ফোটনের সময় রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ায় যোনিপথ কিছুটা ফুলে যেতে পারে এবং অস্বস্তি অনুভূত হয়।
মুড সুইং: হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে অনেক নারী এসময়ে মেজাজে হঠাৎ পরিবর্তন অনুভব করেন।
ওভুলেশন কিট ব্যবহার করে কীভাবে গর্ভধারণের সময় নির্ধারণ করা যায়?

ওভুলেশন কিট ব্যবহার করে গর্ভধারণের সময় নির্ধারণ করা খুবই সহজ। এই কিট মূলত শরীরে লিউটিনাইজিং হরমোন এর মাত্রা পরীক্ষা করে, যা ডিম্বস্ফোটনের আগে দ্রুত বৃদ্ধি পায়ঃ
- কিটে সাধারণত স্ট্রিপ বা ডিপ-স্টিক থাকে। ব্যবহার করার আগে নির্দেশিকা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
- আপনার মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী উপযুক্ত দিন থেকে পরীক্ষা শুরু করুন।
- কিটে নির্দেশিত মতো প্রস্রাবের একটি নমুনা নিন বা সরাসরি স্ট্রিপ প্রস্রাবে ডুবান।
- যদি টেস্ট লাইনের রঙ কন্ট্রোল লাইনের সমান বা শক্ত হয়, তাহলে বোঝা যায় LH surge হয়েছে। এটি নির্দেশ করে যে ডিম্বস্ফোটনের সময় এসেছে।
- পরবর্তী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ডিম্বস্ফোটন ঘটে। এই সময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।
- কিট ব্যবহার করে কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ করলে ডিম্বস্ফোটনের নিখুঁত সময় জানা যায় এবং গর্ভধারণের পরিকল্পনা আরও নির্ভুল হয়।
FAQs
পিরিয়ডের পরে গর্ভধারণের আদর্শ সময় কোন দিনগুলোতে পড়ে?
তবে সব নারীর মাসিক চক্র একই রকম নয় কারও ২৬ দিনের, আবার কারও ৩০ দিন বা তারও বেশি হতে পারে। ফলে ডিম্বস্ফোটনের সময়ও কিছুটা আগে পরে হতে পারে। এছাড়া ওভুলেশন টেস্ট কিট ব্যবহার করেও ডিম্বস্ফোটনের সঠিক সময় নির্ধারণ করা যায়। এই সময়ে শরীরে ডিম্বাণু পরিপক্ব অবস্থায় থাকে এবং শুক্রাণুর সঙ্গে মিলনের জন্য উপযুক্ত হয়। তাই এই সময়কে গর্ভধারণের জন্য সবচেয়ে কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে ধরা হয়।
পিরিয়ডের ঠিক পরে সহবাস করলে কি গর্ভধারণ সম্ভব?
হ্যাঁ, পিরিয়ডের ঠিক পরেও গর্ভধারণ সম্ভব, তবে এর সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। গর্ভধারণের সম্ভাবনা নির্ভর করে একজন নারীর মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্য, ডিম্বস্ফোটনের সময় এবং শুক্রাণুর টিকে থাকার ক্ষমতার ওপর। যদি পিরিয়ড শেষ হওয়ার পরপরই সহবাস করা হয় এবং ডিম্বস্ফোটন তাড়াতাড়ি ঘটে, তাহলে শুক্রাণু ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হতে পারে।
ফার্টাইল উইন্ডো (Fertile Window) বলতে কী বোঝায়?
ফার্টাইল উইন্ডো (Fertile Window) বলতে একজন নারীর মাসিক চক্রের এমন একটি নির্দিষ্ট সময়কে বোঝায়, যখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। এই সময়টিতে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসৃত হয় এবং সেটি শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকে। সাধারণভাবে বলা যায়, ডিম্বস্ফোটনের দিনসহ তার আগের পাঁচ দিন এবং পরের এক দিন – মোট ৬ দিনের সময়কালকেই ফার্টাইল উইন্ডো বলা হয়।
ডিম্বস্ফোটনের পরে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কেন কমে যায়?
ডিম্বস্ফোটনের পরে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো ডিম্বাণুর কার্যকারিতা সীমিত সময়ের জন্য স্থায়ী থাকে। ডিম্বস্ফোটনের সময় ডিম্বাশয় থেকে একটি পরিপক্ব ডিম্বাণু বের হয়, যা সাধারণত ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত নিষিক্ত থাকে। এই সময়ের মধ্যে যদি শুক্রাণুর সঙ্গে মিলন না ঘটে, ডিম্বাণু মারা যায় এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনা হারিয়ে যায়।
গর্ভধারণের সম্ভাবনাময় সময় নির্ধারণে ওভুলেশন কিটের ব্যবহার কতটা নির্ভুল?
ওভুলেশন কিট ব্যবহার করে গর্ভধারণের সম্ভাবনাময় সময় নির্ধারণ সাধারণত দূরজনিতভাবে নির্ভুল। এটি মূলত শরীরে লিউটিনাইজিং হরমোন এর হঠাৎ বৃদ্ধি শনাক্ত করে। তাই LH surge শনাক্ত করতে পারলে ফার্টাইল উইন্ডোর প্রায় সঠিক সময় জানা যায়।